দেশকে বাঁচাতে আজ নোতুন নেতা ও নোতুন আদর্শের  বড়ই প্রয়োজন

লেখক
প্রভাত খাঁ

বর্ত্তমানে সারা পৃথিবী হয়ে পড়েছে একটি বিরাট পরিবার বিশেষ৷ এর মূল কারণ হল ভৌতবিজ্ঞানের অগ্রগতি৷  আজ আর কোনকিছুই পৃথিবীর মানুষের অজানা নয়৷  কিন্তু অতীব দুঃখ ও মর্মবেদনার কথা হল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র---এই ভারতবর্ষকে কিছু স্বার্থান্বেষী কুচক্রী জঘন্য সাম্প্রদায়িকতার  ভিত্তিতে ভাগ করে এর অগ্রগতিকে  চিরকালের মতো ধবংস করে দিয়ে গেছে৷  এই বিরাট এলাকা আজ  নানা সমস্যায় জর্র্জরিত৷  আমাদের বাস সেই খণ্ডিত  ভারত যুক্তরাষ্ট্রে৷  এখানে বহু ভাষাভাষীর মানুষ বসবাস করেন৷ দীর্ঘ ৭০ বছর হলো নামেই স্বাধীন হয়েছে এদেশ৷  কিন্তু এই হতভাগ্য দেশে অদ্যাবধি তেমন কিছু সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি তো হয়নি বরং এই এলাকায় কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির শাসকগণ এক নাগাড়ে দলবাজি  করে  প্রায় ১২৫ কোটির অধিক জনগণের  ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি  খেলেই চলেছে৷ এদেশে নামে গণতান্ত্রিক  শাসন ব্যবস্থা চলে৷ প্রকৃতপক্ষে এদেশ ধনী ব্যবসাদারদের অঙ্গুলি হেলনেই চলে ৷ আবার অধিকাংশ দলই পরিবারকেন্দ্রিক৷ এখানে এই পরিবারকেন্দ্রিক দলগুলো সেই পরিবারের ও দলের বশংবদ ধনীগোষ্ঠীর  সেবাদাসেই পরিণত হয়েছিল৷  হতভাগ্য গরিব জনগণ সেই সব শাসকদের  দ্বারা নির্মমভাবেই শোষিত হয়ে চলেছে৷

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, কেন্দ্রে বিজেপি শাসন ক্ষমতায় এসে যে কটি কাজ করছে সেগুলো  সব কটাই  গরিব মারা কল হয়েছে৷  নোট বাতিল করায় দেশ  একেবারে পঙ্গু হয়ে পড়েছে৷ জাতীয় আয়  কয়েক লক্ষ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে৷ এই লোকসান সামলাতে  এই বিজেপি সরকার জি.এস.টি অর্থাৎ পণ্য পরিসেবা কর চালু  করায় ছোট ছোট ব্যবসাদারগণ  ব্যবসা চালাতে অক্ষম   হয়ে পড়ায়  লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে৷  ২২৮ টি পণ্যের  মধ্যে সর্বাধিক কর ধার্য্য  হয়েছে  ৫০টি ক্ষেত্রে ২৮ শতাংশ, বাকি ১৭৭ টির ক্ষেত্রে কর ধার্য হয়েছে ৫, ১২ ও ১৮ শতাংশ৷  শীততাপ নিয়ন্ত্রিত  রেঁস্তোরাতে যে খাবার পরিবেশিত  হয়  তার জি এস টি বর্ত্তমানে  হয়েছে ১৮ শতাংশ ৷ প্রস্তাব আছে ১২ শতাংশ করার৷  জনগণের চরম দুর্দশা হচ্ছে এই জি.এস.টির জন্য৷  জি.এস.টি নাকি  শতাধিক পণ্যের কমছে৷ ২৮ শতাংশ হচ্ছে ১৮ শতাংশ৷ এটা সাত তাড়াতাড়ি কেন্দ্রীয় সরকার করেছেন৷ তার মূল কারণ ছিল বড়ো নোট বাতিলের ফলে আর্থিক যে ক্ষতি হয়েছে সেটার ধাক্কা সামলাতে৷ সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতেই মনে হয় এই ভয়ঙ্কর জি.এস.টি লাগু করা৷  তা ছাড়া যে সব শ্লোগান বাজারে কেন্দ্রীয় সরকার চালু করেছে যেমন ‘‘স্বচ্ছ ভারত’’  ‘‘স্বাস্থ্যোজ্বল ভারত’’ এগুলি কথার কথা মাত্র৷

