৭২ বছর ধরে এই যুক্তরাষ্ট্রে চলছে নামকেওয়াস্তে গণতন্ত্র (?) পশ্চিমী শক্তি ইংরেজ সরকার সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে সেই অখণ্ড ভারবর্ষকে টুকরো টুকরো করে চিরকালের মতো এই বিরাট দেশকে অভিশপ্ত করেই রেখে গেছে৷ আর এখানে যারা শাসনের নামে লাঠি ঘোরাচ্ছে তারা কেউই প্রকৃত দেশসেবক নয় নয়, কারণ প্রকৃত দেশসেবক হলে জননী স্বরূপা এই দেশমাতাকে কখনো টুকরো টুকরো করে রক্তাক্ত করত না৷ প্রকৃত দেশসেবকগণ, যাঁরা আজও জীবিত আছেন তাঁরা দেশের বর্ত্তমান পরিস্থিতি দেখে অত্যন্ত মর্মাহত৷ দেশের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য তাঁরা একদিন সংগ্রাম করেছেন৷ কিন্তু চক্রান্ত কারীরা চিরকালের মতো এদেশে আগুণ জ্বালিয়ে রাখতে জঘন্য সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দিয়ে চলেছে৷ বকলমে আজও সেই পশ্চিমী শক্তিই এখানে দাদাগিরি করে চলেছে, আর বর্ত্তমান শাসকগণ তাদেরই অঙ্গুলি হেলনে উঠছে আর বসছে৷ অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি পাকিস্তানের জন্মই হয় ভারতকে অশান্তির আগুণে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মারতে৷ যার পরিণতিটা বাস্তবায়ন হচ্ছে পশ্চিম সীমান্তে আজও৷
সত্য কথা বলতে কি দীর্ঘ ৭২ বছরের গণতান্ত্রিক শাসনের পরিণতিটা কী হ’ল? সত্যই কি ভারত সার্বিক উন্নতির পথে এগুচ্ছে৷ দেশের আর্থিক তথা সামাজিক অবস্থাতো শোচনীয়! চরম বেকার সমস্যা ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির আকাশছোঁয়া অবস্থায় ভারতের কোটি কোটি হতদরিদ্র মানুষ দিশেহারা৷ কিছু মুষ্টিমেয় ধনীগোষ্ঠী দেশের মোট সম্পদের সিংহাভাগ কুক্ষিগত করে রেখেছে আর দলছুট রাজনৈতিক দলগুলি দুর্নীতিতে আকন্ঠ ডুবে ধনীদের তোষণ করে শাসনের রাজসুখ ভোগ করে চলেছে৷ শাসকগণই হল এদেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক! প্রাতঃস্মরণীয় ব্যষ্টিরা ভারতকে শাসন করার জন্য ‘ডাইরেক্টটিভ প্রিন্সিপাল অনুসরণ করতে নির্দ্দেশ দিয়ে গেছেন ও দেশ শাসনের নির্দেশনা দিয়ে যান যা লিখিত আকারে সংবিধান---সেটির বারবার সংশোধন করে এমন অবস্থায় এনে ফেলেছে যাকে আজ চেনাই যায় না৷ দেশ বর্ত্তমানে কঠিন অবস্থার উপর দাঁড়িয়ে৷
সুজলাসুফলা ভারত মূলতঃ কৃষিপ্রধান দেশ৷ এদেশের উন্নতির মূল কাঠামোটাই দাঁড়িয়ে আছে কৃষিভিত্তিক শিল্প ও কৃষি সহায়ক শিল্পের ওপর নির্ভর করে৷ সেটাকে ধবংস করে শোষক ইংরেজ শাসক, আর তাই উত্তরসুরী দেশী শাসকরা আজ সেই পথেই দেশ কে টেনে নিয়ে যাচ্ছে৷ ফলে দেশের অবস্থা আজ অস্থিচর্মসার! এরা আজও সেই বিদেশী পূঁজির দিকে তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকে৷ এটাই আজ ভারতের চরম অভিশাপ ও শাসকদের চরম ব্যর্থতা! ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কোনদিনই ভারতের মতো জনবহুল দেশের জনগণের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতি হয় না৷ এটা এই দেশের শাসকগণ কী বুঝেও বোঝে ন? এটাই হ’ল এদেশের দুর্র্ভগ্য৷ এরা ১৫টি রাজ্যকে দলীয় স্বার্থে প্রায় ৩৫ টি ভাগ করে বিরোধিতাকে বাঁচিয়ে রেখে নোংরা দলবাজি করছে সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে৷ ‘ভাগ কর ও শাসন কর’---এই ইংরেজ নীতিকেই অনুসরণ করে চলেছে স্বাধীন দেশের স্বদেশী শাসকবর্গ৷
