বর্তমান ভারতে কি সত্যই কেন্দ্র ও সকল রাজ্যে গণতন্ত্র বলতে যা বোঝায় সেটা কি আছে৷ এটি ভারতের অধিকাংশ নাগরিকের বিশেষ করে যাঁরা কোন রাজনৈতিক দলেরই সদস্য নন তাঁদের প্রশ্ণ৷ ভারতীয় সংবিধান দেশের সাধারণ মানুষকে কতকগুলি মৌলিক অধিকার দিয়েছে৷ সেসব অধিকার সম্বন্ধে জনগণ যেমন সজাগ নয়, তেমনি দেশের দেশের অধিকাংশ নেতানেত্রীও এ বিষয়ে খুব একটা সজাগ বলে মনে হয় না৷ যে দেশের জনগণ স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরেও জীবন ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজনটুকুও যোগাড় করতে সক্ষম নয়, তাদের আবার মৌলিক অধিকার এই পরিস্থিতিতে একবার ক্ষমতায় আসীন হতে পারলে এরপর অসচেতন জনগণকে বোকা বানিয়ে গণতন্ত্রে ছিদ্র পথে আশ্রয় নিয়ে যেন তেন প্রকারে ক্ষমতা ধরে রাখতে সচেষ্ট হয় দলগুলি৷ শুধু অগণতান্ত্রিক পথেই নয়, অশালীন ভাষা ব্যবহার করতেও দেখা যায় অনেক নেতাকে প্রচারে এমন সব ভাষা ব্যবহার করে যা অপরিশীলিত৷ তাঁরাই হলেন দেশের নেতানেত্রী ও শাসক! দেখে শুনে মনে হয় সেই প্রথম থেকেই দেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের মান যে ধীরে ধীরে তলানিতে গিয়ে পৌঁচেছে সেটা বোঝাই যাচ্ছে আর দেশের শাসন ব্যবস্থাটা যে একেবারে গোল্লায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে বর্ত্তমান শাসকদের কুশাসনে সেটা দিবালোকের মতো পরিষ্কার৷ ‘‘এলোমেলো করে দে মা লুটে পুটে খাই--- এটা হলো শাসকদের অধিকাংশের ধ্যান ও জ্ঞান আর দেশ ও দেশের মানুষ চুলোয় যাক্! ১৩০কোটি নাকি দেশের লোকসংখ্যা, তবে বাস্তবে এর চেয়ে মনে হয় অনেক বেশী৷ সেই জন বহুল দেশে যাঁরা কেন্দ্রে ও রাজ্যে শাসনে আছে সেই দল-এর নেতানেত্রী ও কর্মীগণ যে সুবিধাভোগ করেন সেই সুবিধা কিন্তু অন্য বিরোধী দলের সমর্থকগণ কেন্দ্রের শাসন যাঁদের পরিচালিত তাঁরা অন্য বিরোধী দলের নেতা ও সমর্থকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলেই মনে করে ও অন্যান্য ব্যাপার এতে ভেদাভেদ করে চলেন সেই দীর্ঘ ৭৬ বছরেই দেখা যাচ্ছে৷ যে কটি ভাষা রাজ্যভাষা হিসাবে স্বীকৃত সেগুলিকে কেন্দ্রের হিন্দীভাষী শাসকগণ দমন করে জোর পূর্বক হিন্দি চাপিয়ে দিতে চায় অহিন্দি এলাকায়৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা যেখানে চলে, গণতন্ত্রের নিয়মানুসারে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃত রাজ্যভাষাগুলিতে পার্র্লমেন্টে নিজ নিজ মাতৃভাষায় বক্তব্য রাখাটা দরকার, হিন্দিতে বা ইংরেজীতে বলতেই হবে সেটা গণতান্ত্রিক অধিকার নয়৷ এটা একধরনের দমনমূলক নীতি৷
