সাধারণ নির্বাচনটাই হলো এদেশে বিশেষ করে শাসক দলগুলোর কাছে এক চরম পরীক্ষা অস্তিত্ব রক্ষায় নিজ নিজ গদী রক্ষার্থে৷ যদি গদী যায় তাহলে দলও শেষ হয়ে যাবে৷ তাই এই পরীক্ষায় দলগুলোর লক্ষ্যই হলো জয়ী হওয়া যেন তেন প্রকারেণ৷ ছলা, কলা আর প্রতারণাটা হলো জয় লাভের হাতিয়ার৷ আর নির্বাচনকে এমনভাবে নিয়ে যাওয়া যাতে প্রতিদ্বন্দ্বীরা হেরে যায়৷ তাই সব শাসক দল এটাকে নাম দিয়েছে খেলা৷ যেটা এক ধরণের পরিহাস! রাজধর্ম রাজনৈতিক দলগুলো পালনের কথা ভুলে যায় ইচ্ছাকৃত ভাবেই বিরোধী দলগুলিকে অবহেলা করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা! আর ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি দেওয়া যেগুলির মাত্র সামান্য ভগ্ণাংশ পালন করা হয় বোটের পর৷ জীতলে ২কোটি বেকারদের চাকুরী দেওয়া হবে এটা তাদের মন কি বাত৷ এটা প্রতিশ্রুতি নয় তাই দীর্ঘ ১০ বছরে কয়েক কোটি বেকারের কত জনের চাকুরী হয়েছে৷ এটা ছিল মোদির দেশের যুব সমাজের সঙ্গে প্রতারণা বিশেষ৷ এটা করাটা কি ঠিক হয়েছে? এবার এসেছে সেই---কথা ‘একদেশ একবোট’ এই দেশহলো ---যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার দেশ৷ বৈচিত্র্যেভরা এই উপমহাদেশ৷ উত্তর-দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে কিছুতেই এক নয় ভাষায়, কৃষ্টি সংস্কৃতিতে, এমনকিপূর্ব ও পশ্চিম ভারতের সঙ্গে হিন্দী গোবলয়েরও কোন যোগসূত্র নেই তেমনটা ভাষায় খাওয়া দাওয়া আচার অনুষ্ঠানে৷ তবু কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক এটা হয়েছে ইংরেজ শাসনের মুখ্যত কারণে৷ ভারতের সংবিধানটি মহাভারতের মতো বিরাট!
নানা ধর্মমত এই দেশে তাই সংবিধান ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ বলে ঘোষনা করেছেন৷ আর মহান বাবা সাহেব আম্বেদকর মহান ও জ্ঞানী ও গুনী ব্যষ্টিগন ২৪৮ জন সংবিধান রচয়িতা৷ এই বিজেপির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এটি খুব ভালো বুঝতেন তিনি হলেন মাননীয় অটল বিহারীজী৷ তিনি রাজধর্ম সুষ্ঠুভাবে পালন করতেন৷ বিরোধীদের মান্যতা দিতেন৷ সকল ভাষাকে সম্মান করতেন৷ হিন্দী ভাষা নিয়ে আর হিন্দুত্ববাদ নিয়ে মাতামাতি কোনদিনই করেননি৷ তাই তিনিই সার্থক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷ তাঁকে সারা ভারত সার্থক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে স্বীকার করেন৷ তাই মনে হয় বিজেপির সরকারকে সারা ভারত শাসনে জনগণ সুযোগ দেন৷ কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেদিকের ধার ধারেননি, বিরোধীদের তিনি অগ্রাহ্য করেন৷ দেশের কোটি কোটি দরিদ্র নাগরিকদের তিনি জি.এস.টি, অত্যধিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে ধনীদের সুযোগ দিয়ে দেশকে রক্তশূন্য করেছেন৷ তিনি বিচার বিভাগকে অমর্য্যাদা করে চলেছেন৷ সংখ্যাধিক্যের জোরে যা ইচ্ছা তাই করে চলেছেন! দলীয় স্বার্থে কতো টাকা ও শাসনের কারণে কতোটাকা খরচ হয়েছে৷ এ.ডি.আর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৭-১৮ থেকে ২১-২২ পর্যন্ত নির্বাচনী বন্ড বাবদ ৫,২৭২ কোটি নির্বাচনী বন্ড থেকে পেয়েছেন৷ আর সমস্ত দলগুলি পেয়েছে মাত্র ১৭৮৩ কোটি টাকা৷ এর হিসাব ও কারা এই টাকা দিয়েছেন তার সুষ্টু সংবাদ পাবার কি কোন নাগরিকদের সুযোগ আছে? যেহেতু এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাই এই ব্যাপার স্বচ্ছতা থাকাটা আবশ্যিক৷ কারণ রাজনৈতিক দলগুলি ও শাসকগণ দেশকে শাসক করেন তাঁদের দ্বারা যাঁরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি৷
