দার্জিলিং  জিটিএ পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা৷

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর পাহাড়ে সুভাষ ঘিসিং এর উদয়৷ তাকে শান্ত করতে তৈরী হয় গোর্খা হিল কাউন্সিল৷ কয়েক বছর চলার পর নূতন করে উদয় হলো বিমলগুরুং৷ তাকে ঠাণ্ডা করতে জিটিএ অতপরঃ! গোর্র্খদের আন্দোলন দেশদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন৷ ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের  অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ দার্জিলিং৷ আর গোর্র্খরা বিদেশী--- নেপালের লোক৷ রুজি রোজগারের ধান্দায় দার্জিলিং এসেছে৷ এতো বিদেশীদের আগ্রাসী আন্দোলন যা কোন মতেই সহ্য করা যায় না ৷ ওরা নেপালের লোক৷ নেপালে গিয়ে গোর্খাল্যান্ড করুক৷

q  গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার পক্ষে হুমকি স্বরূপ৷ প্রবাদ বলে--- ‘খাল কেটে কুমীর আনা’৷ মিরজাফরেরা  বণিক ইংরেজকে ডেকে  এনেছিল৷ ধূর্ত ‘‘বণিকের মানদন্ড দেখা দিল রাজদন্ড রূপে’’৷  পশ্চিমবঙ্গের নয়া মিরজাফর কমিউনিষ্ট কংগ্রেস, বিজেপি এঁরা বিদেশী নেপালী যারা কাজের খোঁজে ভারতে আসে স্থানীয়দের তাড়িয়ে তাদের দার্জিলিং এর শাসক বানাতে চায়, ভারতের অংশ বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে চায়৷ গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন ভারতের নিরাপত্তা ও অখন্ডতার পক্ষে বিপজ্জনক৷ এ আন্দোলন ভারতের সংবিধান বিরোধী৷

q  নেপালীদের একটা গোপন অভিসন্ধি আছে৷ তারা নেপাল, ভূটান,সিকিম, দার্জিলিং , ডুয়ার্স, তরাই নিয়ে বৃহত্তর নেপাল গঠন করতে চায়৷ গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন সেই ষড়যন্ত্রের অংশমাত্র৷ পিছনে উত্তরপূর্র্বঞ্চলের জঙ্গীগোষ্ঠী ও সাম্রাজ্যবাদী চীনের মদত৷

q  নেপালী বলতে কোনও একটা জাতি নয় ৷ গোর্র্খ, নেওয়ারী , শেরপা, কিরাত, লিমপো, থারু ইত্যাদি  প্রায় এক ডজনের  ওপর জনজাতি  নিয়ে নেপালী জনগোষ্ঠী৷ গোর্র্খরা  তার একটা ক্ষুদ্র ভগ্ণাংশমাত্র৷ দার্জিলিং- -য়ে সব জাতেরই নেপালীরা এসেছে৷ গোর্র্খরা তার মাত্র ১২ শতাংশ মাত্র৷ এছাড়া আছে স্থানীয় বাঙালী জনজাতি লেপচা-ভুটিয়ারা ও অন্যান্য বাঙালীরা৷  এখানে চলছে  বৃহদংশের ওপর ক্ষুদ্রাংশের  আগ্রাসন, ক্ষুদ্রাংশের আধিপত্য৷ এখানে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন ওঠে কী করে? বাঙালী বিদ্বেষী, দেশী বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দালাল রাজনৈতিক দলগুলোর বাঙলা ভাগের  এ এক জঘন্য চক্রান্ত৷

