গরমে রোগ–ব্যাধি ও নানা সমস্যা

লেখক
নিজস্ব প্রতিনিধি

বসন্ত ঋতু বিদায় নিয়ে এই বাঙলায় গ্রীষ্ম আসছে৷ গ্রীষ্মকাল মানেই গরমকাল৷ গরমে শারীরিক অস্বস্তি ও নানান রোগ–ব্যাধি দেখা দেয়৷ বলতে গেলে ছয় ঋতুর প্রভাব এই পশ্চিমবঙ্গে দেখা যায়৷ আর প্রতিটি ঋতুর আগমনই আমাদের কাছে আনন্দদায়ক৷ তবে প্রতিটি ঋতুর মত গ্রীষ্মেরও ভাল ও মন্দ দু’দিক রয়েছে৷ একটু সচেতন থাকলে গ্রীষ্মের এই মন্দ অর্থাৎ রোগ–ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে চিকিৎসকদের অভিমত৷ এই গরমে চলতে ফিরতে সকলের অসুবিধা হয় ও আমরা সবাই কম বেশী শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি৷ সময়মত সচেতন না হলে অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ সাধারণত অতিরিক্ত গরমে যে সব সমস্যা দেখা দিতে পারে, সেগুলির কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হ’ল–

হিট ষ্ট্রোক

চারিদিকে ভীষণ গরম৷ এই গরমে সামান্য পরিমাণ জল আমাদের স্বস্তি দিতে পারে৷ গ্রীষ্মের দুপুরে তাপমাত্রা কখনও কখনও ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়৷ বাতাসের আর্দ্রতাও বেড়ে যায় দারুণভাবে৷ প্রখর রোদে এই রকম গরমে বাইরে যেতে ইচ্ছা না থাকলেও বিভিন্ন কাজে বাইরে যেতেই হয়৷ তার ফলে গরমে হিট ষ্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়৷ তাই হিট ষ্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে কিছু জরুরী সর্তকতা মেনে চলা উচিত৷

হিট ষ্ট্রোক কি?

হিট ষ্ট্রোক এক ধরনের হাইপারথার্মিয়া৷ হাইপার হচ্ছে অধিক মাত্রা, আর থার্মিয়া মানে তাপ৷ শরীরে অধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকেই বলা হিট ষ্ট্রোক৷ আমাদের শরীরের ভেতরে নানা রাসায়নিক ক্রিয়ার কারণে সব সময় তাপ সৃষ্টি হতে থাকে৷ ঘামের সাহায্যে সেই তাপ শরীর থেকে বেড়িয়ে যায়৷ কিন্তু এক টানা রোদে থাকলে গরমে ঘামের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যায়৷ শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যাওয়ায় ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি হয়৷ ঘামের সঙ্গে লবণ বেরিয়ে যাওয়াতে লবণের ঘাটতি দেখা দেয়৷ যার ফলে শরীরকে করে তোলে অবসন্ন ও পরিশ্রান্ত৷ এতে মাথাঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন অনেকেই৷ তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে মৃত্যুও হওয়া অস্বাভাবিক নয়৷ বাচ্চা, বয়স্ক ও যারা ওবেসিটিতে ভুগছে তারা হিট ষ্ট্রোকে সহজেই আক্রান্ত হয়৷

প্রতিকার

যতটুকু সম্ভব এই গরমে রোদে কম বের হতে হবে৷ একান্তই বের হতে হলে সঙ্গে জলের বোতল রাখা দরকার ও মাঝে মাঝে জলপান করা উচিত৷ তা না হলে শরীর অবসন্ন মনে হওয়া মাত্রই ছায়াযুক্ত বা শীতল কোন স্থানে বিশ্রাম করা৷ যদি অবস্থা খারাপ মনে হয় তাহলে ঠাণ্ডা জলে ভেজানো কাপড় শরীর মুছিয়ে দিতে হবে৷ খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে, যাতে শরীরের লবণ ও জলের শূণ্যতা দূর করতে পারে৷ অজ্ঞান হয়ে গেলে বা মাথা ঘোরালে মাথায় জল ঢ়ালতে হবে৷ তাতেও যদি অবস্থার উন্নতি না হয়, তাহলে হিট ষ্ট্রোকে আক্রান্তকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷

