সারাদেশ জুড়ে তীব্র জলসংকট দেখা দিয়েছে৷ ভারতের ‘নীতি আয়োগ’-এর রিপোর্ট বলছে, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ সহ ২১ টি শহরের ভূগর্ভস্থ জল আগামী বছরই প্রায় শেষ হতে চলেছে৷
নীতি আয়োগের রিপোর্ট, প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে পানীয় জলের অভাবে৷ আর আগামী ২০৩০ সালে ভারতেব প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ তীব্র পানীয় জলের সংকটের সম্মুখীন হবে৷
সারা দেশের ভূগর্ভস্থ জলস্তর দ্রুত নেমে যাচ্ছে৷ তার প্রধান কারণ, বিবেকহীন ভাবে মানুষ গাছপালা কেটে চলেছে,চোরা কারবারীরা গোপনে বনাঞ্চল ধবংস করছে৷ তথাকথিত উন্নয়নের নামেও মানুষ, এমনকি সরকারও বেহিসেবী ভাবে বৃক্ষ ধবংসে মেতে উঠেছে৷ অরণ্য সৃষ্টির জন্যে যেভাবে শ্লোগান দেওয়া হচ্ছে, কার্যতঃ তার কিছু হচ্ছে না৷ বর্ষাকালে আনুষ্ঠানিকভাবে বহু গাছ লাগালেও ওই গাছগুলিকে বাঁচানোর জন্যে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না৷ তাই, বছরের পর বছর বনাঞ্চল তৈরীর জন্যে বা রাস্তার ধারে গাছ লাগানোর জন্যে একই জায়গায় বার বার বিপুল অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে৷ গাছ বাঁচানোর দিকে দৃষ্টি নেই৷ তাই সবই ভস্মে ঘি ঢালা হচ্ছে৷
প্রকৃতপক্ষে গাছের প্রতি মানুষের ভালবাসা জাগেনি৷ পর্যাপ্ত সমাজ সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি৷ মানুষের লোভ ও স্বার্থপরতা মানুষকে অন্ধ করে তুলেছে, মানুষ নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারছে৷ তার ওপর কথায় কথায় মানুষ ভূগর্ভস্থ জল তুলে নিচ্ছে৷ বহুতল বাড়ি হচ্ছে, নূতন নূতন উপনগরী হচ্ছে, আর নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ জল টেনে তোলা হচ্ছে৷ সারা বছরের বৃষ্টিপাতকে ধরে রাখার চেষ্টা না করে--- ভূগর্ভস্থ সঞ্চিত জলকে স্যালোর সাহায্য তুলে ব্যাপকভাবে কৃষিকাজ করার ফলে মাটির নীচের জল শুকোতে শুকোতে তলানিতে ঠেকেছে৷ মহান্ দার্শনিক প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সবকার (শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী) বহু আগেই ভূগর্ভস্থ জলকে অবিবেকীর উত্তোলন করার বিরুদ্ধে সাবধান করে’ দিয়েছিলেন৷ ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপন ও বণাঞ্চল সর্জন না করলে যে ভয়াবহ জলসংকটের সম্মুখীন হতে হবে --- তা তিনি অনেক আগেই ঘোষণা করেছিলেন৷ কিন্তু সেদিন তার কথায় কেউ কর্ণপাত করেনি৷ অন্ধ বাস্তবে সংকট যখন দোরগোড়ায় এখন মানুষ কুল-কিনারা পাচ্ছে না৷
এখন হতাশ হয়ে গেলে চলবে না৷ সরকারকেও সচেতন হতে হবে ও এই আসন্ন চরম জলসংকটের সমাধানে সবাইকে উঠে পড়ে লেগে যেতে হবে৷
