দৃঢ়চেতা

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

বেশি দিনের কথা নয়৷ তখন আমাদের দেশ ব্রিটিশ শাসনে শাসিত৷

স্থানটার নাম সুজাম্বুটা৷ সেট্‌লমেন্টের এক বাঙালী অফিসার বদলি হলেন এই জায়গায়৷ নতুন কাজে হাত দিয়েই তাঁর চক্ষু স্থির৷ তিনি দেখলেন, সেট্‌লমেন্টের অন্যান্য অফিসাররা জমির জরীপ সংক্রান্ত ব্যাপারে অন্যায়ভাবে বেশী খাজনা আদায় করছেন৷

ক্ষুব্ধচিত্তে বাঙালী অফিসারটি এই অসৎ কাজের বিরুদ্ধে হাতিয়ার ধরলেন৷ বেআইনীভাবে বেশী খাজনা আদায় করা তিনি আইনের সাহায্যে বন্ধ করে দিলেন৷

ফলে জেলার সাহেব-অফিসাররা তাঁর ওপর গেলেন ভীষণ ক্ষেপে৷ নিরুপায় হবে তাঁরা গিয়ে আপীল করলেন জজের কাছে৷

 জজ বাঙালী অফিসারের বিরুদ্ধে রায় দিলেন৷ আর ছোট লাট স্যার চার্লস ইলিয়ট তাঁকে ডেকে পাঠালেন৷ অপমান করবার জন্য৷ একজন সামান্য বাঙালী অফিসারের স্পর্ধাকে তিনি এক ধম্মকে উড়িয়ে দিতে চাইলেন৷

কিন্তু ছোটলাট তো দূরের কথা বড় লাটকেও ভয় পাবার মতো দুর্বল মানুষ বাঙালী অফিসারটি নন৷ তাই তিনিও মুখের ওপর দৃপ্তস্বরে বলে ফেললেন ‘স্যার আপনি বরাবরই পাঞ্জাবেই ছিলেন,অতএব বাংলাদেশেরজরীপ সংক্রান্ত আইন কানুন আপনার কিছুই জানা নেই৷ সুতরাং যা জানেন না, তা নিয়ে তর্ক করবেন না৷

কী -ছোট লাট জানেন না৷ সামান্য একজন বাঙালীর মুখে এতবড় কথা!

তাই আবার মামলা শুরু হলো৷ এবার কিন্তু জজসাহেব বাঙালী অফিসারের পক্ষেই রায় দিলেন৷ তাঁর মতকেই জজ ,সাহেব সমর্থন করলেন৷ ফলে বাঙালী অফিসারের চাকরিটা রক্ষা পেল, জমির খাজনা বেশী আদায় করাও বন্ধ হয়ে গেল৷ কিন্তু তাঁর চাকরিতে আর পদোন্নতি হলো না৷ যাঁরা সত্যবাদী তাঁরা বৃহৎ স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করতে সর্বদাই প্রস্তুত৷

বলতে পারো এই দৃঢ় চেতা বাঙালী অফিসারটি কে? ইনি হচ্ছেন আমাদের প্রিয় কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়৷