সরকার এতে যাঁরা শাসনে থাকবেন বিশেষ করে কেন্দ্রে তাঁরা কিন্তু কোন দল থেকে নির্বাচিত হয় বিশেষ করে মন্ত্রীগণকে কিছুটা সংযত থাকাটা উচিত, তাঁদের ভাবা উচিত শাসক হিসাবে তাঁরা কতটা কাজ করেছেন সেটা জনগণকে জ্ঞাত করার বিষয়ে আর সরাসরি যাঁরা দলে আছেন তাঁরা দলের আদর্শ কর্মপন্থা সম্বন্ধে জনগণের কাছে ব্যক্ত করবেন যেটা শোভনীয় ও কর্ত্তব্য কর্ম৷ দেখা যাচ্ছে বর্ত্তমানে নিজেদের কথা না বলে কেবল বিরোধীদের কুৎসা রটনা করা, আর ব্যষ্টিগত আক্রমন করাটাই নেতানেত্রীদের অভ্যাস হয়ে গেছে৷
আর লজ্জার কথা গণতন্ত্রে দল ভাঙ্গাগড়া করার, দল ত্যাগ করে অন্য দলে যোগ দেওয়াটাকে সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধি ছাড়া কিছু নয় বলেই মনে হয়৷ দলত্যাগ নীতি কখনো আইন সম্মত হতে পারে না৷ সেটা গণতান্ত্রিক বিরোধী কাজ৷ যে দলের টিকিট নিয়ে জয়ী প্রার্থী তিনি কখনো অন্য দলে যেতে পারেন না কারণ সেটা আইন বিরুদ্ধ কাজ, সেটাকে আইন সিদ্ধ করাটাও অপরাধ৷ দল যিনি ত্যাগ করবেন তিনি এম.এল.এ,এম.পি-এর পদও হারাবেন এটাই আইনসিদ্ধ৷ কিন্তু এখানে আমরা অন্যরূপ দেখি৷ দলবাজি প্রধান গণতান্ত্রিক শাসন যেটা জোলো দুধের মতো যাতে সারবত্তা নেই৷ শাসন ক্ষমতা কায়েম করাটাই লক্ষ্য জন সেবা নয়৷
বর্তমানে কেন্দ্রের সরকারের আচরণ,শাসন পদ্ধতিতে সাম্প্রদায়িক মানসিকতা কি ফুটে উঠছে না? ধর্মমত নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের এটা অত্যন্ত ক্ষতিকারক প্রবণতা মানুষ গণতন্ত্রে বিশ্বাসটা হারাচ্ছে আর দেখা যাচ্ছে যাঁরাই শাসনে যায় তারাই ধীরে ধীরে স্বৈরাচারী শাসকের দিকেই যাওয়ার প্রবণতা৷ দেখান৷ এটাই এদেশের শাসকদের মারাত্মক ত্রুটি৷
ভারতের বহু ভাসাভাষীর দেশে দরকার সৎনীতিবাদী, মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী নাগরিকদের সরকার,যেখানে ধনী ও পরিবারতন্ত্রের নেতা নেত্রীদের দলীয় শাসন গণতন্ত্রের অস্ত্বিত্বটা নষ্ট হয় না যা এযাবৎ হয়ে আসছে৷ তাই নির্বাচনের সময় দলে দলে লাঠা-লাঠি খেয়োখেয়ী ও দলভাঙ্গাভাঙ্গীর প্রবণতা বন্ধ হওয়া উচিত৷
মোদ্দাকথা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের রাজ্য সরকারের অধিকারহরণ প্রচেষ্টাকে বন্ধ করা আবশ্যিক৷ যদি তা না হয় তা হলে গণতন্ত্রটাই এক ব্যর্থ পরিহাসে পরিণত হবে৷ নাগরিকগণকে তাই সজাগ হয়ে নির্বাচনের মতামত দান করতে হবে তাঁদের মূল্যবান বোট দানে আগামী নির্বাচনে৷
- Log in to post comments