ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আশ্রিত দলতন্ত্র গণতন্ত্রকে রক্তশূন্য করে চলেছে

লেখক
প্রভাত খাঁ

বর্তমান ভারতে কি সত্যই কেন্দ্র ও সকল রাজ্যে গণতন্ত্র বলতে যা বোঝায় সেটা কি  আছে৷ এটি ভারতের অধিকাংশ নাগরিকের বিশেষ করে যাঁরা কোন রাজনৈতিক দলেরই সদস্য নন তাঁদের প্রশ্ণ৷ নির্বাচন দেশে অনুষ্ঠিত হবে তখন যখন দেশের উপর কোন বৈদেশিক আক্রমণে দেশ আক্রান্ত নয়৷ আর নির্বাচন হবে না যখন দেশের অভ্যন্তরে কোন চরম প্রাকৃতিক দুর্র্যেগে দেশ আক্রান্ত বা ভয়ঙ্কর মারণ রোগে দেশ বিপর্যস্ত৷ করোনায় সারা দেশে এমন অবস্থা অবর্ণনীয়৷

লকডাউনে, স্বাভাবিক জীবনযাত্রাই একেবারে স্তব্ধ৷ দেশবাসী করোনার  ভয়ে দিশেহারা আর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার দেশবাসীকে কিভাবে রক্ষা করবেন সে বিষয়ে কিংকর্ত্তব্য বিমূঢ় হয়ে শাসন ব্যবস্থাটাই যেন অচল করে রেখেছেন৷ জনগণ প্রায় কর্মচূ্যত হয়ে ঘরবন্দী হয়ে আটকে থাকেন৷ বাজারহাট যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল, জনগণ কর্মহীন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ‘‘আকাশ ছোঁয়া,যোগানের  অভাবে, প্রাণদায়ী ওষুধ নিয়েই চলেছে চরম কালোবাজারি, আর করোনার তো কোন ওষুধই অদ্যবধি মানুষ পাননি৷ আতঙ্কগ্রস্ত  জনগণ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কাবু  হয়ে পড়েছেন, সেই সময় কিন্তু নির্বাচন দেশে বন্ধ ছিল না৷ রাজনৈতিক দলগুলো গদীর লড়াইয়ে ব্যস্ত৷ অনেক স্থানেই নির্বাচন হয়েছে৷ যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাদের সম্বন্ধে সংবাদপত্রে সবই জানান না দিলেও কিছুটা জানান দিয়েছে, তাতেই চক্ষু চড়ক গাছ জনগণের ৷ রাজনৈতিক দলগুলো ছল, বল কৌশলের আশ্রয় নিয়ে যাঁদের প্রার্থী করে বিজয়ী হয়েছেন তাঁদের অধিকাংশই একাধিক ‘অপরাধে অভিযুক্ত, বিচারাধীন আর কোটি কোটি টাকার মালিক৷ কিন্তু দেশের বোটারগণ অধিকাংশই হলেন দরিদ্র! গণতন্ত্রে জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিদের দেখা মেলেনি৷

তা হলে সরকারে যারা এলেন তাঁরা কাদের স্বার্থে এলেন? শিক্ষার মান ও অনেকের খুবই কম৷ এবার ২০২১শে নাকি অনেক রাজ্যে নির্বাচন৷ ঐ কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকগণ ও বিরোধী দলের কর্মকর্র্ত্তগণ প্রচারে নেমেছেন৷ বেশ কয়েকমাস দেরী করে করোনা করালগ্রাসে দেশ আজও আক্রান্ত৷ হতদরিদ্র জনগণ দিশেহারা, কিন্তু রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীগণ আর তাঁদের ক্যাডারগণ যেভাবে দল ভাঙ্গাভাঙ্গী করে, প্রচুর অর্থব্যয় করে করোনাবিধি নিষেধ না মেনে মাঠে ময়দানে জড় হয়ে আক্রমনাত্মক বক্তব্য রাখছেন তাতে অনেক সময়ই বক্তা উত্তেজিত এমন সব উক্তি করছেন যেটা পরিশীলিত ভাষা নয়! তাঁরাই হলেন দেশের নেতানেত্রী ও শাসক! দেখে শুনে মনে হয় সেই  প্রথম থেকেই দেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের মান যে ধীরে ধীরে তলানিতে গিয়ে পৌঁচেছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে আর দেশের শাসন ব্যবস্থাটা যে একেবারে গোল্লায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে বর্ত্তমান শাসকদের কুশাসনে সেটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার৷ ‘‘এলোমেলো করে দে মা লুটে পুটে খাই--- এটা হলো শাসকদের অধিকাংশের ধ্যান ও জ্ঞান আর দেশ ও দেশের মানুষ চুলোয় যাক্‌! ১৩০কোটি নাকি দেশের লোকসংখ্যা, তবে বাস্তবে এর চেয়ে মনে হয় অনেক বেশী৷ সেই জন বহুল দেশে যাঁরা কেন্দ্রে ও রাজ্যে শাসনে আছে সেই দল-এর নেতানেত্রী ও কর্মীগণ যে সুবিধাভোগ করেন সেই সুবিধা কিন্তু অন্য বিরোধী দলের সমর্থকগণ কেন্দ্রের শাসন যাঁদের পরিচালিত তাঁরা অন্য বিরোধী দলের নেতা ও সমর্থকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলেই মনে করে ও অন্যান্য ব্যাপার এতে  ভেদাভেদ করে চলেন সেই দীর্ঘ ৭২ বছরেই দেখা যাচ্ছে৷ যে কটি ভাষা রাজ্যভাষা হিসাবে স্বীকৃত সেগুলিকে কেন্দ্রের হিন্দীভাষী শাসকগণ  দমন করে জোর পূর্বক হিন্দি চাপিয়ে দিতে চায় অহিন্দি এলাকায়৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা যেখানে চলে, গণতন্ত্রের নিয়মানুসারে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃত রাজ্যভাষাগুলিতে পার্র্লমেন্টে  নিজ নিজ মাতৃভাষায় বক্তব্য রাখাটা দরকার, হিন্দিতে বা ইংরেজীতে বলতেই হবে সেটা গণতান্ত্রিক অধিকার নয়৷ এটা একধরনের দমনমূলক নীতি৷