অত্যন্ত লজ্জার কথা ভারতের মতো বিশাল দেশে সবদিক থেকে স্বচ্ছতা থাকাটাই কাম্য৷ কর্র্পেরেট সংস্থা যেগুলি মূলতঃ ধনীরাই মালিক তারাই রাজননৈতিক দলগুলি যারা সরকার চালায় তাদের হাতে রাখতে নিজেদের কারবার বৃদ্ধি করতেই শাসকদলকে আর্থিক সাহায্য করে৷ তাই প্রকারান্তরে তারাই হলো দেশ শাসনের নাটের গুরু৷ এব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য কোন সংস্থা নেই৷ ফলে গণতন্ত্রটাই যেন একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে এই উপমহাদেশ৷ দেখা যাচ্ছে সেই টাকার জোরেই নির্বাচন হচ্ছে আর টাকার জোরেই দেশের মুষ্টিমেয় ধনীরাই দেশের পরোক্ষভাবে শাসনের হাল ধরে আছে৷ মহামান্য আদালত তাই তদন্ত সংস্থাগুলিকে স্বাধীন সংস্থা করার কথা বলেন স্বচ্ছতা, বজায় রাখতে গণতন্ত্রে৷ তা হচ্ছে না! দলীয় রাজনীতিতে মুষ্টিমেয় লোক প্রথম থেকেই কর্ত্তৃত্ব করে আসছেন তাই নোংরা, দলবাজি, কুৎসা রটনা ইত্যাদিতে মত্ত ঐ রাজনৈতিক দলগুলি৷ তাই সরকার দলের, দলের জন্যও দলের দ্বারা আর জনগণ এখানে একধারে পড়ে মার খাচ্ছে আর শোষিত হচ্ছে! অত্যন্ত দুর্ভাগ্যর কথা দেশের দলীয় সরকারগুলো নির্বাচনে টাকার খেলা খেলছে বর্তমানে৷ দলীয় সদস্য সংখ্যার জোরে আর টাকার জোরে নির্বাচন নামক কর্মকাণ্ডটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে! এবারে তাই সরকার কেন্দ্রের হিন্দুত্ববাদীরা লোকসভা নির্বাচনে জিততে মরিয়া লোকসভায় ধবনি বোটে বিল পাশ করিয়ে একসঙ্গে রাজ্যগুলির ও কেন্দ্রের লোকসভার নির্বাচন করে সারাভারতে অধিকাংশ রাজ্যে ও কেন্দ্রে গদীতে আসার সচেষ্ট হবে৷ এটা প্রায় সব বিরোধী দল সন্দেহ করছে, কারণ বিরোধীদের তেমন টাকার জোর নেই, তেমনটা তারা ঐক্যবদ্ধও নয়৷ তবে ভারতের মহান সচেতন নাগরিকগণ এটা ভালো করে বুঝে নিয়েছেন তাই সিদ্ধান্ত তাঁরা তাঁদের মতো নেবেন৷ আজও প্রায় ৩০শতাংশ নাগরিক আছেন তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলি নোংরামী মোটেই পছন্দ করেন না৷ তাঁরা ধান্দাবাজদের উপযুক্ত জবাব দিতে তৈরী৷ দলীয় শাসকগণ কোন দিনই সংবিধানকে শ্রদ্ধা করে নি আর করার মানসিকতাটাও নেই৷ দলতন্ত্রে দলনেতা নেত্রী আর ধনীরাই খেলোয়াড়, তাই এই খেলাটা হবে অন্যভাবে৷ গণতন্ত্র বাঁচবে তখনই যখন শাসনে সৎনীতিবাদীরা এগিয়ে আসবে দেশকে উন্নত করতে আর জনসেবাকেই প্রাধান্য দিতে আর বুঝিয়ে দিতে হবে ধনতন্ত্র নয় সমাজতন্ত্রটাই হলো গণতন্ত্রের সার্থকতার চাবিকাঠি৷ তাই দেশের নীতিবাদীরা এক হও৷ মানুষ মানুষ ভাই ভাই৷ সমগ্র মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য৷ দলবাজরা এটাকেই সহ্য করে না৷
- Log in to post comments