q  স্বাধীন সার্বভৌম নেপাল ভারতের প্রতিবেশী মিত্র রাষ্ট্র৷ ১৯৫০ সালে নেপালের সঙ্গে ভারতের শান্তি-মৈত্রী চুক্তি হয়৷ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নেপালীরা ভারতে অবাধে আসতে পারবে রুজি-রোজগার করতে পারবে, বসবাস করতে পারবে কিন্তু নাগরিকত্ব পাবে না৷ তাহলে যাদের নাগরিকত্বই নেই তাদের জন্য গোর্খাল্যান্ড, টেরিটোরিয়াল এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন হয় কীভাবে? ভোটাধিকারই বা হয় কি করে?  নেপালীরা ভারতের নাগরিকই নয়৷ তাদের নিয়ে নির্র্বচন, এমপি এম এল এ,একেমন হাঁসজারু? এখনইগোর্র্খ মোর্র্চকে নিষিদ্ধ করা দরকার৷ রেশনকার্ড ,ভোটার কার্ড,প্যান কার্ড, আধার কার্ড টি, বা যে সমস্ত নাগরিকত্ব বিষয়ক নথিপত্র,প্রমাণপত্র দেয়া হয়েছে তা অবিলম্বে বাতিল করা দরকার৷ গোর্খাল্যান্ড তো দূরের কথা৷

q  দার্জিলিংয়ে নেপালীদের ভূমিকাটা  কেমন?--- না,যার খাবে পরবে- তারই বুকের ওপর বসে দাড়ি উপড়ারে! নির্লজ্জ বেইমানী৷ বাঙালীর  আতিথেয়তা,উদারতার সুযোগ নিয়ে বাঙলাকেই  টুকরো করতে তৎপর৷

q  গোর্র্খদের জাতিসত্তার  আবেগ একটা বিরাট ধাপ্পা৷ দার্জিলিং পাহাড়ের আন্দোলন মানুষকে ধাপ্পা দেওয়ার আন্দোলন৷ মুষ্টিমেয় কিছু গোর্র্খর আখের গোছাবার আন্দোলন৷ ঘিসিং-গুরুংদের রাজকীয় চাল চলন, আর্থিক অবস্থার পরিবর্ত্তন,পার্বত্য উন্নয়নের অর্থের  পুকুরচুরি--- সেটাই  প্রমাণ করে৷ সবচেয়ে বড় কথা হল পাহাড়ের আন্দোলনের ে পছনে কোনও বৃহৎ আদর্শ নেই৷ পাহাড়বাসীদের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র-রাজ্য বহু শতকোটি টাকা সুভাষ ঘিসিং-বিমলগুরুংদের দিয়েছে৷ সাধারণ পাহাড়বাসীদের কাছে তার ছিটে ফোঁটাও পৌঁছায়নি৷ আবার এই বঞ্চনাকে মূলধন করেই স্বতন্ত্র রাজ্য--- গোর্র্খল্যান্ডের দাবীতে আন্দোলন করেছে৷

q  অনুপ্রবেশ লাগাম ছাড়া৷তাই দার্জিলিং পাহাড় অঞ্চল এ নেপালীরা সংখ্যাধিক্য৷ কিন্তু অঞ্চলটির আয়তন একটা রাজ্য হওয়ার উপযুক্ত নয়৷ স্বয়ম্ভর অর্থনৈতিক বুনিয়াদ ছাড়া কেউই টিকে থাকতে পারে না৷ পাহাড়ের অর্থনীতি খুবই দুর্বল তাছাড়া সমতলের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল৷ পাহাড়ের অর্থনীতির মূল উৎস পর্যটন শিল্প৷ কেন্দ্র রাজ্য যদি বাঙালীর জাতি সত্তার অধিকারকে অস্বীকার করে, বাঙলা ভাগ করে গোর্খাল্যান্ড বানায়,তাহলে একদিন না একদিন বাঙালী  জাগবেই৷ ভয়ঙ্কর অবরোধ হবেই হবে৷  বিদেশী নেপালীদের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে৷ হাজার বছরের  ৩৫ কোটি ঐতিহ্যমন্ডিত জনগোষ্ঠী বাঙালীর চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের ইতিহাস যদি  কেন্দ্র  বা বাংলার বাঙালীঘাতী  রাজনৈতিক দলগুলো ভুলে যায় তবে  তার চরমমূল্য দিতেই হবে৷

সুভাষ ঘিসিং এরপর বিমল গুরুং---গোর্খা হিল কাউন্সিলের পর টেরিটোরিয়াল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এরপর৷ এবার শেষ হওয়া উচিত৷ নতুবা বাঙালীকেও নূতন করে ভাবতে হবে৷