পেটের অসুখ

গরমের সময় অত্যধিক তাপমাত্রায় খাদ্য দ্রব্য তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়৷ এছাড়া গরম থেকে স্বস্তি পাওয়ার জন্যে চলার পথে আমরা অনেক কিছুই খেয়ে ফেলি, যেগুলিতে হয়ত রোগ জীবাণু থাকতে পারে৷ গরমে জল সংকটের কারণে বাসায় বা হোটেলে থালা –বাসন ঠিক মত পরিষ্কার করা হয় না৷ এসব কারণে অনেকই পেটের অসুখে আক্রান্ত হয়৷ যাকে আমরা বলি ফুড পয়জনিং৷ এ থেকে বমি, পায়খানা বা ডায়রিয়া সহ অনেক রোগেই আমরা আক্রান্ত হতে পারি৷

প্রতিকার

পেটের অসুখ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের বাইরের খোলা খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে৷ একান্তই যদি বাইরে খেতে হয় তবে ভাল হোটেলে বা রেস্টুরেণ্টে খাওয়া ভাল৷ বাসি খাবার একদম খাওয়া যাবে না৷ খাবার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে৷ এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ জল, শরবত বা ফলের রস পান করতে হবে৷ পাতলা পায়খানা শুরু হলে স্যালাইন খেতে হবে৷ অবস্থা বেশী খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে৷

ত্বকের সমস্যা

গরমের সময় অনেকেই ত্বকের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়৷ ঘাম থেকে ঘামাচি হওয়া, তারপর সেই ঘামাচি চুলকাতে গিয়ে নখের আঁচড়ে ঘা তৈরী হয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে৷ আবার গরমে জলের অভাব থাকায় ঠিক মত স্নান করতে না পারার ফলে শরীর অপরিষ্কার থাকে৷ ফলে চর্মরোগের সৃষ্টি হয়৷ সেইসঙ্গে গরমে পুড়ে ত্বক কালো হওয়া বা অনেকের ত্বকে ছোপ ছোপ দাগও পড়ে৷

প্রতিকার

ত্বকের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে হলে রোদে বেশী ঘোরাঘুরি করা উচিত নয়৷ প্রতিদিন বাইরে থেকে আসার পর সাবান দিয়ে ভালো করে স্নান করা উচিত৷ বাইরে বের হওয়া সময় ছাতা ব্যবহার করতে হবে৷ সবসময় হালকা রঙের কাপড় ব্যবহার করতে হবে৷ ভাল প্রতিষ্ঠানের সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে৷ চোখে সানগ্লাস ব্যবহার করা যেতে পারে৷ আর ঘামাচি হলে ঘামাচি পাউডার লাগাতে হবে৷ গরমে অনেকের সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির সমস্যা দেখা দেয়৷ সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷ গরমে অসুস্থ হয়ে পড়া যেমন স্বাভাবিক, তেমনি একটু সাবধান থাকলে সুস্থ থাকা অসম্ভব নয়৷

হিট একজর্সন

হিট ষ্ট্রোক ও হিট একজর্সনের লক্ষণগুলো প্রায় এক ধরনের৷ প্রচণ্ড গরমে একটানা ৩–৪ ঘণ্টা থাকলে এই রোগ দেখা দেয়৷ বমি ভাব, মাথা ঘোরা, মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া–এ সবই হিট একজর্সনের লক্ষণ৷

প্রতিকার

রোদে কাজ করতে হলে কাজের মাঝে মাঝেই ব্রেক নিয়ে ছায়ায় বসুন৷ মাথায় টুপি ব্যবহার করা যেতে পারে৷ মাঝে মাঝে জল খেতে হবে৷

সান বার্ন

সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি ত্বকের ও ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে৷ তার ফলেই গ্রীষ্মকালে ত্বকে দেখা দেয় সান বার্ন৷ এই সান বার্ণ স্কিন ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দেয়৷ সান বার্ন থেকে বাঁচতে হলে ভাল কোম্পানীর ভালো লোশন মুখ, গলা, হাতে লাগাবেন৷ বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা অবশ্য সঙ্গে রাখবেন৷