ভারত একটি কৃষি প্রধান দেশ৷ ভারতের বেশ কয়েকটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কৃষি ও কর্ষকদের বেঁচে থাকার জন্য স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা নেই৷ সেই কারণে কৃষিজীবিরা ৫০০০/১০০০০ টাকার ব্যাঙ্ক ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে তাদের ভিটেমাটি বা নূ্যনতম সহায় সম্বলটুকু ক্রোক হওয়ার ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে৷ দিনে দিনে কর্ষকদের মৃত্যুর মিছিল লম্বা হয়ে চলেছে৷ অথচ ব্যষ্টিগত পুঁজিবাদীরা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের হাতে, পার্টি বা ব্যাষ্টিগত ফান্ডে টাকার একটি অংশ জমা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাচ্ছে৷ তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে কত রকমের আইন ! ঋণ মুকুব করে বড় বড় আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতারা তাদেরকে রক্ষা করতে চৌকিদারী করে চলেছে৷ পাশাপাশি দেখুন যারা দেশের সকল নাগরিকদের অন্ন জোগাড় করে চলেছে সেই অভাগা কর্ষকদের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক নেতাদের কিছু বিলাপ ও একে অপরের দোষারোপ ছাড়া কিছুই করছে না৷ তাও লোক দেখানো করে থাকে দলীয় স্বার্থে৷
আসলে ভারতের নেতাদের হাতে কোনো প্রকারের সমাধান নেই৷ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষিনীতি লোকসভার অধিবেশনে পাস করার আগেই কৃষি ও বিপনন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন৷ পঞ্জাব হরিয়ানার কর্ষকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছে৷ মাননীয়া মন্ত্রী বলেছেন এই কৃষিনীতি পূঁূজিবাদীদের পক্ষে, সাধারণ কর্ষকদের আত্মহত্যা অনেক গুণ বেড়ে যাবে৷ বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার সারা ভারতের ১৫/২০ জন পুঁজিবাদীদের বাঁচাতে রাজশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভারতের স্বাধীন কৃষি ক্ষেত্রকে অশুভ শক্তির হাতে তুলে দিয়ে আর একটি খাদ্যের সংকটে ফেলতে চলেছে৷ কৃষি ও কর্ষকদের আসল সমস্যাটি কী ও তার সমাধানটা কোথায়? কৃষি ও কর্ষকদের কথা চিন্তা করে ‘‘প্রাউট’’ (সামাজিক অর্থনৈতিক দর্শন) প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার প্রথমেই বলেছেন---
কৃষিকে বাঁচাতে হলে কৃষি ও শিল্পের মধ্যে সুসামঞ্জস্য পরিকল্পনা চাই৷ প্রথমেই কৃষিকে শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে৷ অর্থাৎ যেভাবে শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও বাজারে বিক্রয় মূল্য নির্র্ধরণ করা হয় কৃষিক্ষেত্রে ও কৃষি উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয় মূল্য নির্র্ধরণ করতে হবে৷ কৃষিকে কেন্দ্র করে ব্লকে ব্লকে কৃষিভিত্তিক ও কৃষি সহায়ক শিল্পের মাধ্যমে কর্ষকদের আত্মনির্ভরশীল করতে হবে৷ এরজন্য শ্রদ্ধেয় প্রাউট প্রবক্তা বলেছেন--- কৃষি ও কর্ষকদের উন্নতি করতে হলে কৃষি ও শিল্পের মধ্যে সুসন্তুলিত ও সুসামঞ্জস্য পরিকল্পনা দরকার৷ তাহা হলো কৃষিক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ কৃষিজীবী, কৃষিকে কেন্দ্র করে কৃষিভিত্তিক শিল্পে ও কৃষি সহায়ক শিল্পে ২০ শতাংশ করে ৷ ব্যবসায় ১০ শতাংশ ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যেমন অফিস বা ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ মানুষকে