দিশাহীন জনবিরোধী বাজেটে কর্মসংস্থানের পথ দেখাতে পারেনি

লেখক
প্রভাত খাঁ

আলোচনার প্রারম্ভে বলি একটি কথা তাহল অর্থই আদান প্রদানের মাধ্যম৷ সেই অর্থের মানটাই তলানিতে নেমে গেছে৷ তাই দেশ, শুধু দেশ কেন সারা পৃথিবী মুদ্রাস্ফীতিতে আক্রান্ত৷ আজ টাকার মূল্যই যেন কিছুই নেই৷ গত দশকের শেষ দিকে সোনার ভরি যা ছিল বর্তমানে সেটা আকাশ ছোঁয়া৷ তাই কাগজের নোটের ছড়াছড়ি৷ বর্তমানে ভারতের সরকার ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্রীতদাস৷ তাই জনসাধারণের কল্যাণ ভুলে শাসকদল পুঁজিবাদের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে৷ আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্মমভাবে কর চাপিয়ে দরিদ্র নাগরিকদের শোষন করে চলেছে৷ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন গর্বের সঙ্গে লোকসভায় ঘোষনা করেছেন শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ভারতের অর্থনীতি৷ কিন্তু বাস্তব হলো এই সরকার ধনীদের কাছে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রিত শিল্প সংস্থাগুলো বিক্রয় করে চলেছে৷ আর অর্থনীতি নাকি স্থিতিশীল!

বর্তমান দেশের মূল্যবৃদ্ধিও স্থিতিশীল৷ কিন্তু এটা কি বাস্তবে সত্য! মূল্যবৃদ্ধিতে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত৷ সত্যিকথা বলতে কি লোকসভা এমনই একটা পীঠস্থান যেখানে ব্যর্থ সরকারও সবকিছু অস্বীকার করে চরম কল্পনা জগতের আশাবাদী সরকার হয়ে প্রচার করে৷ সরকারের সেই আকাশ কুসুম কল্পনা বাস্তবের সঙ্গে কতটা মেলে সেটা কখন ভেবে দেখে না৷ তবে সরকারে যারা আছেন তাদের সাম্মানিক বেতন তাদের কল্পনার চেয়ে অনেক বেশী৷

দেশের হতদরিদ্র নাগরিকগণের জীবনটা আর্থিক অনটনে কাতর৷ এই ছবি সরকার দেখেও দেখেনা৷ কিন্তু আলো দেখাতে ছাড়ে না৷ একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গ্রামের মহিলাদের কাজ করার প্রবনতা বৃদ্ধি পেয়েছে৷ কিন্তু এর কারণ পুরুষদের অধিকাংশ বেকার অথবা কাজ হারিয়েছেন৷ তাই সংসারে হাল ধরতে এই প্রবণতা বৃদ্ধি৷ এটা সরকারের বা রাষ্ট্রের কাছে কোন গর্বের বিষয় নয়৷ কারণ আর্থিক দুরাবস্থা মেয়েদেরকে বাধ্য করছে সংসার ছেড়ে উপার্জনের পথে যেতে৷ অন্যদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে পারিবারিক সঞ্চয়ের পরিমান তলানিতে পৌঁছেছে৷ এটাই সরকারের বেহাল অর্থনীতির ছবি৷ অপরদিকে জিডিপি ৫.৩ শতাংশে নেমে গেছে৷ সাধারণ মানুষের আয় কমেছে ব্যয় বেড়ে গেছে৷ কর্ষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না৷ ফোড়েরা অল্প দামে কর্ষকের কাছ থেকে জিনিস কিনে বেশী দামে বিক্রি করে৷ শিল্পেও উৎপাদন বৃদ্ধির হার কমেছে নানা কারণে৷ ইন্ডিয়া রেটিং সংস্থা এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ রিজাভ ব্যাঙ্কের প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে দেশে উৎপাদন শিল্পে মন্দা দেখা দেওয়ায় প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ কমে গেছে তাই বর্তমান আর্থিক বচনে গতবারের ১১.৩ বিলিয়ন ডলার কমে হয়েছে ৯.৩ বিলিয়ন ডলার৷ মোদ্দাকথা শিল্প ধুঁকছে, কৃষিও ধুঁকছে৷ সার কথা দশবছরের বিজেপি শাসনে ফ্যাসিবাদী চিন্তাভাবনা দেশকে পেছন দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷

এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় এন.ডি.এ সরকার লোকসভায় প্রথম বাজেট পেশ করলো গত ২৩শে জুলাই৷ ক্ষমতায় ফিরলেও নির্বাচনে ঘা খেয়েছে বিজেপি৷ ৪০০ পারের উচ্চাশা নিয়ে নির্বাচন লড়ে একক গরিষ্ঠতা হারিয়েছে৷ ২৪০-এ থেমে গেছে বিজেপি৷ তাই আশা ছিল সাধারণ মানুষের মন ফিরে পেতে বাজেটে একটা চেষ্টা থাকবে৷ কিন্তু সেরকম কিছু দেখা গেল না৷ জোট সরকারের দায় শরিকদের সন্তুষ্ট রাখতে যে বাজেট পেশ হয়েছে লোকসভায় তা জাতীয় বাজেট নয়, শরিকতুষ্টির প্রাদেশিক বাজেট বলা যায়৷ বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশকে দরাজ হস্তে দান করেছে, বাঙলার কপালে সেই বঞ্চনা৷

তবু বেকারত্ব দূরীকরণে একটা দিশা পাওয়া যাবে বাজেটে এমনই আশা অনেকের ছিল৷ সরকার নিজেই কর্মসংস্থান একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে মেনে নিয়েছে৷ কিন্তু সেই সমস্যার দায় বেসরকারী শিল্প মহলের হাতে ছেড়ে দিয়েছে৷ অর্থাৎ সরকারের কোন দায় নেই বেকারত্ব দূরীকরণে৷ বিরোধী দলগুলি নির্বাচনের আগে থেকেই বেকার সমস্যাকে দেশের প্রধান সমস্যা হিসেবে প্রচার করে গেছে৷ কিন্তু সে সময় সরকার বিরোধীদের প্রচারকে আমল দেয় নি৷ কিন্তু এক ধাক্কায় বিজেপির আসন ৩০৩ থেকে ২৪০-এ নেমে আসায় সরকারের কিছুটা হুঁশ ফেরে৷ মোদির নিজেরও ভোট গত বারের থেকে ৩ লক্ষের বেশী কমে গেছে৷ তাই বাজেটে বেকার সমস্যার সমাধানে ভুরি ভুরি কথা ছিল৷ কিন্তু তার সঙ্গে বাস্তবের মিল কতটা সেটা সময়েই জানা যাবে৷ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কংগ্রেসের পি.চিদাম্বরন বলেন কংগ্রেসের লোকসভা নির্বাচনের ইস্তাহারে ইন্টার্ন নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল৷ মোদি সরকার কংগ্রেসের সেই ভাবনা চুরি করেছে কিন্তু বাস্তবে রূপায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর মতে, কর্মসংস্থানের জন্য একটা পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে কিন্তু তা খুবই সামান্য৷ তিনটি প্রকল্প থেকে যে দু’কোটি নববই লক্ষ তরুণ উপকৃত হওয়ার পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে তাও ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলা হয়েছে৷ রাজ্যের শাসক দল বাঙলার প্রতি বঞ্চনা নিয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভায় তীব্র প্রতিবাদ করেছে৷ একসময়ে অর্থমন্ত্রী মেজাজ হারিয়ে বাঙলার প্রতি বঞ্চনা অস্বীকার করেন৷