দিল্লীর মসনদের স্বার্থে বাঙলাকে বলি দেওয়ার রেওয়াজ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্টের কালরাত্রি থেকে শুরু হয়েছে৷ বাঙলার প্রতি বঞ্চনাও শুরু হয় ওই রাত থেকেই৷ কিন্তু রাজ্যের কংগ্রেস সরকার কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে কোন প্রতিবাদ বা আন্দোলনের পথে যায়নি৷ পরবর্তীকালে রাজ্যে সিপিএমের শাসনে নানা অত্যাচার ও অবিচার হলেও বিরোধী কংগ্রেস চুপ থেকেছে, কারণ কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারকে টিকিয়ে রাখতে দিল্লীতে সিপিএমের সাহায্য প্রয়োজন ছিল৷
নেহেরু থেকে নরেনমোদি দিল্লীর কোন সরকারই বাঙলা ও বাঙালীর বন্ধু নয়৷ তাই বাঙলার ওপর যে শোষণ নেহেরুর হাত ধরে শুরু হয়েছিল তা আজ আরও তীব্র হয়েছে৷ এই শোষণ ও বঞ্চনার কালে ১৬-১৭বছর বাদ দিলে বাকি সময়টা দিল্লীতে কংগ্রেস শাসন করেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ ৬৫ বছর কংগ্রেস সিপিএম দিল্লীকে তোষণ করে বাঙলাকে শাসন করে গেছে৷ সিপিএমের ৩৪ বছরের শাসনে কংগ্রেস সিপিএম সংঘাতে কয়েক হাজার কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছে, কংগ্রেসীদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ আজ যারা তৃণমূলের অত্যাচার নিয়ে রাজ্যে চিল-চিৎকার করে সেই অধীর বাবুরা সেদিন কিন্তু নীরব থেকেছে দিল্লীর স্বার্থে৷ সিপিএমের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলনই করেনি৷ আর আজতো একেবারে কোলাকুলি ঢলাঢলি৷
বর্ধমানের সাঁইবাড়িতে সন্তানকে খুন করে মায়ের মুখে রক্ত তুলে দেওয়া থেকে শুরু করে হাওড়া জেলার আমতা কেন্দুয়ায় হাতে ভোট দেওয়ার জন্যে হাত কেটে দেওয়া অধীর বাবুরা সব ভুলে গেছে৷ ব্যতিক্রমী একমাত্র মমতা ব্যানার্জী৷ কংগ্রেসকে সিপিএমের বি-টিম বলে অভিযোগ তুলে কংগ্রেস ছেড়ে তূণমূল কংগ্রেস ঘটন করেন৷ স্বাধীনতার পর এই প্রথম রাজ্যে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে পৃথক দল ঘটন করে এত বড় সাফল্য আর কেউ পায়নি৷ প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি, প্রণব মুখার্জীরাও কংগ্রেস থেকে বিতাড়িত হয়ে পৃথক দল করেছিলেন, কিন্তু জনসমর্থন না পেয়ে আবার সেই কংগ্রেসেই ফিরে যায়৷ মমতার দাপটে পশ্চিমবঙ্গে আজ কংগ্রেস সিপিএম সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে৷
কিন্তু আবার সেই দিল্লীর রাজনীতির স্বার্থে কংগ্রেস সিপিএম তৃণমূল একজোটে সামিল হয়েছে৷ লক্ষ্য দিল্লী থেকে মোদি সরকারকে পরাজিত করা৷ দিল্লী থেকে মোদির বিদায় যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল৷ কিন্তু ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে বাঙালীর কি কোন কল্যাণ হবে! ৭৭ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে স্পষ্টই বলা যায়---হবে না৷ তাহলে রাজ্যের স্বার্থ উপেক্ষা করে দিল্লীর গদি রক্ষা করতে বাঙালী আর কত বলি হবে?
জাতীয় কংগ্রেসের গান্ধী, পটেল, নেহেরুর ঘৃণ্য চক্রান্তের শিকার হয়ে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস সভাপতির পদ ও কংগ্রেস ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন৷ অসুস্থ ব্যথিত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুভাষচন্দ্রকে এক ঐতিহাসিক পত্রে আহ্বান জানিয়েছিলেন--- ‘‘সুভাষচন্দ্র, বাঙালী কবি আমি, বাংলাদেশের হয়ে তোমাকে দেশনায়কের পদে বরণ করি৷’’ ভারতবর্ষের স্বাধীনতার স্বপ্ণে মগ্ণ সুভাষচন্দ্র সেদিন বিশ্বকবির আহ্বানে সাড়া দিতে পারেননি৷ তার পরিণতি বাঙলা আজও ভোগ করছে৷
২০২৪শে ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে দেশের কতটা ভাল হবে সেটা সময় বলবে কিন্তু একটা কথা ভাবতে ভয় হয় --- জোট সরকার শপথ নেওয়ার পরই রাজ্যে তৃণমূলকে শেষ করার প্রয়াস শুরু করবে কংগ্রেস৷ একাজে তার দোসর হবে সিপিএম৷ বাঙালী যে তিমিরে আছে সেই তিমিরেই থাকবে৷ পশ্চিমবঙ্গ তথা বাঙালী জনগোষ্ঠীর কল্যাণ কংগ্রেস বিজেপি কেউই চায়না৷ বিজেপির লক্ষ্য চাপে ফেলে তৃণমূলকে পাশে রাখা, কংগ্রেসের লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি থেকে তৃণমূলকে শেষ করা৷ তাই ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে ভারতীয় বাঙালীরদের কাছে চরম সংকটময় পরিস্থিতি তৈরী হবে৷ বাঙালী কি আবার জোটের খাঁড়ায় বলি হবে, নাকি ভারতে বাঙালীর অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইতে নামবে!
- Log in to post comments