সাম্প্রদায়িক বিভেদের গর্ভে জন্ম নেয় পাকিস্তান৷ তথাকথিত দেশপ্রেমিক নেতাদের ক্ষমতার মোহ, অন্ধ বাঙালী বিদ্বেষ ও নেতাজী আতঙ্ক দেশভাগ তথা বাঙলা ভাগের অন্যতম কারণ৷ সাম্প্রদায়িক বিভেদ একটা অজুহাত মাত্র৷ দেশবন্ধু অনেক আগেই গত হয়েছেন৷ বয়সের সীমা অতিক্রম করেননি রবীন্দ্রনাথও৷ আতঙ্ক একটাই---সুভাষ! দেশীয় পুঁজিপতি ও বিদেশী রাজশক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সুভাষকেও দেশছাড়া করা গেছে৷ কিন্তু বিদেশে গিয়েও যেসব কাণ্ড বাধাল! আস্ত একটা রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ! কপাল ভাল---জাপান হেরেছে৷ কিন্তু সুভাষকে বিশ্বাস নেই৷ যদি ফিরে আসে৷ তাই যে কোন ভাবে হোক একবার স্বাধীন রাষ্ট্রের কর্ণধার হয়ে বসতে পারলে সুভাষের ফিরে আসার সব পথ রুদ্ধ৷
আতঙ্ক ব্রিটিশেরও কম নয়৷ জাপানের কাছে মান বাঁচলেও সুভাষ আতঙ্ক পিছু তাড়া করছিল৷ তাই বিদেশী রাজশক্তির অনুগত দেশপ্রেমিকদের হাতে দেশটা তুলে দিয়ে পালাতে পারলে সেও বাঁচে৷ তারও একই ভাবনা---সুভাষকে বিশ্বাস নেই! ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছিল দু পক্ষই৷ বিদেশী রাজশক্তি আর স্বদেশী দেশভক্ত৷ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে দেশভাগের দায় এই দু পক্ষেরই৷
তবু বাঙালী বাঙালীই-ই৷ তাই দাঙ্গার দাগ মুছে দেশভাগের জ্বালা বুকে নিয়ে অন্ধ ধর্মীয় আবেগকে দূরে সরিয়ে ১৯৪৭-এর কলঙ্কিত ১৫ই আগষ্ট পার করে বাঙালীয়ানায় জেগে উঠতে ওপারের বাঙালী এক বছরও সময় নেয়নি৷ ১৯৪৮য়েই ঢাকার রাজপথে শোনা গেল উর্দু সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গর্জন৷ উর্দু নয়, বাঙলাই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা৷ শুরু হ’ল ভাষা আন্দোলন৷ সেই আন্দোলন রক্তাক্ত ইতিহাসের রূপ পেল ১৯৫২-এর ২১শে ফেব্রুয়ারী, পূর্ণতা পেল ১৯৭১ সালে৷ বিশ্বের মানচিত্রে স্থান পেল স্বাধীন বাঙলাদেশ রাষ্ট্র৷ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন এইভাবেই জন্ম দিল স্বাধীন রাষ্ট্রের৷
বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্যে বাঙালীর আত্ম ত্যাগের দিন ২১শে ফেব্রুয়ারী---‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারী৷’ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার এই আন্দোলনকে সম্মান জানাতে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর৷ আর এক বাঙলা নববর্ষের দিন ইউনেস্কো শোনাল বিশ্বের ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলাই সবচেয়ে মিষ্টি ও শ্রুতিমধুর ভাষা৷
হিন্দী প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া এ পারের বাঙালী একটু মনে করুন মাতৃ ভাষার বাংলা ভাষা মর্যাদা রক্ষার জন্যে ওপারের বাঙালীর আত্মদানের ইতিহাস---২১শে ফেব্রুয়ারীর ইতিহাস৷ অন্ধ ধর্মীয় গোঁড়ামীর থেকে ভাষা-সংস্কৃতির মর্যাদা অনেক বেশী৷ ৩০ লক্ষ বাঙালী জীবন দিয়ে সেই ভাষার মর্যাদা রাখতেই স্বাধীন বাঙলাদেশ গড়েছে৷ সেই ইতিহাস মনে যদি পড়ে .... প্রাণে যদি লাগে ...৷
- Log in to post comments