বর্তমানে এই বাঙলার দুটি বিষয়ে সংবাদপত্র, রাজনৈতিক দলগুলি, সরকার, তার সাথে সাথে জনগণ খুবই মুখর হয়েছেন ও সারা রাজ্য এ ব্যাপারে সকলেই দুশ্চিন্তায় মগ্ণ৷ যে ব্যাপারে সবাই উদ্বিগ্ণ তা হলো বাঙলার অধিকাংশ সেতুই বিপজ্জনক৷ আর বাজারগুলিতে, যেগুলি বিখ্যাত, প্রায় আগুন লাগায় কোটি কোটি টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় মালপত্র আগুনে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়াতে পূজার মরশুমে রাজ্যবাসী সকলে বিমর্ষ ও দুঃখিত!
এটা দেখা যাচ্ছে এই ধরণের দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যখন ঘটছে তখন সরকারকে দোষারোপ করা হচ্ছে৷ কিন্তু ঘটনাবলী যখন ঘটে যাচ্ছে তার আগে বিরোধী পক্ষ, জনগণ বিশেষ করে ব্যবসাদারগণ সবই ব্যবহার করছেন ও দেখছেন৷ তখন তো কোন উচ্চবাচ্য কেউ করছেন না৷ মূল কথা ধবংস হবার পর সবাই চান নিজেদের সচেতনাতাকে সকলের মাঝে বড় করে জাহির করতে৷
বিশেষ করে দেখা যায় সেতুগুলির ওপর দিয়ে যেসব লরি মালবহন করে থাকে সেগুলি অধিকাংশ সময় আইন মেনে মালবহন করে না৷ ৯ টন, ১২ টন, ২০ টন এইভাবে মালবহন করার ক্ষমতা এক-একটি সেতুর আছে৷ দেখা যাচ্ছে এই আইন শুধু কাগজে-কলমে, তাছাড়া যারা পাহারাদার তারা ধরলেই বা কি, কিছু হাতে গুঁজে দিলেই সাত খুন মাফ৷ এটা একটা নিয়ম হয়ে গেছে৷ ফলে একনাগাড়ে প্রচণ্ড চাপে পুরাতন সেতু ক্ষমতা হারিয়ে অকালে ভেঙ্গে পড়ছে৷ রক্ষণাবেক্ষণ করার আইন আছে, লোকও আছে কিন্তু আন্তরিকতার সঙ্গে কোনও কাজ না হওয়াতে জাতীয় সম্পদগুলি পরের পর ধবংসপ্রাপ্ত হচ্ছে৷
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবটা যে আগে ছিল না তা নয়৷ আর দলীয় গণতন্ত্রের যে সাধারণ দোষ-ত্রুটি সেটাও ছিল৷ দীর্ঘ সত্তর বছরে তো আমরা অনেকেই দেখে আসছি এই দীর্ঘ বছরে সব কিছু ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে বর্তমানে অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়েছে৷ সবই জরাজীর্ণ৷ তাই এই চরম সংকটে নিছক সরকারের ওপর দোষারোপ করে বাজিমাত না করে সকলকে সরকার, বিরোধী পক্ষ আর জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় সম্পদগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে৷ গণতন্ত্রের সবচেয়ে দায়িত্ব জনগণের৷ জনগণ তো এই সব জাতীয় সম্পদ ব্যবহার করেন৷ তারা তো সব সময় আইন মেনে চলেন না৷ বে-আইনী কাজ তাদের দ্বারাই হয়ে থাকে৷ আর রক্ষণাবেক্ষণ যারা করেন তারা সঠিক কর্তব্য পালন করেন না বলে মনে হয় না৷ অনেক ঘটনা আছে৷ জনগণ দেখেও কিছু করতে পারেন না৷ কারণ সর্ষের মধ্যেই ভূত৷ অনেক সময় রক্ষকগণই ভক্ষক হয়ে বসে আছে৷ মোদ্দা কথা যাদের ওপর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তারাই মূলত এই ক্ষয়ক্ষতির জন্যে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন কিন্তু দায় এড়াতে পারেন না৷
এটাকে অস্বীকার করাও যায় না যে শাসনভার যাদের ওপর তাদের ওপর চাপটা আসে বেশী৷ বর্তমানে যে সেতু নিয়ে হইচই হচ্ছে বা যে বাজারটা নিয়ে এত আলোচনা সেই বাগড়ি মার্কেটের যে কী দুর্দশা সেটার সবকিছু আজ জনগণের কাছে পরিষ্কার৷ মার্কেটটি যে জতুগৃহ ছিল সেটা সবাই জেনেছে৷ যারা ব্যবসা করছে, যারা বাজারের মালিক আর যারা ট্যাক্স আদায় করছে আর যারা রাস্তাঘাট রক্ষণাবেক্ষণ করছে, যারা ইলেট্রিক সংযোগ করছে সবাই কি শুধু আয়ের দিকেই নজর দিয়ে চলে?তাদের কি কোনও ন্যায়-অন্যায় বোধ নেই? জনসাধারণের স্বার্থের দিকে নজর কি কারোর থাকবে না? গণতন্ত্রে তখনই জাতীয় সম্পদ রক্ষা পাবে যখন সমবেতভাবে সে সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তারা সঠিক ভাবে পালন করবে৷ জনগণের প্রাণ যাচ্ছে! এটা যে কত দুঃখের কথা তা বর্ণনা করা যায় না৷ শুধু কি কিছু টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করা যায়? যায় না৷ অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গেই বলতে হয়, বর্তমানে দেশে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে৷ সৎ নীতিবাদী দায়িত্বশীল খুবই কমই আছেন, সবাইকারই একটাই লক্ষ্য তা হ’ল কী করে বেশী রোজগার করা যায়৷ তাই তো জাতীয় সম্পদ নিছক অবহেলায় ধবংস হচ্ছে৷ দায়িত্বশীল সৎ নীতিবাদী নাগরিকদের আজ বড়ই অভাব এদেশে৷ সরকার যাদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে থাকেন সেখানেই দেখা যায় বেশী অবহেলা৷ দেশকে বাঁচাতে গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করতে জনগণকে অবশ্যই সব দিক থেকে আরও বেশী করে দায়িত্বশীল হয়ে চোখ-কান খুলে পথ চলতে হবে৷ তবেই জাতীয় সম্পদ রক্ষা পাবে৷ আর দেশ এগিয়ে যাবে৷ তা না হলে সেই ৩০-৪০ বছরেই কোট কোটি টাকা দিয়ে তৈরী জাতীয় সম্পদ ধবংস হবে৷
তবে সব ব্যাপারে দরকার নিরক্ষেপ তদন্ত৷ কাদের অবহেলায় দেশের সম্পদ ধবংস হচ্ছে সত্য সত্যই তাদের চিহ্ণিত করা ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা৷ মোদ্দা কথা হচ্ছে গণতন্ত্রে জনগণকে সব ব্যাপারেই সজাগ থাকতে হবে৷ দলের ওপরে দেশ৷ দেশের সম্পদ হ’ল সকলের৷ তাই তর্কাতর্কি করে একের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে রেহাই পাওয়ার মতলব আঁটা চলবে না৷ এখন দরকার সমবেতভাবে জাতীয় সম্পদকে রক্ষা করা৷
- Log in to post comments