সরকার এতে যাঁরা শাসনে থাকবেন বিশেষ করে কেন্দ্রে তাঁরা কিন্তু কোন দল থেকে নির্বাচিত হয় বিশেষ করে মন্ত্রীগণকে কিছুটা সংযত থাকাটা উচিত, তাঁদের ভাবা উচিত শাসক হিসাবে তাঁরা কতটা কাজ করেছেন সেটা জনগণকে জ্ঞাত করার বিষয়ে আর সরাসরি যাঁরা দলে আছেন তাঁরা দলের আদর্শ কর্মপন্থা সম্বন্ধে জনগণের কাছে ব্যক্ত করবেন যেটা শোভনীয় ও কর্ত্তব্য কর্ম৷ দেখা যাচ্ছে বর্ত্তমানে নিজেদের কথা না বলে কেবল বিরোধীদের  কুৎসা রটনা করা, আর ব্যষ্টিগত আক্রমন করাটাই নেতানেত্রীদের  অভ্যাস হয়ে গেছে৷

আর লজ্জার কথা গণতন্ত্রে দল ভাঙ্গাগড়া করার, দল ত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দেওয়াটাকে সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধি ছাড়া কিছু নয় বলেই  মনে হয়৷ দলত্যাগ নীতি কখনো আইন সম্মত হতে পারে না৷ সেটা গণতান্ত্রিক বিরোধী কাজ৷ যে দলের টিকিট নিয়ে জয়ী প্রার্থী তিনি কখনো অন্য দলে যেতে পারেন না কারণ সেটা আইন বিরুদ্ধ কাজ, সেটাকে আইন সিদ্ধ করাটাও অপরাধ৷ দল যিনি ত্যাগ করবেন তিনি এম.এল.এ,এম.পি-এর পদও হারাবেন এটাই আইনসিদ্ধ৷ কিন্তু এখানে আমরা অন্যরূপ দেখি৷ দলবাজি প্রধান গণতান্ত্রিক শাসন যেটা জোলো দুধের মতো যাতে সারবত্তা নেই৷ শাসন ক্ষমতা কায়েম করাটাই লক্ষ্য জন সেবা নয়৷

বর্তমানে কেন্দ্রের সরকারের আচরণ,শাসন পদ্ধতিতে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা কি ফুটে উঠছে না? ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের এটা অত্যন্ত ক্ষতিকারক প্রবণতা মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসটা হারাচ্ছে আর দেখা যাচ্ছে যাঁরাই শাসনে যায় তারাই ধীরে ধীরে স্বৈরাচারী শাসকের দিকেই যাওয়ার প্রবণতা৷ দেখান৷ এটাই এদেশের শাসকদের মারাত্মক ত্রুটি৷

ভারতের বহু ভাসাভাষীর দেশে দরকার সৎনীতিবাদী, মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী নাগরিকদের সরকার,যেখানে ধনী ও পরিবারতন্ত্রের নেতা নেত্রীদের দলীয় শাসন গণতন্ত্রের অস্ত্বিত্বটা নষ্ট  হয় না এযাবৎ হয়ে আসছে৷ তাই দলে দলে লাঠা-লাঠিস খেয়োখেয়ী ও দলভাঙ্গাভাঙ্গীর প্রবণতা৷

মোদ্দাকথা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্য সরকারের অধিকারহরণ প্রচেষ্টাকে  বন্ধ করা আবশ্যিক৷ যদি তা না হয় তা হলে গণতন্ত্রটাই এক ব্যর্থ পরিহাসে পরিণত হবে৷ নাগরিকগণকে তাই সজাগ হয়ে নির্বাচনের মতামত দান করতে হবে তাঁদের মূল্যবান বোট দানে আগামী নির্বাচনে৷ তবে বোটদান পর্বটা যেন করোনার করালগ্রাসের মধ্যে না হয়, কারণ বোটারগণ শান্তিতে সুস্থভাবে মতামত দিতে পারেন সেটা দেখার দায় মহামান্য নির্বাচন কমিশনের৷

লজ্জার কথা দেশ নোংরা দলবাজিতে অত্যন্ত ক্লান্ত ও আশাহত!