শীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়৷ আমাদের শরীরে যাবতীয় দূষিত পদার্থ রেচন আকারে ছেঁকে বের করে দেওয়া কিডনির কাজ৷ দীর্ঘদিন জমে থাকা পদার্থ কিডনিতে অতি ছোট ক্ষুদ্র পাথর আকার ধারণ করে থাকে৷ ধীরে ধীরে বড় আকার হয় ও কিডনি শরীরের ফিল্টারের কাজ করে তা বাধাপ্রাপ্ত হয় ও ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়৷ মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের কিডনিতে পাথরের প্রবণতা বেশী৷ যারা শুষ্ক অঞ্চলে বাস করেন তাদের ক্ষেত্রে পাথর হওয়ার প্রবণতা বেশী ও তা জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷ শীতকালে প্রতিটি মানুষই জল কম খান৷ শীতে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার দরুণ ও আবহাওয়া শুষ্ক বলে শরীর থেকে তরল পদার্থ বেশী নির্গত হয় তাই গ্রীষ্মের তুলনায় শীতে বেশী পরিমাণ জল খাওয়া দরকার৷ নয়তো বিভিন্ন রোগ দেখা দেবে৷ শীতে শরীর শুষ্ক থাকে ও রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত হয়৷ এই সময় খনিজ পদার্থজাত খাবার শরীরের বিশেষ প্রয়োজন৷ সিজন্যাল্ ফল, ফলের রস, জুস, সবজি খাদ্যের সাথে থাকা দরকার৷ প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস ইষদুষ্ণ জল খাবেন৷ পরিমাপ ৩০০ থেকে ৪০০ মি.লি. ও রাত্রে শোবার আগে একগ্লাস ইষদুষ্ণ জল খেলে অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, এতে যারা মাথার যন্ত্রণায় ভোগেন তারা ভাল ফল পাবেন৷ শরীরে উষ্ণ গরম জলের উপস্থিতি শরীরে টক্সিন কমিয়ে দিয়ে শরীরকে টক্সিন মুক্ত রাখায় সাহায্য করে৷ শীতে যদি অনেকের জল খাবার প্রবণতা না থাকে তবে অন্য ভাবে খেতে পারেন, তাতে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাবেন৷
কতগুলি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
১) যেমন দু’চামচ জোয়ান আগের দিন রাত্রের ভিজিয়ে রাখবেন৷ পরের দিন সকালে জলের সাথে খাবেন৷
২) রাতে পরিমাণ মত ত্রিফলা (আমলকি, হরতকী, বহেরা) ভিজিয়ে রাখুন৷ সকালে খালি পেটে জলটি ছেঁকে নিয়ে সামান্য পাতিনেবুর রস মিছিয়ে পান করুন৷
৩) যাদের সুগার আছে, হাত-পা জ্বালা করে তারা প্রতিদিন রাতে এক চা-চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন৷ সকালে খালি পেটে ওই জল খান৷
৪৷ শরীরে মেদ কমাবার জন্য নেবু, নুন মিশিয়ে জল খান৷
৫৷ পরিমাণমত মধু মেশানো জল খান৷ শরীরে এনার্জি বাড়বে৷
৬৷ কালমেঘ পাতা ভিজিয়ে জল খান৷ লিভার ভাল থাকবে৷ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে৷
৭৷ ডাবের জলে খানিজ পদার্থ বেশী থাকায় শরীরের পক্ষে ডাবের জল দারুণ উপকারী৷
৮৷ বাতাসা মেশানো জল পেটকে ঠাণ্ডা রাখে৷ বাতাসার পরিবর্তে (সুগার না থাকলে) মিশ্রি মেশানো জল খান৷
শুদ্ধ পানীয় জল পান করলে স্বাদ ও তৃপ্তি পাওয়া যায়৷
কথা প্রসঙ্গে ডায়াটেশিয়ান পৌলমী মণ্ডল (গার্ডেনরিচ) এক আলোচনায় তিনি বলেন প্রাণ ধারণের জন্য অক্সিজেনের পরেই জলের প্রয়োজন৷ আমাদের দেহে দুই-তৃতীয়াংশ জল৷ শিশু, মহিলা ও রোগা মানুষের তুলনায় মোটা মানুষের দেহে অধিক ফ্যাট থাকে ফলে তাদের জলপানের প্রবণতা কম হয়৷ তাদের শরীরে ফ্যাট জাতীয় খাদ্য পরিপাক জলের মাধ্যমে দ্রবীভূত হয় ও দেহের বিভিন্ন কোষে পৌঁছায় ফলে প্রোটোপ্লাজামা রক্তরস গঠনে সাহায্য করে৷ গ্রীষ্মকালে উষ্ণ-আদ্র আবহাওয়ার দরুন শরীর থেকে বেশী ঘাম বেরিয়ে যায়৷ এছাড়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে মল-মূত্রর সঙ্গে জল বেরিয়ে যায়৷ ফলে গ্রীষ্মকালে খনিজ পদার্থ বেশী ক্ষয় হয়৷ শরীরের জল ধারণেণ ক্ষমতা কম হওয়ায় বৃক্ক গহ্বর অথবা মূত্রাশয়ে দুষিত পদার্থ বের না হওয়ার ফলে ওই পদার্থ জমা হয়ে পাথরে পরিণত হয় তা পূর্বেও বলা হয়েছে৷ তাই সবসময় শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় সমপরিমাণ জল পান করা উচিত৷
- Log in to post comments