মহান দেশ নেতা নেতাজীকে আর বোটের বাজারে টানাটানি না করে তাঁর  আদর্শকে বাস্তবায়িত করা হোক

লেখক
প্রভাত খাঁ

বিশ্ববরেণ্য মহান বিপ্লবী ও দেশপ্রেমিক, মানবতার পূজারী আমাদের অতি প্রিয় নেতাজী সুভাষচন্দ্রের শুভজন্মদিন ২৩শে জানুয়ারী আবার আসছে৷ তাই একজন বাঙালী হিসাবে তাঁকে স্মরণ করতেই দু’চার কথা লিখছি৷ অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গেই বলি কেন মুখার্জী কমিশনের রিপোর্টকে লোকসভায় কেন্দ্র সরকার বাতিল করলেন তার সদুত্তর তো দেশবাসী পাননি অদ্যাবধি৷ তাঁর অন্তর্ধ্যান রহস্য আজও অজ্ঞাত রয়ে গেছে দেশবাসীর কাছে৷ তাঁকে আজও একজন অপরাধী হিসাবে চিহ্ণিত করে রাখা হয়েছে তিনি ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন  বলে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত করতে৷ সেই মিথ্যা অভিযোগ তো তুলে নেওয়া হয়নি৷ স্বাধীন ভারত সরকার অদ্যাবধি সে বিষয়ে  কোন চেষ্টা কি  করেছেন? আজকের স্বাধীন ভারতের সরকার বিশেষ করে কেন্দ্র সরকারের কি কোন চেষ্টা আছে তিনি তো অখণ্ড ভারতবর্ষের  বিশ্বে ঘোষিত রাষ্ট্রপতি৷ ইংরেজ শাসনকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ও অন্যান্য একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্রগুলি তাঁকে স্বীকার করে নেন রাষ্ট্রপতি হিসাবে৷ আজকের খণ্ডিত ভারতের রাষ্ট্রপতি তো এক খণ্ড ভারতের রাষ্ট্রপতি৷ কেন সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে মহান ভারতবর্ষ খণ্ড করে টুকরো টুকরো  করে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান ও দেশের প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা করা হয়েছিল সেকথার সদুত্তর দিতে কি পারবেন আজকের রাজ্যগুলির ও কেন্দ্রের সরকারও?

মহান নেতাজী তৎকালীন নেতাদের বাহির থেকে বেতার যোগে আবেদন ও অনুরোধ  করেন দেশভাগ না করতে৷ কিন্তু তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন৷ তাই ষড়যন্ত্রকারী ইংরেজ মিত্রপক্ষে থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের লড়াই করছে৷ আর ভারতবর্ষের টাকা ও সম্পদ ধবংস করছে৷ তারা চিরকালের মতো ভারতবর্সকে ধবংস করতে টুকরো টুকরো করে প্রতি হিংসাকে মূলধন করেই মহান ভারতবর্ষকে শেষ করে দিতেই কি ভাগ করেনি? এ কথা হতভাগ্য ভারতবাসীগণ আজ  হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন!

এই বাঙালী জনগোষ্ঠীকেই  উদ্বাস্তু করে আজও বিতাড়িত বাঙ্গালী বিদেশী বলে ভারতের পূর্ব প্রান্তে বিশেষ করে  অসমে নির্যাতন চালাচ্ছে যে কেন্দ্র সরকার বিজেপি ও পূর্বের কংগ্রেস সরকার তাঁরা কোনমুখে নেতাজীর নাম নেন? নিছক বোটের স্বার্থেই কি নেতাজী আজ তাঁদের  কাছে মূল্যবান? তাঁর আদর্শ ও  ত্যাগকে যাঁরা মানেন না, তাঁর নামে শুধু ২৩শে  জানুয়ারী কে স্মরণ করাটা কোন ধরনের নেতাজী প্রীতি?

ভারতকে বাঁচাতে হলে, দেশের সার্বিক কল্যাণ করতে হলে বোটে জিততে যে সাম্প্রদায়িক নোংরা রাজনীতিকে সুড়সুড়ি দিয়ে কৌশল করে জেতার মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে৷ দেশের কোটি কোটি মানুষকে বেঁচে থাকার  জন্য সচেষ্ট হওয়াটা দলগুলির চিন্তা করা  দরকার৷ নিছক গদীর স্বার্থে নোংরা রাজনীতির পাঁকে ডুবে নিজেদের ও দেশকে  ধবংসের মুখে টেনে  নিয়ে যেতে তো নেতাজী কোনদিনই চিন্তা করেন নি৷ তিনি অখণ্ড ভারতে  মহান নেতা ছিলেন আছেন থাকবেন৷ মনে রাখা দরকার পূর্ব বাংলা সেদিনের ইংরেজ ও গদীলোভী নেতাদের উপযুক্ত  জবাব দিয়েছে৷ বাংলাদেশ কি করে তিনটুকরো ভারতবর্ষকে অন্তত মিলে মিশে বাঁচানো যায় তার ভাবনা করা হোক৷

