‘‘মদে লক্ষ্মীলাভ, মাতালে ভরে যাচ্ছে বাঙলা’’

লেখক
অরুণ দেব

 দুর্গাপুজো থেকে দীপাবলি শারদোৎসবের এই সময়ে আমাদের রাজ্যের বিস্তর লক্ষ্মীলাভ হয়েছে৷ তারমধ্যে আবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা একাই রেকর্ড গড়ে ফেলেছে৷ বিগত চার বছর ধরে এই জেলা দৈনিক গড়ে চার কোটি টাকার মদ বিক্রি করেছে৷ এটাও নাকি রেকর্ড! এসব আমার মনগড়া কথা নয়, খোদ সংবাদপত্রের পাতায় বড় বড় হরফে ছাপা হয়েছে৷ শিক্ষা-সংস্কৃতিতে এগিয়ে থাকা বাঙলা এখন মদ বিক্রি করে রাজ্যের কোষাগার ভরিয়ে তুলছে৷ দেশি, বিদেশি ও বিয়ার-এই তিন ধরণের মদ দেদার বিক্রি হয়েছে শারদোৎসবের দিনগুলোতে৷ যাতে এ সময় বেশি বিক্রি হয় তার জন্য পুজোর সবদিনই মদ দোকান খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল প্রশাসনের পক্ষ থেকে৷ সরকারের এই নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মনোভাব ছিল---ওসবে কান দেবার দরকার নেই৷ টাকা চাই, টাকা৷ অনেক অনেক টাকা৷ তাতে রাজ্যের বদনাম হোক কিংবা মাতালে ভরে যাক এই রাজ্য কুছ পরোয়া নেহি! সংবাদপত্র সূত্রে জানা গেছে রাজ্যের কোষাগারে এক বিরাট পরিমাণ অর্থের যোগান আসে আবগারি শুল্ক থেকে৷ তাই দেদার মদ দোকানের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে৷ এখনতো পাড়ায় পাড়ায় আইনী মদ দোকান গজিয়ে উঠেছে৷ গর্ব করে প্রশাসনিক কর্তারা বলেন চোলাইকে ঠেকিয়ে দেশি মদের বিক্রি তারা বাড়তে পেরেছেন৷ আগামী প্রজন্মের কথা এঁদের কি আদৌ চিন্তা করার সময় আছে?

সাধারণ সমাজ সচেতন ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা এসব ঘটনা দেখে বিস্মিত ও উদ্বিগ্ণ৷ তাঁরা বুঝতে পারছেন না কি করা উচিত৷ তাঁদের বাড়ির ও অন্যান্য অল্পবয়সী যুবক যুবতীরা একবার এই নেশায় জড়িয়ে পড়লে ভবিষৎ জীবন অন্ধকার! এই পরিস্থিতি থেকে এদের রক্ষা করবে কে? এখনতো প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় প্রকাশ্যে মদ্যপান করতে দেখা যাচ্ছে অল্পবয়সী থেকে মাঝবয়সীদেরও৷ আগেকার দিনে মদ্যপায়ীদের লুকিয়ে লুকিয়ে মদ খেতে দেখা যেত৷ আর এখন পরিস্থিতি অন্যরকম৷ যারা পাণ করেন না তাদের এখন লুকিয়ে থাকতে হয়৷ অনেকের মতে সরকারী অনুপ্রেরণায় যেভাবে মদের কারবারের রমরমা তাতে আগামী দিনে সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়বে৷ চলচ্চিত্র বা দূরদর্শনের কোনও ধারাবাহিকে মদ্যপানের দৃশ্য দেখানো হলে তলায় লিখে দিতে হয় ‘মদ্যপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর’৷ মানুষের  শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে যা ক্ষতিকারক, সেই সমস্ত পানীয় বা নেশার দ্রব্যের অবাধ বিক্রি কী কাঙ্ক্ষিত? এ প্রশ্ণের সদুত্তর তো দিতে হবে রাজ্য প্রশাসনকেই৷  সমাজে সুস্থ, স্বাভাবিক ও সচেতন নাগরিকের সংখ্যা বৃদ্ধি করাই তো রাজ্য প্রশাসনের লক্ষ্য হওয়া উচিত৷ কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাজকর্মে বিপরীত চিত্রটাই ফুটে উঠেছে৷ সমাজে মদ্যপায়ীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে চলেছে৷ তারসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পথ দুর্ঘটনা, পারিবারিক অশান্তি, খুন,ধর্ষণ, আত্মহত্যা৷ এই পরিস্থিতিতে বিপথগামী মানুষকে সচেতন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করে চলেছে কতিপয় স্বেচ্ছাসেবী ও আধ্যাত্মিক সংঘটনের কর্মীবৃন্দ৷ তাঁরা যখন মদ্যপান সহ সমস্ত রকম নেশার দ্রব্য গ্রহণের কুফল সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছেন, তখন মদ দোকান খোলার লাইসেন্স দিয়ে চলেছে রাজ্য প্রশাসন৷ এভাবে চললে আগামী দিনে ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে রাজ্যবাসীকে৷ শিক্ষান্তে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে হতাশাগ্রস্ত যুব সম্প্রদায়কে বিভিন্ন নেশায় আসক্ত করার জন্য সেদিকে ঠেলে দেওয়ার এই ঘৃণ্য কৌশল এখনই বন্ধ হওয়া দরকার৷ যা মানুষের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, পারিবারিক সব দিক দিয়েই ক্ষতিকর তার বিক্রি ও ব্যবহারের উপর রাষ্ট্রের কঠোর নিয়ন্ত্রণ দরকার৷ দরকার সামাজিক নিয়ন্ত্রণেরও ৷ সংবাদ মাধ্যমকেও এই ধরণের সংবাদ পরিবেশনের আগে হাজার বার ভাবতে হবে--- এই সংবাদ রাজ্যবাসীর কোনো কল্যাণ করবে কী?