দেশ বাঁচাতে -পৃথিবী বাঁচাতে বাঁচাও মানবতা নাশ দানবতা

লেখক
প্রভাত খাঁ

আমাদের মতো ইংরেজ আমলে যাঁদের জন্ম তাঁদের মনে এক দারুণ দুঃখ ও বেদনার কারণ ঘটে চলেছে দীর্ঘ ৭৩            বছরের স্বাধীন ভারতে, দেশ ভাগের পর! আমরা তখন কিশোর, প্রাথমিক সুকলের গণ্ডী পেরিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছি৷ ভারতে স্বাধীন দেশের তেরাঙ্গা পতাকা  হাতে নিয়ে খালি পায়ে কাঁচা রাস্তায় ‘‘স্বাধীন ভারত কী জয়’’ ‘‘বন্দেমাতরম্‌’’ বলতে বলতে মনের আনন্দ প্রকাশ করেছি৷ সে এক আনন্দ উদ্দীপনা মনে মনে ভোগ করেছি৷ তার সাথে সাথে হিন্দু মুসসমান দাঙ্গায় অনাথ অসহায় উদ্বাস্তুদের  আগমণ দেখে মনে হত এ কেমন স্বাধীনতা? এতো হিংসা এতো বিদ্বেষ সাম্প্রদায়িকতার? কিন্তু সবই সহ্য করে যেতে হয়েছে৷ তখন প্রতিবাদ করতে পারিনি অল্প বয়সের কারণে? পরে বুঝেছিলাম এ স্বাধীনতাটি এক ভাঁওতা, কারণ দেশভাগ হয়েছে --- স্বার্থন্বেষী সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ সরকারের কূটচালে আর সেইচালে কিছু স্বার্থান্বেষী উচুঁ মহলের ব্যষ্টিরা সারা জীবনের মতো দেশমাতাকেই খণ্ডিত ও রক্তাক্ত করে ভোগ  দখলে মত্ত হয়েছে দলীয় রাজনীতির নামে৷ সেদিনের সেই উঁচু মহলের নেতারা ভুলেই  গেস্‌লেন আন্দোলনটি ছিল ভারতবর্ষের পূর্ণস্বাধীনতার লক্ষ্যে৷ সেদিনের সার্থক দেশনেতা নেতাজীকে তাঁরাই বাধ্য করেন দেশ ত্যাগ করতে ইংরেজের চক্রান্তেই ও  তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা চরিত্র হনন কুৎসা রটনা করেন৷ আজও সেই মহান নেতার অন্তর্ধ্যান রহস্যকে ধামা চাপা দিয়ে রেখেছেন দেশের কেন্দ্রীয় সরকার! এই তো এদেশের গণতন্ত্রের মিথ্যাচারিতা! জনগণ আজও দাবী তুলছেন সত্য উদঘাটনের, কিন্তু কাকস্য পরিবেদনায়!

যে কটি সরকার কেন্দ্রে এসেছেন সবকটি  স্বার্থান্বেষী ও ধনীর দালাল আর কোটি কোটি হতভাগ্য জনসাধারণের মহান ভারতের প্রদত্ত সাংবিধানিক অধিকারকে অস্বীকার করে ধনীদের স্বার্থসিদ্ধিতেই সদাব্যস্ত,