স্মরণে রাখা দরকার সুপ্রাচীন কাল থেকে বহুভাষাভাষীর দেশ এই ভারতবর্ষ চলে এসেছে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে স্বীকার করে৷ সেই ঐক্য ছিল ধর্মবোধ, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির মধ্যে৷ বাইরের শক্তিগুলি এসে সেটিকে ধবংস করে দিয়েছে নিজেদের শোষণের স্বার্থে৷ তারা জোর করে এদেশের মাটিতে তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিল৷ তারই ফলে দেশ বহু শতাব্দী বিদেশী শাসনে শোষিত হয়েছে৷ সার্বিকভাবেই যখন দেশ জাগ্রত হয়েছে, একত্রিত হয়েছে মুক্তির এষণায় তখনই তারা ষড়যন্ত্র করে দেশকে টুকরো করে ছেড়েছে৷ এটা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তৎকালীন নেতারা বোঝেনি তা নয়, বিশেষ করে যারা ইংরেজদের ‘‘ইয়েসম্যান’’৷ সব জেনে বুঝেও নিজেদের দলীয়ও সম্প্রদায়ের স্বার্থে দেশভাগে সম্মতি দিয়ে সর্বনাশ করে বসেছে৷ তাই যে দল গুলি বলে যে তারা দেশ স্বাধীন করেছে তারা মিথ্যাচারী, ভয়ঙ্কর ষড়ন্ত্রকারী৷ তাই আজও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাসই লেখা হয়নি৷
যিনি প্রকৃত দেশকে স্বাধীন করতে আন্তরিক চেষ্টা করেছিলেন তাঁকেই---সেই নেতাজীকে তৎকালীন সবকটি দল চরমভাবে কুৎসা করেছে ও মহান দেশনেতার চরিত্র হনন করে গদীর মোহন্ত হয়ে বসে মজা লুঠেছে৷
মনে রাখা দরকার ভারতবর্ষ সুপ্রাচীনকাল থেকে শাসিত হয়েছে সমাজভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই৷ তাই এদেশের ক্ষুদ্র রাজ্যের অধিপতি নিজেকে রাজ চক্রবর্তী আখ্যায় ভূষিত করতেন৷ পররাজ্য গ্রাসে ভারতবর্ষের কোনদিনই আকর্ষণ ছিল না৷ তাই ভারতবর্ষের প্রাচীন রাজাগণ দেশের বাহিরে ধর্মের প্রচার করে গেছেন৷ এদেশের মানুষ ‘সংগচ্ছধবং মন্ত্রেই’ উদ্বুদ্ধ হতেন৷ রাজ্যশাসন হতো মহান সেই সনাতন ধর্মবোধকে মাথায় রেখেই৷ সেখানে ধর্মমতকে কখনও প্রাধান্য দেওয়া হতো না৷ তাই তাকে বলা হতো রাজধর্ম যা নিয়ন্ত্রিত হতো সেদিনের মহান মুনিঋষিদের উপদেশ মতাবেক৷ তাই বশিষ্ট, বিশ্বামিত্র রা ছিলেন নিয়ন্ত্রক৷ আজ কি হচ্ছে? নোংরা দলবাজি৷ অন্ন বস্ত্র শিক্ষা চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা প্রতিটি মানুষের জন্যে আজও হ’ল না৷ যে গণতন্ত্র জনগণের নূ্যনতম প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ সেই নামকেওয়াস্তে গণতন্ত্রের কি মূল্য আছে? এক সময়ে একজন রাজা ছিলেন দেশ শাসনে৷ আজতো পঞ্চায়েত থেকে সেই রাষ্ট্রপতি ভবন পর্য্যন্ত এতো ছোট বড়ো শাসক হয়েছেন যাদের পুষতেই গরিব দেশের কোষাগার শূন্য৷ তাহলে দেশের মানুষের সেবাটা হবে কি দিয়ে?
দেশে কেন্দ্রও রাজ্যের রাজকর্মচারীদের সংখ্যাতো দেশের কোটি কোটি বেসরকারী কর্মচারীদের চেয়ে অনেক কম৷ তাই সরকারী কর্মচারীদের যে হারে বছরে বছরে বেতন বৃদ্ধি হয়, কোটি কোটি বেসরকারী কাজে নিযুক্ত কর্মীদের সেটা হয় না তাহলে তাদের সংসার চলবে কি করে? সেটা কি আন্তরিকতার সঙ্গে ভাবেন কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির সরকার? করের ধাক্কায় তো কোটি কোটি মানুষ রক্তশূন্য হচ্ছে৷ সেদিকে নিয়ন্ত্রণের কোনও লক্ষ্যই তো কোন সরকারের নেই?
পূর্র্ণঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থাতো চালু নেই৷ আংশিক রেশনে যা দেবার তা কিছুই দেওয়া হয় না৷
শুধু বোটে জিতবো কি করে এটাই তো একমাত্র লক্ষ্য দলগুলির৷ আর দলগুলিতো রাজনৈতিক কাজিয়ায় ‘অতি ওস্তাদ! মিথ্যাচারিতায় পটু প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রী ও তাদেরসাঙ্গপাঙ্গরা৷ এতে কি করে দেশ বাঁচবে? উৎসব, খেলাধূলায় দেশ খুবই নাকি এগুচ্ছে৷ কিন্তু বেকার সমস্যা মেটাতে না পারায় দেশ ডুবছে সেদিকে কেন সরকারের নজর নেই৷ এর সদুত্তর কে দেবে! শান্তিশৃঙ্খলা একেবারেই নষ্ট করা হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবেই৷ তাই গণতন্ত্রটাই এদেশে কি ব্যর্থ নয়? প্রত্যেক কর্মক্ষম ব্যষ্টি যাতে স্বনির্ভরশীল হয় তারজন্য ব্লকভিত্তিক সমবায় প্রথায় শিল্প গড়ে তোলার কথা শাসকদের মাথায় আসে না৷ অথচ এই কাজের দিকে যদি সরকার নজর দেয় ও তার মাধ্যমে ব্লক উন্নয়ন পরিকল্পনাকে সার্থক করে গড়ে তুলতে পারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার---এতে গণতন্ত্রও বাঁচবে ও নোতুন এক গণ অর্থনীতির জন্ম হবে৷
- Log in to post comments