গণতন্ত্রের আড়ালে

লেখক
পত্রিকা প্রতিনিধি

পঞ্চায়েত ভোটের দিন ঘোষনার  পর থেকেই শুরু হয়েছে সংঘাত৷ ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রাণ গেছে শাসক-বিরোধী সংঘাতে৷ গুলি বন্দুক বোমার আওয়াজ অপরদিকে রাজভবন থেকে আইনের দরবার---সক্রিয় সবাই৷ তবু গণতন্ত্রের মর্যাদা রক্ষা হচ্ছে কই! সন্দেহ, অবিশ্বাস ও ক্ষমতা দখলের অন্ধ আবেগে হিংসার আগুনে জ্বলছে রাজ্য৷ জনগণ যাতে শান্তিতে বোট দিতে পারেন  রাজনৈতিক দলের নেতাদের তার দায়িত্ব নেওয়া উচিত৷ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রত্যেকেরই মর্যাদা দেওয়া উচিত৷ মানুষ যাতে শান্তিতে ও নির্বাধায় ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সেটা দেখা উচিত৷

বর্তমানে দেশে গণতন্ত্রের নামে যে-টা চলছে তাকে গোষ্ঠীতন্ত্র বলা যায়৷ গণতন্ত্র সম্পর্কে বলা হয়ে থাকে--- জনগণের জন্যে, জনগণের দ্বারা জনগণের সরকার৷ তবে ভারতবর্ষে জনগণের মর্যাদা শুধুমাত্র বোটের দিন৷ তাও অনেক সময় রাজনৈতিক মস্তানদের দাদাগিরিতে জনগণ স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন না৷

গণতন্ত্রকে সার্থক করে তুলতে হলে প্রাউটের দৃষ্টিতে জনগণের বৃহত্তর অংশের সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন৷ কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতাদর্শ কর্মসূচী সম্পর্কে জনগণ খুব একটা সচেতন নয়৷ এমন কি নিজের ও সামুহিক সমস্যা সম্পর্কেও চেতনার অভাব আছে জনগণের৷ রাজনৈতিক দলগুলি ঘটা করে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করে৷ কিন্তু অধিকাংশ বোটারগণই তাতে কোনো আগ্রহ দেখায় না৷ ইস্তাহার বিষয়টা কি সেটাই অনেকে বোঝে না৷ তারই সুযোগ নিয়ে চতুর রাজনৈতিক নেতারা প্রচার কৌশলে জনগণকে প্রভাবিত করে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ব্যষ্টি ও গোষ্ঠী স্বার্থে ক্ষমতার অব্যবহার করে থাকে৷ তাছাড়া গণতন্ত্রে যদিও সংখ্যাধিক্যের শাসনের কথা বলা হয়ে থাকে, কিন্তু ভারতের মতো বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনদলই জনগণের প্রকৃত সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় না৷ আইন পরিষদে আসন সংখ্যার ভিত্তিতে গরিষ্ঠতা পেলেই ক্ষমতা অর্জনের অধিকার পেয়ে যায়৷ বর্তমান কেন্দ্রীয় শাসকদল আইনসভায়  তিনশোর বেশি আসন পেয়ে একক গরিষ্ঠতা পেলেও মাত্র ৩৮ শতাংশ বোট পেয়েছেন৷ তাই একে কী জনগণের সরকার বলা যায়৷ তবু একবার ক্ষমতা দখল করতে পারলে পরবর্তীতে আমলা প্রশাসন, এমনকি বিচার বিভাগ পর্যন্ত নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার চেষ্টা করে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে৷

গণতন্ত্রে এইরকম অজস্র ত্রুটি বিচ্যুতি আছে৷ এগুলি দূর করতে না পারলে সার্থক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়৷ এসম্পর্কে প্রাউট প্রবক্তা কতকগুলি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, দেশের বিদগ্দজনের উচিত প্রাউটের চর্র্চ করা ও সার্থক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলায় রত হওয়া৷ সদা সতর্ক থাকবে হবে গণতন্ত্র যাতে দানবতন্ত্রে পরিণত না হয়৷

সব সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ প্রাউটের সদ্‌বিপ্রতন্ত্র৷  কিন্তু এ বিষয়ে মানুষ সচেতন হয়ে না উঠলে প্রাউট প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়৷ প্রাউট প্রবক্তার কথায়--- ‘‘প্রাউটের সদবিপ্রতন্ত্রই একমাত্র মুশকিল আসান.... তবে সদ্‌বিপ্র তন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হবে অনেক বৈদুষ্যের মস্তিষ্ক চালনার ফলশ্রুতিতে৷ তা অসির বলে মসীর বলে পেশীর বলে সম্ভব নয়৷’’ তাই প্রাউটিষ্টদের এখন কাজ মানুষকে শিক্ষিত ও সচেতন করা৷ প্রাউটিষ্টদের এখন প্রধান কাজই মানুষের মধ্যে এসে শিক্ষার বিস্তার করা, গণতন্ত্রের আড়ালে দানবতন্ত্রের বিনাশ করা৷