কাজে লাগিয়ে ১০০ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান করে রাষ্ট্রের আর্থিক উন্নতি করা যাবে৷ আজকের প্রত্যেকটি রাজনৈতিক নেতারা অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বেশী করে লোক নিয়োগ করতে উৎসাহিত, কারণ তাদেরকে সরকারী কাজ অপেক্ষা রাজনৈতিকভাবে দলের স্বার্থে বেশী ব্যবহার করা যাবে৷ রাষ্ট্রের আর্থিক উন্নতি করতে হলে এই মূহূর্তে কৃষির ওপর কর্মী সংখ্যা কমিয়ে পরিকল্পনার প্রথমেই কিছু নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষের দ্বারা সমবায় তৈরী করে গ্রামীন অর্থনীতি শক্তিশালী করতে হবে৷ কৃষি মানেই জমি, তাই ওই জমির প্রতি ইঞ্চিতে জলসেচের ব্যবস্থা করতে হবে৷ কোন অবস্থায় কৃষি জমিকে শিল্প গড়ার নামে অধিগ্রহণ করে গ্রামীন অর্থনৈতিক বুনিয়াদ ধবংস করা চলবে না৷
প্রাউট প্রবক্তা আরও বলেছেন যে জনসংখ্যার সঙ্গে আয়ের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে কৃষি জমির পরিমাণ বাড়াতে হবে৷ কর্ষকদের আর্থিক নিশ্চয়তা আনতে হলে,কর্ষক সমাজের অর্থনৈতিক বুনিয়াদে ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে জমির ঢাল বা সমতলের পরিস্থিতি অনুযায়ী একাধিক জমি মালিকের মালিকানা সত্তাকে রক্ষা করে, উৎপাদক সমবায় এর আওতায় আনলে মধ্যকার জমির ভেতরের আল বা বাউন্ডারি ভেঙে দিয়ে বড় বড় প্লট তৈরী করে জমির পরিমাণ বাড়াতে হবে ও আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে ব্যবহার করলে শস্যের ফলন বেশী পাওয়া যাবে ও উৎপাদন ব্যয় কম হবে৷ এরফলে ভাগচাষী, ক্ষুদ্র চাষি, বৃহৎ চাষি ও ক্ষেতমজুররা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে৷ উক্ত উৎপাদিত পণ্য সঙ্গে সঙ্গে বাজারজাত না করে, উৎপাদক সমবায় -এর নামে একটি সমবায় তৈরী করে তাদের হাতে হস্তান্তরিত করলে তারা ওই সম্পদকে গোডাউনজাত করে রাখলে কর্ষকরা বেশী লাভবান হবে৷ উক্ত সময় কর্ষকদের সমবায় সমিতি ব্যষ্টিগত অর্থ বা ব্যাঙ্কের তহবিল ঘটন করে নানা প্রয়োজনে কর্ষকদের সাহায্য করতে পারবে৷ এই পরিকল্পনার ফলে মধ্যেপন্থা ফোঁড়েরা কর্ষকদের ওপর আর কোন দাদাগিরি করতে পারবে না৷ উৎপাদিত পণ্যের দ্বারা কুটির শিল্প গড়ে গ্রামের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ সাধারণ মানুষের হাতে স্থানান্তরিত হলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে ও ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে৷ শ্রদ্ধেয় শ্রীসরকার আরো বলেছেন এটা করতে হলে একটি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা করে শহর ও গ্রামের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেই সকল অঞ্চলের শ্রীবৃদ্ধি ঘটাতে চাই ব্লকভিত্তিক পরিকল্পনা৷ আর এই পরিকল্পনার ফলে যুবক যুবতীরা অর্থনৈতিক অভাবে শহর মুখী হবে না৷ যে অঞ্চল যতবেশী আর্থিক সাবলম্বী হবে সেই অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক দলদাসে পরিণত হতে হবে না৷ আজকের রাজনৈতিক নেতাদের দাপটে আর কোনো ভাতৃঘাতী আন্দোলন হবে না৷ আগামীতে আর কোনো মাকে বা বোনকে ভাতৃহারা, স্বামীহার বা পিতৃহারা হতে হবে না৷
কৃষি ও কর্ষকদের নিয়ে শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার কয়েকটি বই লিখেছেন, যেমন কৃষি কথা, প্রাউটের অর্থনীতি, প্রাউটের রূপরেখা, কর্ণিকায় প্রাউট বেশ কয়েকটি খণ্ড ইত্যাদি ইত্যাদি৷
- Log in to post comments