মনে হয় নেতাজী সুভাষচন্দ্রের মহান আত্মা তাতে আনন্দিত হবেন৷ আর শাসনে নোংরা দলবাজিটা ছেড়ে মানবতাবাদকে অগ্রাধিকার দিয়ে সেবার ও সকলের কল্যাণের কথা ভেবেই গণতন্ত্রকে সার্থক করে তুলতে হবে৷ স্বাধীন দেশের কোটি কোটি মানুষ যদি অভুক্ত থাকেন, রোগে ওষুধ না পান, মাথা গোঁজার ঘর না থাকে, উপযুক্ত শিক্ষার পথ বন্ধ করে যদি শিক্ষায় দলীয় মাতববরীকে ঢোকানো হয় তা হলে গণতন্ত্রটা অস্বীকৃত হয়৷ দল যাবে আসবে কিন্তু সুশিক্ষিত যদি নাগরিকগণ না হন ও দেশ সেবার মানসিকতা মানবতাবোধ যদি না জাগে তা হলে দেশকে বাঁচাতে জগতের কল্যাণ করাটা হবে না৷ বর্ত্তমানের শাসন ব্যবস্থায় তো ধনতান্ত্রিক শোষণের যাঁতাকলে কোটি কোটি মানুষ শোষিত হচ্ছে৷ এটাকে  কি গণতন্ত্র বলা চলে! অর্থনৈতিক  বিকেন্দ্রীকরণের পথে তো জনগণের  প্রতিনিধিরা চলবেন তা না করে মুষ্টিমেয়কে সেবা দিয়ে গরিবকে শোষণ করার একটা নোংরা ধান্দাবাজি৷ প্রতিটি নাগরিক যাতে স্বনির্ভর হন ও মানুষের মতো মানুষের মর্যাদা পেয়ে বেঁচে থাকতে পারেন সেটা দেখা৷ তাই অর্থনৈতিক  বিকেন্দ্রীকরণ এর দিকে  চলতে হবে সরকার কে৷ আর শাসনে আনতে হবে দেশসেবকদের যাঁরা নিষ্ঠা, ত্যাগ, সততা দিয়ে দেশবাসীকে রক্ষা করবেন৷ গণতন্ত্রটাই আজ ধনীর দ্বারা পুষ্ট এক ভয়ংকর শাসনব্যবস্থায় এসে কি দাঁড়ায়নি! মানুষ আস্থা হারাচ্ছেন৷ একথাটা যে শাসকগণ যেন দয়া করে স্মরণে রাখেন নেতাজী ছিলেন মহান স্বামী বিবেকানন্দের  মানসপুত্র৷ তাঁর সম্পদ ছিল তাঁর আত্মবিশ্বাস আর মহান আত্মত্যাগের প্রতি নিষ্ঠা জগৎ কল্যাণে৷ তাই তাঁকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির বেশী  মাতামাতি না করে তাঁর মহান আদর্শকে বাস্তবায়িত করার পথে এগিয়ে যাওয়া৷ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুঝেছিলেন বলেই তিনি বাঙালী কবি হিসাবে তাঁকে নেতাজীর পদে বরণ করেন কিন্তু কংগ্রেসের নেতারা কি তাঁকে দেশ সেবা করতে দিয়েছিলেন না দল ত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন৷  তাঁকে চিনেছিল সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ, তাই তাঁকে জেলের মধ্যে নির্যাতন করেছে আর দেশের  বাহিরে মান্দালয়ে আটকে রাখেন আর কংগ্রেস এর অন্যনেতাদের তোয়াজ করে দেশের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর বন্দী হিসাবে রেখে দেয়৷ তাই বলি দেশ নেতা, নেত্রী হওয়া সোজা নয়৷ আজ নির্বাচনে দাঁড় করানো হচ্ছে তাঁদের যাঁরা দেশের মানুষকে চেনেন না, সেবা কাকে বলে জানেন না৷ সেটা সংবাদ পত্রের সংবাদেই জানা যাচ্ছে৷ আজ রাজনীতিটা কি ব্যবসায় পরিণত হয়নি? তাই বলি দেশের তরুণ তরুণী দূরে না থেকে দেশ জননীকে দুর্নীতির হাত থেকে মুক্ত করতে মহান নেতার আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে এগিয়ে আসুন তবেই মহান নেতাকে সত্য সত্যই বরণ করে নেওয়া হবে৷