পা পা করে আমরা ৭৩ বছরে এসে পৌঁচেছি৷ কিন্তু দেখাছিকী? বড়ো বড়ো জাতীয় কটি রাজনৈতিক  দল সেই ধনী রাজনৈতিক  ব্যবসাদারদের  ধান্দা বাজির জন্য নানা নামে  টুকরো টুকরো হয়ে  আঞ্চলিক দলে পরিণত  হয়েছে৷ আর সেই জাতীয় দলগুলির অনুগামীরাই সেটা  করেছেন নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দেশের হতদরিদ্র জনগণের  কল্যাণে তো নয়ই৷ গণতন্ত্রের নামে আজ দেশ চরম দুর্নীতিতে শেষ হয়ে  যেতে বসেছে৷ রাজনৈতিক স্বৈরাচারিতায় সারাদেশ আজ রক্তশূন্য রিক্ত ও শোষিত! জওহরলালের পরই অতি অল্প সময়ের মধ্যে কংগ্রেসে ভাঙ্গন ধরায় ইন্দিরা গান্ধী  নব কংগ্রেস তৈরী করেন৷ সেই কংগ্রেস ইন্দিরার আমলে  লোকসভাকে  না জানিয়ে  বিরোধী দলনেতাদের  অন্ধকার রেখে  সম্ভবত রাশিয়ার প্ররোচতনায় দেশে অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থা জারী করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রায়  দু’বছর কারাগারে আটক করে রাখেন৷ গণতন্ত্রেরই মৃত্যু ঘন্টা বাজিয়ে যান৷ তারপর থেকেই এদেশে নামকেওয়াস্তে  গণতন্ত্রটাই হয়ে যায় একেবারে নড়বড়ে৷ কংগ্রেস বেশী বছর  শাসনের নামে শোষণ করে৷  আজ মনে বর্তমানের কংগ্রেস যেন ধোয়া তুলসী পাতা৷ তাই কিছু কংগ্রেসী নেতা শাসনে ফিরে আসতে মরিয়া৷ এই দল দেশকে বিরোধী শূন্য করতে মরিয়া হয়ে ওঠে৷ কিন্তু দেশের জনগণ সেটা বুঝে বিরোধীদের সুযোগ দেন দেশ শাসনে৷ এই দেশে অনেক মহান বিরোধী দেশ নেতাকে  আমরা দেখেছি৷ যাঁদের বক্তব্য অত্যন্ত  বাস্তববাদী ছিল৷ যেমন বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ  মুখোপাধ্যায়ের  সুযোগ্য পুত্র  ভারত কেশরী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যাঁর কঠোর পরিশ্রমের ফলেই ‘চিকেন নেক’ এর মতো অতি ক্ষুদ্র সেই বৃহত্তম বাংলার একটু অংশকে বাঁচিয়ে ছিলেন বঙ্গ হিসাবে৷ তাঁকেই অকালে চলে যেতে হয়৷ যদি বলি নোংরা  রাজনৈতিক চক্রান্তে সেটা কিন্তু  ফেলে দেবার নয়৷ অদ্যাবধি কশ্মীরে ৩৭০ ধারা যাঁরা তুলে নিয়ে গর্ব বোধ করেন  আজকের বিজেপি সরকার  কিন্তু তদন্ত করেননি যা ডঃ শ্যামাপ্রসাদের মতো জওহরলালকে  আবেদন করেন তদন্তের৷ এটাই হলো এদেশে  মিথ্যা গণতান্ত্রিক নামে নোংরা দলবাজি৷ এই কেন্দ্রে  উপবিষ্ট বিজেপি তো  ডঃ শ্যামাপ্রসাদকে শ্রদ্ধা করে থাকেন! কশ্মীরের বিতাড়িত হতভাগ্য পণ্ডিতদেরও পুর্নবাসন দেওয়ার বন্দোবস্ত হয়নি! আজকের বিজেপি কাদের সরকার? এটাই কোটি কোটি হতভাগ্য জনগণেরই জিজ্ঞাসা৷ প্রশ্ণ উঠেছে রেল, বন্দর,  টেলিকম, খনিজ সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ, পেট্রোলিয়াম, কৃষি,প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ব্যবসা, ব্যাঙ্ক সবই পুঁজিপতি বন্ধুদের হাতে তুলে দেওয়াটা আর শ্রমিক স্বার্থকে নিশ্চিতের পথে ঠেলে দেওয়াটা কি গণতন্ত্রের বন্ধু সরকারের মহৎ (?) কাজ!তা হলে সরকার কাদের? এ কেমন ধরণের দেশসেবার কাজ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের! কিছুটা আশা ছিল জনগণের মানুষ দরদি মাননীয় অটল বিহারী বাজপেয়ীর শাসনে৷ কিন্তু এখন যা হচ্ছে সেটা মানা কি যায়! মানুষের সরকার বলে যাঁরা মিথ্যাচারিতা করছেন তাঁদের চিন্তা করার সময়  কি আসে নি?

শুধু সুদ কমিয়ে ট্যাক্স বসিয়ে শাসন সেটা তো এক ভয়ংকর  স্বৈরাচারি শাসকেরই মানায়! তাই আজ দেশে সৎ মানুষের বড় অভাব৷ তাই সৎনীতিবাদী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে সমগ্র দেশের কল্যাণে৷ আর প্রত্যেক নাগরিককে বাঁচাতে হবে মানবিকতা আর দমন করতে হবে দানবতা৷ আজ দেশে সেবকদের অতি প্রয়োজন দেশকে রক্ষায়  ও দেশের সেবায়৷ মহান দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসুন৷ দলবাজি নয়, সাম্প্রদায়িকতা নয়, জাতপাতের ভেদাভেদ নয়, প্রত্যেক মানুষকে  সেই ঈশ্বরের সন্তান হিসাবে স্বীকার কন্ের তাঁদের সেবা দেবার পবিত্র  দায়িত্ব নিয়ে চলার শপথ নেবার সময় হয়েছে সেই মহান মুনি ঋষিদের দেশে৷ সারা পৃথিবী তাকিয়ে আছে  সেই অতীতের  ভারতবর্ষের  দিকেই৷ তাই  সবাই কে নিয়ে বাঁচ আর সবাইকে বাঁচার সুযোগ দাও,শোষণহীন মানব সমাজ গড়ার শপথ নাও সকলে৷ রাজ্যগুলির শাসনেও দেখা যাচ্ছে যেন স্বৈরাচারিতার লক্ষণ৷ মনে রাখতে হবে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ দায়বদ্ধ নির্বাচকদের কাছে, কিন্তু অন্ধভাবে সেটা ভুলে দলবাজিটা গণতন্ত্র কি মানায়৷ মনে রাখা উচিত গণতন্ত্র  কখনো বিরোধী শূন্য হয় না৷ তাতে গণতন্ত্রটাই ধবংস হয়ে যায়৷ বিরোধিতা করাটা অন্যায় নয়৷ তাতে  শাসকদের অনেক ত্রুটি ধরা পড়ে, সেটা সার্বিক কল্যাণে ভালোই হয়৷ একদলীয় শাসন কখনো গণতন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না, সেটা হয় জঘন্য স্বৈরাচারী শাসন৷ দেখা যায় আজকের দলীয় শাসকগণ সমাজগুলিকে নানা জাতপাতের ভেদাভেদকে উষ্কে দিয়ে বিরোধ বাধিয়ে, দল ভাঙ্গাভাঙ্গি করে গদী বাঁচতেই ব্যস্ত তাতে গণতন্ত্রেরই সর্বনাশ হয়৷ সামাজিক আর্থিক দিক থেকে দেশ, এগুতে পারে না৷  তাই দেশবাসী সাবধান হন যাতে সবাই বাঁচতে পারে৷