পূর্ব প্রকাশিতের পর,
একটা প্রবাদ আছে-‘কুকুরটাকে যদি মারতে হয়, তবে ওটার বদনাম দিয়ে দাও৷ ব্যাপারটাকে কয়েকটি ভাবনা বা দৃষ্টিতে দেখা যেতে পারে৷ যেমন---(ক) ধান্দাবাজ-সুবিধাভোগী ও চরম নারীবিদ্বেষীরা নারী সমাজকে দাবিয়ে রাখতে নারী নির্যাতনের হাতিয়ার করেছে কতগুলো নিন্দা ব্যঙ্গ বক্রোন্তিকে
(এটা সুবিধাবাদীরা প্রচার করেছিল-মুক্তি পেতে হলে মরে গিয়ে আবার পুরুষের শরীর নিয়ে আসতে হবে, তারপরে মুক্তি পাবে৷)
নারী নরকের দ্বার, শয়তানের জাত, সাক্ষাৎ কালনাগিনী৷
পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য
উম্যান্ মীনস্ উত্ত টুন ম্যান্৷
বঙ্গদেশের নারী পোটলার চেয়ে ভারী৷
বামা জাতি সদা বামা বুদ্ধি ধরে৷’
মেয়েদের এগার হাত কাপড়ের কাছা নেই৷ (বুদ্ধিসুদ্ধির বালাই নেই)৷
মোহিনী-মায়া-জাদু জানে, খপ্পরে পড়লে নিস্তার নেই৷
অসূয়া মানুষের ষড়দোষের একটি কিন্তু মেয়েদের আমি কেন্দ্রিক ভাবনাটা বড্ড বেশী, বড় হিংসুটে৷ কোন মেয়ের সামনে আন্য মেয়েকে ভাল বলা বা তার প্রশংসা করা সে সহ্য করতে পারে না৷ অন্যের ভালটা সহজে মেনে নিতে পারে না৷ ‘যদি কারো নজরকারা ভালো কোন জিনিষ দেখল তাহলে ওটা আমারে চাই৷ যতক্ষণ না পাচ্ছে ততক্ষণ শান্তি নেই৷ যদি কোন দুইয়ের উভয়ের মধ্যে অজান্তেও কোন মন কষাকষি থাকে তো কথাই নেই, বিষ্ফোরণ অনিবার্য৷ ভাবটা হচ্ছে---‘‘সব সময় আমার প্রশংসা করতে হবে, আমাকে ভাল বলতে হবে৷ শিক্ষিত নিরক্ষরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই৷
আর পাঁচটা ভোগ্য বস্তুর মত নারী একটা ভোগ্য বস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়৷
পরের কথা পরমামৃত, কানপাতলা, আবেগটাই শেষ কথা, যুক্তি তর্কের ধার ধারে না৷
নারীর মন দেবতাদের অগম্য৷ মেয়ে মানুষকে চেনা বড় দুষ্কর, ওরা একটা হিমশৈল বিশেষ, ওদের আঠার কলার তিন ভাগ থাকে আড়ালে এক ভাগ প্রকাশ্যে৷ তাই চতুর নারীর ভাষ্যটা---‘‘বাহারে পুরুষ, একটা মেয়েকে সামলানোর মুরোদ নেই৷’’
পাঁচ ভাইয়ের একসঙ্গে চলতে সমস্যা হয় না, আর পাঁচটা মেয়ে একসঙ্গে? নৈব নৈব চ, নিত্য ঝগড়া-ঝাঁটি অনিবার্য৷ যেখানে নারী জাতি সেখানেই কোন্দল৷
দ্যাবা-দেবীর তুমি আর আমি,মাঝে ব্যাটারি-ট্যাবলেট৷ এই বৃত্তের বাইরে আর কারো জায়গা নেই৷ শ্বশুর-শাশুড়ি-দেবর-ননদ-মাসি-পিসি-জাদির কোন জায়গা নেই৷ অথচ যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে যাওয়ার পর আজকের নিউক্লিয়ার পরিবারতন্ত্রে বাপের বাড়ির পরিজনের আদর-কদরের খামতি নেই৷ স্বামী নিজের ঘরেই যেন ঘর জামাই৷ তৈরী হচ্ছে উলোটপুরাণ৷
