এক (One)–এর তাৎপর্য্য

লেখক
শ্রীসমরেন্দ্র নাথ ভৌমিক

গণিত শাস্ত্রে ১–এর ভূমিকা অত্যন্ত গভীর তাৎপর্য্য পূর্ণ ভূমিকা৷ কোষই হ’ল যেমন জীব দেহের একক (Unit) তেমনি সমস্ত গাণিতিক সংখ্যার একক হ’ল এক One৷ আবার জলের উপাদান যেমন হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন, ঠিক তেমনি সমস্ত গাণিতিক সংখ্যার (Numerical Quantity) উপাদানও বলা যায়, ২ হ’ল দুটি ১–এর সমবায় অর্থাৎ দুটি ১ যোগ করে (1+1)=2  করা হয়েছে৷ সুতরাং দেখা যাচ্ছে ২ নামক সংখ্যাটির অস্তি ১–এর অস্তিত্ত্বের উপর নির্ভরশীল৷ এমনিভাবেই  তিনটি ১–এর সমবায় হ’ল ‘তিন’৷ অর্থাৎ যাকে আমরা ২বল্ছি আসলে তার মূল উপাদান হ’ল ‘‘এক’’৷ এইভাবে দেখা যায় যে,  ২০০, ৫০০, ১০০০ প্রভৃতি  যত বড় সংখ্যাই হোক না কেন, তার একক বা মূল উপাদান কিন্তু ‘এক’৷ এটা হ’ল এক–এর সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য্য৷ ২, ৩, ৪ প্রভৃতি সংখ্যাগুলির আসল পরিচিতি হ’ল ‘এক’৷ ২, ৩, ৪ কে অর্থাৎ আমরা যদি হিন্দু, মুসলীম, খ্রীষ্টান প্রভৃতি বলে অভিহিত করি, তবে যত বিভেদই আমাদের কাছে প্রতিয়ত হোক না কেন, আসলে ওই ‘এক’–এর মতই আমাদের আসল পরিচিতি হ’ল ‘মানুষ’৷ তাই, আজ থেকে ৭০০ বছর আগেই বাংলার কবি বড়ু চণ্ডিদাস লিখেছিলেন–

‘‘জগৎ জুড়ে এক জাতি আছে,

সে জাতির নাম মানুষ জাতি’’

মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাত রঞ্জন সরকার তাই বলেছেন–মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য৷ (Human society is one and indivisible) এখানেও সেই গাণিতিক ভাষা ‘‘এক’’–কে দিয়েই বোঝানো হয়েছে৷ শাস্ত্রে বলা হয়েছে –একমেবাদ্বিতীয়ম্৷ অর্থাৎ ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়৷ এখানেও ঈশ্বরকে একজন বোঝাবার জন্যে ‘‘এক’’–কে  গণিত থেকে নেওয়া হয়েছে৷

বহুর মিলনে এক হওয়াকে বলা যায় সংশ্লেষণ Synthisis তাই ১–এর আর একটি তাৎপর্য্য হল–‘‘এক’’ হল Synthetic Result.

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় তাঁর বর্ণপরিচয়ের দ্বিতীয় ভাগে প্রথমেই যে শব্দটা ব্যবহার করেছেন–তা হ’ল ঐক্য unity বর্ণপরিচয়ের প্রথম পরিচিতিটাই হ’ল ঐক্য অর্থাৎ একমত্ হয়ে, একসাথে, একের দিকে লক্ষ্য রেখে এগিয়ে চলার নির্দেশনা এখানে ধ্বনিত হয়েছে৷ এখানেও  দেখা যাচ্ছে এক প্সুন্দ্বগ্গ এর কথা৷ দ্বিতীয় শব্দটি হ’ল ‘‘বাক্য’’–অর্থাৎ ঐক্যের ভাব মনে রেখে বাক্য প্রয়োগ কর৷ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় এরূপ চিন্তা করে লিখেছিলেন কিনা আমার জানা নেই, তবুও গণিতের ১–এর অর্থ বা তাৎপর্য্য খুঁজতে খুঁজতে আমরা বিদ্যাসাগরের ঐক্যে পৌঁছে যাচ্ছি৷ আবার দেখি বেদ জানিয়েছে–

‘সংগচ্ছধ্বং সংবদ্ধ্বং সংবোমনাংসী জানতাম্, ......৷’

অর্থাৎ সকলে মিলে এক সাথে চল, এক সাথে এক কথা বল ও এক চিন্তা কর৷ এখানেও সেই একের চিন্তা ও একের ভাবনা৷  আরও দেখেছি, প্রাউটের মহান প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন–‘‘বিশ্বের নীতিবাদীরা এক হও৷’ এখানেও সেই গণিতের ভাষা ‘‘এক’’–কে দিয়ে একের সাথে মিলিত হওয়ার আহ্বান৷  সমস্ত সংখ্যাই যেমন এক (one) হতে উদ্ভুত হয়েছে, তেমনি আমরা সমস্ত জীব জগৎ, প্রাণীজগৎ ও উদ্ভিদ্ জগৎ প্রত্যেকেই সেই এক চৈতন্য সত্তা হতে এসেছি৷ সুতরাং কে চৈতন্য সত্তার সঙ্গে তুলনা করা যায়৷ আর আনন্দমার্গীদের পথ যখন ঐক্যের পথ, সেই এক পরমপুরুষই আমাদের চরম লক্ষ্য, তখন আমাদের সেই একের পথ ধরে ‘এক’–কে লক্ষ্য রেখে একেই মিশে যেতে হবে৷ তাই দেখা যায়–গণিতের ‘‘এক’’–এর মধ্যে সমাহিত রয়েছে পরমপুরুষ৷ আমরা গণিতবিদরা ওই এক (one) এর মধ্যে খুঁজে পাই আমাদের প্রাণের পরমপুরুষকে৷