মোদি কি দেশকে স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্রের পথে দেশকে নিয়ে যেতে চান?

লেখক
মনোজ দেব

দ্বিতীয়বার বিপুল সংখ্যাধিক্যে ক্ষমতায় বসে প্রধানমন্ত্রী আবার আবাজ তুলেছেন এক জাতি, এক নির্বাচন৷ একটা কথা জেনে রাখা ভাল---বিপুল সংখ্যা হলেও বিপুল জনসমর্থন ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রায় এই নির্বাচনের ফল নয়৷ দীর্ঘকালীন ভোট, বিপুল পরিমাণ অর্থের ছড়াছড়ি, তারপর নির্বাচন কমিশনের ভেতর থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে৷ প্রযুক্তিগত কারচুপিরও অভিযোগ উঠছে৷ এই নিয়ে বিরোধীরা নির্বাচন কমিশন ও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল৷ কিন্তু কোনও পক্ষই বিরোধীদের কথায় কর্ণপাত করেননি৷ মোদি জমানায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছিলেন তার সহ বিচারপতিরা৷

এই অবস্থায় নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ হয়েছে সে প্রশ্ণ থেকেই যাবে৷ আজ গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভগুলোরও নিরপেক্ষতা নিয়ে জনগণের মনে সন্দেহ দানা বাঁধছে৷ তবু ভারতীয় গণতন্ত্রের সংখ্যাধিক্যই শেষ কথা৷

দিল্লীর শাসক দলের একটি বিশেষ সম্প্রদায়, একটি বিশেষ ভাষা ও একটি বিশেষ স্থানের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কথা কারো অজানা নয়৷ হিন্দী, হিন্দু, হিন্দুস্থানই এদের মূল শ্লোগান৷ কিন্তু ভারতবর্ষ বলতে না একটি জাতি, না একটি সম্প্রদায়, না একটি ভাষা৷ ভারতবর্ষ বহু জাতির সম্মিলিত একটি রাষ্ট্র---ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র৷ ভারতবর্ষ মানে হিন্দী, হিন্দু, হিন্দুস্থান নয়, ভারতবর্ষ মানে বাঙালী, অঙ্গিকা, মৈথিলী, ভোজপুরি, তামিল, তেলেগু, মালয়ালাম, বুন্দেলি, বাঘেলি, বিদর্ঘ, ডোগরী, পাঞ্জাবী প্রভৃতি ৪৪টি জনগোষ্ঠীর দেশ৷ প্রত্যেকটি জনগগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা, সংসৃকতি আছে, নিজস্ব অঞ্চল আছে৷ প্রতিটি জনগোষ্ঠী ও তাদের ভাষা, সংসৃকতি মর্যাদা পেলে ও প্রতিটি অঞ্চলের অর্থনীতি মজবুত হলে তবেই ভারতবর্ষের সংহতি সুদৃঢ় হবে৷ কোনও একটি ভাষা, কোনও একটি সম্প্রদায়, কোনও একটি মতবাদ জোরপূর্বক অন্যের ওপর চেপে বসলে পরিণতি কী হতে পারে তার দৃষ্টান্ত বাঙলাদেশ ও অধুনালুপ্ত সোভিয়েত ইয়ূনিয়ন৷

দিল্লীর শাসক দল এ বিষয়ে অবশ্যই অবগত আছে৷ তাই তারা অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে ও ধীরে ধীরে কাজটি করতে চাইছে৷ এই কাজে সবচেয়ে বড় মদতদাতা দেশীয় পুঁজিপতিরা৷ দীর্ঘ ৭২ বছর ধরে জনগণের মগজে ঢোকানো হয়েছে ভারতবর্ষ মানেই হিন্দুস্থান ও ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিন্দী, কিন্তু ঐতিহাসিক সত্য হ’ল ভারতবষর্কে প্রকৃতপক্ষে হিন্দুস্থান বলা চলে না৷ আর হিন্দীও ভারতের রাষ্ট্রভাষা নয়৷  সংবিধান এখনও পর্যন্ত কোনও ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়নি৷

এই অবস্থায় ভারতের নানা ভাষা-নানা মত-সংসৃকতিগত বৈচিত্র্যকে গুঁড়িয়ে হিন্দী সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করা সম্ভব নয়৷