এমন শ্লোগান এই দীর্ঘ ৭০ বছরে  এদেশের শোষিত নিপীড়িত হতভাগ্য জনগণ অনেক  শুণেছে! প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাননীয় ইন্দিরা গান্ধী তো দেশ থেকে ‘‘গরীবী’’ হঠাতে জববর শ্লোগানে আকাশ বাতাস ফাটিয়ে তোলেন৷  কিন্তু তাতে জনগণ কতটুকু উপকৃত হয়েছিল?  তিনি যেসব ঘরে একজনও চাকরী করে না সে ঘর থেকে  একজন করে কর্মক্ষম ব্যষ্টিকে  চাকরী দেবার কথা ঘোষণা করেন কিন্তু তিনি সেটা কি রাখতে পেরেছিলেন?  সে শ্লোগান বাতাসেই মিলিয়ে যায়৷  এই নতুন কেন্দ্রীয় সরকার যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেন তাতে দেখা গেল  সবই বন্ধ..... এমনকি যে চিনিটুকু বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে  কার্ডে লিখে দেওয়া হয় সেই চিনিটুকুও সরকার দিতে সক্ষম হয় নি৷  তাছাড়া সপ্তাহে যে পরিমাণ চাল ও গম দেওয়া হয় সেটা যৎসামান্য মাত্র---যেমন হাফ কেজি চাল, ৭৫০ গ্রাম গম দেওয়া হয়৷ এতে কি একজন কর্মক্ষম ব্যষ্টির  উদরপূর্ত্তি হয়? তাছাড়া প্রায় সবাইকেই ২ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা চালুতে  কতটা যুক্তি আছে সেটাও বুঝে ওঠা কঠিন৷

মাসে মাসে কেরোসিন তেল জনপ্রতি যে পরিমানে দেওয়া হয় সেটা  নাগরিকদের কোন কাজে লাগে?  আর লিটার প্রতি মাসে তার দাম           ১ টাকা করে বেড়ে যাচ্ছে যার সদুত্তর নেই ৷ রান্নার গ্যাসের দামও মাঝে মাঝে বাড়ানো হচ্ছে৷ বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সিলিন্ডার পিছু দাম হয়েছে প্রায় ৭৮০ টাকা৷ কেন্দ্রীয় সরকার তো সব জিনিসের দাম বাড়াচ্ছে তাহলে হতভাগ্য গরীব জনগণকে কোন সেবাটা দিচ্ছেন?

ইন্দিরা গান্ধী যেমন গণতন্ত্রকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ১৯৭৫ সালে চুপি চুপি দেশে জরুরী আইন লাগু করে বিনা কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিলেন, তাদের উপর অকথ্য নির্র্যতন করেছিলেন---ঠিক তেমনি এই বিজেপি সরকারও লোকসভাকে না জানিয়ে রাতারাতি ৮ই নভেম্বর ২০১৬ সালে  অর্থনৈতিক জরুরী আইন জারি করে সারা দেশের জনগণের  চরম আর্থিক সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়ান৷ এতে হতভাগ্য বহু লোক  ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে মারা পড়েন ৷ আজও সে আর্থিক সংকটে মানুষ ভুগছে ৷ এর সুযোগ নেয় কালোটাকার  কারবারীরা ও কিছু রাজনৈতিক দলের কর্র্তরা ৷ হতভাগ্য জনগণ গণতন্ত্রের রাজত্বে কেবলমাত্র আর্থিক শোষণে নিষ্পেষিত হয়েই  চলেছে৷  আজ দেশের কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন বেকার হয়ে আছে৷ চরম দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ দিশেহারা৷ আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই৷ শুধু লেকচারবাজি চলছে৷  কোনো কোনো রাজ্য তো উৎসবে মেতেছে, আর কথায় কথায় ছুটি৷

তাছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নোংরা দল ভাঙাভাঙির খেলায় যেভাবে নেতারা মেতেছে সেটাতো অত্যন্ত লজ্জার কথা৷ এতে বোঝা যাচ্ছে যে যাঁরা শাসক তাঁদের কোনো স্বার্থে ঘা পড়লেই  তারা ন্যায়নীতি, দলীয় আদর্শের কথা ভুলে বহুরূপীর মতো দল বদলে নতুন দলীয় জার্সী পরে জনসমাজে নিজেকে নির্র্দেষ প্রমাণ করতে অতীব উৎসুক৷  এতে শাসক দলগুলির প্রতি মানুষের মানসিকতাটা কেমন হচ্ছে সেটা  কি তাদের ভাবা উচিত নয়? এতে তো এটা খুবই পরিস্কার যে, এরা কেউই দেশের কল্যাণ চান না৷  সবাই শুধু ক্ষুদ্র স্বার্থে রাজনৈতিক নেতাগিরি করেন আর লোক ঠকাতেই ওস্তাদ ৷ তাই জনগণ এদের চিনে নিয়ে দেশ ও দশের কল্যাণে নতুন করে ভাবুন ও কাজ করুন৷