বধূ নির্যাতন-নারী নির্যাতন রোজকার নাম, কিন্তু প্রচারের আলোয় না এলে সাম্প্রতিককালে আগের ঠিক উল্টো ইতিহাস ‘বধূ কর্তৃক পতি-শ্বশুর-শাশুড়ি-ননদ নির্যাতনের ঘটনাও কম নয়, যা বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াচ্ছে, বাড়ছে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা৷ ছেলেদের বিয়ে দিতে গিয়ে অবিভাবকদের মধ্যে তৈরী হচ্ছে আতঙ্ক৷ আবার রোমাণ্টিক রঙিন আবেশটা হারিয়ে না গেলেও কিছু সংখ্যক মানুষের মধ্যে বাড়ছে বিবাহে অনীহা৷ দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল বাড়তে থাকায় বাড়ছে পশ্চিমীদের মত বিয়ের পরিবর্তে ‘লিভ টুগেদার’ অভ্যাস৷ সুখী সংসারের স্বপ্ণ তো হারাতে বসেছে৷ এদেশে একটা প্রবাদ বাক্য উচ্চারিত হয় সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে৷ সুখটা হয়েছে অসুখ, কেননা রমনীর রণটা আছে রমটা নেই৷
(খ) নারীজাতিকে দাবিয়ে রাখতে এরকম ভাবনাধারা অগুনতি৷ তবে একটা কথা, ওই নিন্দাবাদের ঝোলার মধ্যে কিছুটা বাস্তবতা হয়তো আছে, কিন্তু অতিরঞ্জনেরও ঘাটতি নেই৷ অবদমন কায়েম করতে মেয়েদের তো হাজারো গণ্ডা গণ্ডা নিষেধ-নিগড়৷ ধর্মেশাস্ত্রের দোহাই দিয়ে কতগুলো মেকিতত্ত্ব বানিয়ে মেয়েদেরকে জপের মালার মত জপিয়েছে৷ তাদেরকে ডগমায় আবিষ্ট করে যুক্তি-বিজ্ঞান আশ্রয়ী জীবনের পথ থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে৷ মেয়েরা মুখ্খু হয়ে থাকলে তাদের ওপরে সামাজিক-অর্থনৈতিক ও মানস-অর্থনৈতিক শোষণ আরও ভালভাবে চলতে পারবে৷ আর কিছু মেয়েরা জড়-ভরত, ‘লিভিং লাগেজ’ হয়ে যদি বসে থাকে, পুরুষরা যেমন ইচ্ছে তাদের শোষণ চালাতে পারবে৷ তাদের মাথায় সহজে ঢুকিয়ে দেয়া হল---নারী হয়ে জন্মানোটা যেন কোন পাপের কর্মফল৷ পুরুষতন্ত্রের ভাবখানা যেন---দুষ্টু স্বামী মরে নরকে গিয়ে গোরু হয়ে যখন ঘাস খাবে আর তার শিক্ষিতা, পতিব্রতা ভাল নারী মরে গিয়ে পাপ না করলেও নরকে গিয়ে তাঁর সেই স্বামীর (গোরুর পেতাত্মার) পাশে পাশে ঘাস খেয়ে বেড়াবেন, আর তা মানতে হবে৷ আবার ঐতিহাসিককালেও ও কালান্তরে একটা পুরুষ দেড়শ দুশ বিয়ে করতে পারত, কিন্তু একটা নারী সে স্বামী মারা যাওয়ার পরও একটা বিয়ে করতে পারত না৷ তাদের বলে দেওয়া হল---এটা পাপ, সেটা পাপ ওটা পাপ৷ (ক্রমশঃ)
- Log in to post comments