প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়তে চান৷ তিনি তাঁর এই সংকল্পের কথা দেশে বিদেশে সর্বত্র ব্যক্ত করেছেন ও বিদেশী কোম্পানীগুলিকে এদেশে ঢালাও অহ্বান জানিয়েছেন তাঁর এই সংকল্প পূরণ করতে৷ তিনি বলেছেন, ইন্টারনেটের সুবিধা আমজনতাকে পাইয়ে দেওয়া হবে৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরকারী পরিষেবাকে জনসাধারণের হাতের মুঠোয় আনবেন তিনি৷ ইন্টারনেটের মাধ্যমে উন্নত শিক্ষণ ও উন্নত চিকিৎসাকে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেবার সুভাষিত বাণী তিনি সবাইকে শুনিয়েছেন৷ বিদেশী ইলেক্ট্রনিক কোম্পানীগুলি তাঁর এই মহৎ সংকল্পের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন৷
এখন প্রশ্ণ, দেশে কত শতাংশ মানুষ ইনটারনেট ব্যবহার করে৷ বড় জোর ১০ শতাংশ মানুষ৷ প্রধানমন্ত্রী মোদীর সংকল্পের অর্থ দেশের এই দশ শতাংশ মানুষের কাছে সরকারী পরিষেবা শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ সহজে পৌঁছে দেওয়া৷ আর দেশের যে ৯০শতাংশ মানুষ ক্রমেই অন্ধকারে তলিয়ে যাবে, এটা ভাববার মত পরিস্থিতি ব্যস্ততম প্রধামন্ত্রীর মোদীর নেই৷ যে দেশের অর্ধাংশ মানুষ অর্ধাহারে,অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, অশিক্ষার অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা তাদের জন্য নয়৷ দেশে যে চরম বেকার সমস্যা, এই বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবার চিন্তা প্রধানমন্ত্রীর মাথায় নেই৷ ১০শতাংশ মানুষের কল্যাণে তিনি বিদেশী কোম্পানীদের ঢালাও নিমন্ত্রণ করে দেশে আনছেন৷ তারা যে ক্ষুধার্ত, অশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষের সামনে হাজারো কিসিমের মোবাইল আর ইলেক্ট্রনিক্সের রঙীন ফানুস উড়িয়ে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা লুটে নিয়ে চলে যাবে, দেশকে শোষণ করে রক্তহীন করে দেবে, সে চিন্তা মোদীর নেই৷ দেশকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর জন্যে, স্বয়ং- সম্পূর্ণ করে গড়ে তোলার জন্যে মোদীর কোন প্রয়াসই নেই৷ বিদেশী পুঁজিবাদীদের কাছে দেশকে বিক্রি করে দেওয়ার জন্যে যেন তিনি অবিরত নিলাম ডেকে চলেছেন৷
কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত ছিল, বরং বিপুল সংখ্যক গরীব দেশবাসীর হাতে কীভাবে ক্রয়ক্ষমতা আসে, তাদের জীবনের নূ্যনতম প্রয়োজন পূর্ত্তির গ্যারেণ্টি তারা পায়, তার ব্যবস্থা করা৷ এ জন্যে তাঁর উচিত কৃষিপ্রধান এই দেশের অনুন্নত জেলাগুলিতে ব্লকে ব্লকে ব্লক ভিত্তিক পরিকল্পনা করে ব্যাপক ভাবে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলে সর্ব সাধারণের কর্মসংস্থানকে সুনিশ্চিত করা৷ মোবাইল,কম্পিউটর নয়---আগে তাদের অর্থ দাও, বস্ত্র দাও, সুশিক্ষা দাও, সুচিকিৎসা দাও, তাদের মাথা গোঁজবার উপায় করে দাও, তাদের মধ্যে আত্মসম্মান বোধ, আত্মবিশ্বাস বোধ জাগাও৷ যে সরকার জনসাধারণের এই মৌলিক প্রয়োজন পূর্ত্তিকে অগ্রাধিকার দেয় না, তাকে কোনোদিন জনগণের সরকার, বা জনকল্যাণকামী সরকার বলা চলেনা৷ তারা ধনিক শ্রেণীর প্রতিনিধি, গণতন্ত্রের নামে তারা ধনিকতন্ত্র বা বণিকতন্ত্রেরই ফেরিওয়ালা৷
জনগণকে দেশী-বিদেশী ধনিক শ্রেণীর শোষণ থেকে বাঁচতে হলে একমাত্র সমবায়ের বুনিয়াদকেই সুদৃঢ় করতে হবে৷ সবার পুঁজিকে সুসংহত করে শ্রমিকদেরই মালিকানার ভিত্তিতে ব্যাপক ভাবে উৎপাদক সমবায় ও উপভোক্তা সমবায় গড়ে তুলতে হবে৷ সেটাই সমাজের যথার্থ বৈপ্লবিক উন্নয়ন প্রকল্প৷ উন্নয়নের ছদ্মবেশে ব্যাপক শোষণকে আহ্বান করে খাল কেটে কুমীর আনা যেন না হয়৷
- Log in to post comments