ছোট ভাইবোনেরা, বৈচিত্র্যময় এই জগতে আমরা নানান ধরণের বস্তু দেখতে পাই৷ তাদের প্রত্যেকেরই কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা গুণ আছে যা দেখে আমরা সেই বস্তুটিকে চিনতে পারি৷ যেমন আগুনের বৈশিষ্ট্য হ’ল তাপ ও আলো দেওয়া, জলের বৈশিষ্ট্য হ’ল ভেজানো বা নীচের দিকে গড়িয়ে যাওয়া৷ বস্তুর এই বিশেষগুণ বা বৈশিষ্ট্যকেই তার ধর্ম বলে৷
জড় বস্তুর মত প্রতিটি জীবেরও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা দেখে আমরা তাদের জড়বস্তু থেকে আলাদা করতে পারি৷ যেমন জীব মাত্রেই ক্ষুধা পেলে খেতে চায় ক্লান্ত হলে বিশ্রাম চায়, ঘুমায়, প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে দূরে থাকতে চায় আর নিজের বংশ বিস্তার করে যেতে চায়৷ এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা গুণগুলিকেই বলা হয় জৈব ধর্ম৷ এই জৈব ধর্মে উদ্ভিদ, পশু–পাখী তথা মানুষে কোন প্রভেদ নেই৷ জীব মাত্রেরই এগুলি স্বাভাবিক ধর্ম৷
এই জৈব ধর্ম ছাড়াও বত তযটফ জীবের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা দেখে তাদের অন্যান্য জীব থেকে আলাদা করা যায়৷ তেমনি মানুষেরও কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে যা দেখে তাকে পশু থেকে আলাদা করা যায়৷ পশু দেহপ্রধান জীব, তার আছে শুধু দেহের ক্ষুধা৷ কিন্তু মানুষ মন প্রধান জীব, তার দেহের ক্ষুধার সঙ্গে আছে মনের ক্ষুধাও৷ এর ফলেই পশু ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য৷ দেহের ক্ষুধা সীমিত কিন্তু মনের ক্ষুধা অনন্ত৷ সীমিত জড়বস্তুতে দেহের ক্ষুধা মিটলেও মনের অনন্ত ক্ষুধা মেটে না৷ ক্ষুধা পেলে আমরা খাদ্য গ্রহণ করি, খেয়ে সুখ পাই৷ কিন্তু খাদ্য এক সময় শেষ হয়ে যায় বা আমাদের পেট ভরে গেলে আমরা আর খেতে পারি না৷ আর খাওয়া শেষ হবার সাথে সাথে খাওয়ার সুখও শেষ হয়ে যায়৷ মন তখন অন্য কিছু পেতে চায়৷ আমরা যা কিছুই পাই না কেন তার দ্বারা আমরা ক্ষণিকের সুখ পাই৷ মন তাতে কখনও তৃপ্ত হয় না৷ মন এমন কিছু পেতে চায় যা কখনও শেষ হবে না, যা থেকে আমরা সব সময় সুখ পেতেই থাকব৷ যে সুখের কখনও শেষ হবে না৷ এই অনন্ত সুখকেই প্রকৃত আনন্দ বলা হয়৷ ঈশ্বরই একমাত্র অনাদি অনন্ত সত্তা৷ তাই একমাত্র ঈশ্বরকে উপলব্ধির দ্বারাই আনন্দ পাওয়া সম্ভব৷ প্রতিটি মানুষ জ্ঞাতসারে হোক বা অজ্ঞাতসারে হোক আনন্দ পেতে চায়, ঈশ্বরকে পেতে চায়৷ এটাই মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা গুণ৷ এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য মানুষকে পশু থেকে আলাদা করেছে, মানুষকে জীব জগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে৷ এই আনন্দ পাবার এষণা অর্থাৎ একান্ত ইচ্ছা বা ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার একান্ত ইচ্ছাই মানুষের যথার্থ পরিচিতি বহন করে৷ এটাই মানুষের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, এটাই মানুষের ধর্ম৷ আর মানুষ যখন জেনে, বুঝে এই আনন্দ পাবার জন্যে, ঈশ্বরকে উপলব্ধি করার জন্যে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তাকে বলে সাধনা৷ তাই প্রতিটি মানুষেরই সাধনা করা উচিত৷
ছোট্ট বন্ধুরা, এখন তোমরা বুঝতে পেরেছ, আমাদের জীবনের লক্ষ্য হ’ল অনন্ত সুখ বা আনন্দ লাভ করা৷ আর নিয়মিত সাধনার দ্বারা ঈশ্বর উপলব্ধির মাধ্যমেই অনন্ত সুখ বা আনন্দ পাওয়া যায়৷ তাই আমাদের দু’বেলা নিয়মিত ভাবে সাধনা করতেই হবে৷ এটা আমাদের বিশেষ কর্তব্য৷
- Log in to post comments