Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

.......

(৬)‘ধক্‌’ ধাতুর অর্থ পিষে দেওয়া/পিষে মেরে ফেলা/বিনাশ করা/ঠেলে দেওয়া৷ কেউ কেউ ভাবেন ধাতুটি বুঝি ‘ধক্ক্‌’৷ না, তা নয়৷ এই উভয়পদী ধাতুটি হচ্ছে ‘ধক্‌’৷ তবে এর ধাতুরূপ ধকয়তি/ধকয়তে না হয়ে পৃষীদীর্ঘঃ বিধি অনুযায়ী একটি ৰাড়তি ‘ক’-এর আগম হয়ে ধক্কয়তি/ধক্কয়তে হবে৷ বাংলা ‘ধাক্কা’ শব্দটি এর থেকেই এসেছে৷ এই ‘ধক্‌’ ধাতু থেকেই বাংলায় ব্যবহৃত ‘ধকল’ (টাল সামলানো) শব্দটি এসেছে৷ ছারপোকা, মশা বা ওই ধরণের অতি ক্ষুদ্র জাতশত্রুকে মারার জন্যে মানুষ তাকে চেপ্ঢে বা পিযে মেরে দেয়৷ এই ভাবে মারার জন্যে ‘ধক’ ধাতু ব্যবহৃত হয়৷ ‘ধক্‌’ ধাতু ‘অচ্‌’ করে যে /‘ধক’ শব্দ হয় তার মানে যা পিষে বা গুঁড়িয়ে দেয়৷ এই অর্থে ‘ধক’ মানে আটাকল/ছাতু বা বেশনের কল/যাঁতা/রাস্তায় চলা রোলার সর্বত্রই চলৰে৷

রাস্তায় একটা ষ্টীমরোলার চলছে৷ অনায়াসে সংস্কৃতে ৰলা যাৰে---বাষ্পীয়ধকঃ চলতি৷ সে নিজে চলছে না, আরেকজন চালাচ্ছে ৰলে সে চলছে৷ তাই এক্ষেত্রে আত্মনেপদী ‘চলতে’ না ৰলে পরস্মৈপদী ‘চলতি’ হওয়াই অধিকতর শোভন৷ মনে রাখা দরকার ‘‘চল ধাতু উভয়পদী৷ বৈদিক ভাষায় আত্মনেপদী ও পরস্মৈপদী দুই রূপই চলত৷ লৌকিক সংস্কৃতে কিন্তু আত্মনেপদী রূপটি বিরল হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পরস্মৈপদী রূপই চলছে৷ এই ‘ধক্‌+‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ধ’ পাচ্ছি তার মানে ‘‘যা পিষে মারে’’ বা যা গুঁড়ো করে দেয়৷

(৭) ‘ন্মা’ ধাতুর অর্থ হ’ল ফুঁ দেওয়া বা ফুঁ দেওয়ার রীতিতে কথা ৰলা৷ কাউকে যদি ফুঁ দেওয়ার রীতিতে জোরে জোরে শাসানো হয় আমরা ৰাংলায় তাকে ৰলি ‘ধমক দেওয়া’৷ ‘ধমক’ শব্দটিও ‘ন্মা’ ধাতুর থেকে এসেছে৷

এই ফুঁ দেওয়া সম্বন্ধে ঠাট্টা করে ৰলা হয়, পুরোহিত-তন্ত্র তিনটি ফুঁ-এর ওপর দাঁড়িয়ে আছে--কাণে ফুঁ, শাঁখে ফুঁ, আখায় ফুঁ৷ পুরোহিতের যেখানে কিছুটা বিদ্যে, কিছুটা শাস্ত্র-জ্ঞান আছে সে করে গুরুগিরি, অর্থাৎ কাণে ফুঁ দেয়৷ যার বিদ্যেবুদ্ধি ততটা নেই সে সাধারণতঃ যাজকতা করে অর্থাৎ শাঁখে ফুঁ দেয়৷ যাজকতা করতে গেলে যেটুকু বিদ্যেবুদ্ধির দরকার সেটুকুও যার নেই সে করে পাচকের কাজ৷ সে আখায় অর্থাৎ উনুনে ফুঁ দেয়৷ এই তিন ফুঁ-এর দিকে তাকালেই চিনতে পারৰে৷

‘ন্মা’ ধাতু+অচ= ধম, আর ন্ম+ ণিচ্‌+ অচ = ধাম৷ ‘ধম’ মানে ৰংশীবাদক---যোগারূঢ়ার্থেও ৰংশীবাদক৷ কৃষ্ণ ৰাঁশী ৰাজাতেন৷ এই অর্থে ‘ধম’ ৰলতে কৃষ্ণকেও ৰোঝায়৷ ন্ম+ ড= ধ ৰলতেও কৃষ্ণকে ৰোঝায়৷ শিব বিষাণ ৰজাতেন৷ এই অর্থে ‘ধম’ ৰলতে শিবকেও ৰোঝায়৷ আর ‘ন্মা+ ‘ড’ করে ‘ধ’ ৰলতেও শিবকে ৰোঝায়৷

                                                 (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে গৃহীত)