তিনি যা যা বলেছেন, সংক্ষেপে তা হ’ল--- (১) বর্র্ষর জলকে ধরে রাখার জন্যে পুকুর, বিল, বাঁধ, সাগর, নদী, ছোট ও বড় জলাধারের--- যেগুলি জলসঞ্চয়ের জন্যে ব্যবহৃত হচ্ছে---এগুলির গভীরতা বাড়াতে হবে৷ দ্বিতীয়তঃ নোতুন নোতুন পুকুর, বাঁধ, জলাধার তৈরী করতে হবে৷ প্রাউট - প্রবক্তা বলেছেন, পুকুর, বিল, বাঁধ, সাগর, নদী, জলাধার --- এসবের চারপাশে গাছের সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে চলতে হবে, নোতুন গাছ লাগানোর দশগুণ করার লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে হবে৷ ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার হ্রাস করে ভূপৃষ্ঠের ওপারের বৃষ্টির জল ব্যাপকভাবে জমিয়ে তার সদ্ ব্যবহার করতে হবে৷ ফলের গাছ গোড়ায় যথেষ্ট জল ধরে রাখতে পারে৷ তাই নদীর দুইধারে আর শস্য ক্ষেতের কাছে ফলের গাছ ব্যাপকভাবে লাগানো উচিত৷
গাছ লাগানো ও বনসৃষ্টি সম্পর্কে প্রাউট প্রবক্তা অনেক নোতুন নোতুন পরামর্শ দিয়েছেন৷ যেমন, পুকুর, বাঁধ, খাল,সাগর, জলাশয়ের পাড়ে বন রচনা বিষয়ে তার নির্দেশ, এইসব স্থানে বাবুল বা খয়ের গাছ লাগানো যেতে পারে৷ আর তাদের মাঝখানে লাগানো যেতে পারে বকফুল ভারতীয় প্রজাতির শাল৷
এর কারণ হ’ল, বকফুল খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে ও পাঁচ বছরেই দীর্ঘ বৃক্ষে পরিণত হয়৷ কিন্তু বাবুল বাড়তে এর থেকে বেশী সময় নেয়৷ শাল গাছ বাড়ে ধীরে ধীরে৷ কিন্তু অনেক দিন বাঁচে৷ এইভাবে বকফুলের গাছ তাড়াতাড়ি বড় হয়ে সেগুলি মেঘকে আকর্ষণ করে বৃষ্টিপাত ঘটাবে ও অন্য গাছকেও বাড়তে সহায়তা করবে৷ তারপর পাঁচ-ছয় বছরে সেই গাছগুলি পূর্ণত্বে পৌঁছালে কেটে ফেলা যাবে৷ কিন্তু ততক্ষণে শালের এক গভীর বন তৈরী হয়ে যাবে৷
প্রাউট-প্রবক্তা এক জায়গায় বলেছেন, ‘‘নিকট ভবিষ্যতে পৃথিবীর অনেক অংশেই তীব্র জলসংকট দেখা দেবে৷ গঙ্গা, যমুনা,টেমস ইত্যাদির মত বড় বড় নদীর জল খুব দূষিত হয়ে পড়েছে৷ এদের জল পানযোগ্য তো নয়ই, যদি এই জলে হাত-পাও ধোয়া হয়, তাহলেও রোগ সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যায়৷
এর একমাত্র সমাধান হ’ল, বৃষ্টির জলের ওপর নির্ভর করা৷ আমাদের বৃষ্টির জলধারা সঞ্চয় করে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে জলভরা মেঘ যা সমুদ্র বৃষ্টিপাত ঘটায় তা স্থলভূমির দিকে টেনে আনতে হবে৷ অধিক থেকে অধিকতর সংখ্যায় কেবল গভীর নলকূপ খনন করে চলা কোনো সমাধান নয়৷ বরং বৃষ্টিপাত যেখানে হচ্ছে, সেই জায়গা থেকে জলকে সংগ্রহ করে রাখবার চেষ্টা করতে হবে, এই জন্যেই অবিলম্বে ওই সব জায়গায় অনেক পুকুর, খাল, ছোট বাঁধ জলাধার, হ্রদ তৈরী করে বৃষ্টির জলকে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহারের জন্যে সঞ্চয় করে রাখতে হবে৷ অদূর ভবিষ্যতে মানবতা যে জল-সংকটের সম্মুখীন হবে তা থেকে বাঁচবার এই হচ্ছে একমাত্র উপায়৷’’
- Log in to post comments