নীলকণ্ঠ দিবসের তাৎপর্য

লেখক
তপোময় বিশ্বাস

১২ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭৩৷ ইতিহাসের পাতায় এক উল্লেখযোগ্য দিন যা বিশ্ববাসীর কাছে নীলকণ্ঠ দিবস নামে পরিচিত৷ পটনার বাঁকীপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী ছিলেন আনন্দমার্গ দর্শন ও প্রাউট তত্ত্বের প্রবক্তা শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার৷ ১৯৭৩ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারকে হত্যার উদ্দেশ্যে সিবিআইয়ের মাধ্যমে ডাক্তারকে দিয়ে ঔষধের নামে তীব্র বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল৷

শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার কে? তাঁকে কেন বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল? প্রথমেই বলি প্রভাতরঞ্জন সরকার আধ্যাত্মিক জগতে যিনি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নামে পরিচিত৷ তিনি আনন্দমার্গ দর্শন ও আনন্দমার্গ প্রচারক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা৷

আনন্দমার্গ দর্শনেরই পঞ্চম অধ্যায়ে রয়েছে সামাজিক-অর্থনৈতিক তত্ত্ব যা প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব তথা ‘প্রাউট’ নামে পরিচিত৷ এই প্রাউট তত্ত্বই পুঁজিবাদ ও তথাকথিত সমাজতন্ত্রের মুখোশধারী রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের ধারক কমিউনিষ্টদের কাছে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে৷ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার প্রমাণ করে দিয়েছেন মার্কসবাদ ও পুঁজিবাদের মধ্যে মূলত কোনও পার্থক্য নেই৷ পুঁজিবাদের মুষ্টিমেয় কিছু ব্যষ্টি রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত করে নেয়৷ কমিউনিষ্ট রাষ্ট্রে সম্পদের রাষ্ট্রীয়করণের নামে রাষ্ট্রের পরিচালক কয়েকজন সেই সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে৷

পুঁজিবাদ ও মার্কসীয় তথাকথিত সাম্যবাদের বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে প্রাউট তত্ত্ব৷ প্রাউট তত্ত্বের মূল কথাই অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে একাধিক সামাজিক-অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন করে প্রতিটি মানুষের কাছে জীবন ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজন (অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা বাসস্থান) পৌঁছে দিতে হবে৷ ভৌতিক জগতের সম্পদকে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রেও প্রাউট নির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেয়৷ প্রাউটেরএই অর্থনৈতিক পরিকল্পনাই পুঁজিবাদী ও সাম্যবাদীদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ তাই তারা যুক্তি ও বিজ্ঞান দিয়ে প্রাউট তত্ত্বকে খণ্ডন করতে না পেরে প্রাউট তত্ত্বের প্রবর্ত্তককেই হত্যার পরিকল্পনা করে৷ সেই পরিকল্পনা মাফিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে পটনার বাঁকিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী করে রাখে৷ কিন্তু মিথ্যা মামলা ধোপে টিঁকবে না জেনেই তাঁকে বিষ প্রয়োগে হত্যার ষড়যন্ত্র করে সিবিআই৷ কিন্তু সেই তীব্র বিষ তিনি হজম করে নেন৷ সিবিআই ও ভারত সরকারের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়৷ পরবর্তী সময়ে শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে কারামুক্ত হন৷ তাঁকে বিষ প্রয়োগের দিনটি প্রতি বছর বিশ্বের আনন্দমার্গীরা ‘নীলকণ্ঠ দিবস’ হিসেবে পালন করে৷ পুরান কথিত গল্পে ভগবান সদাশিবও একদিন বিশ্বের সমস্ত বিষ পান করে কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন৷ বিষের প্রভাবে তাঁর কণ্ঠ নীল হয়ে যায়৷ সেই থেকে সদাশিব ‘নীলকণ্ঠ’ নামে পরিচিত হন৷ তাই আনন্দমার্গীরাও শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের বিষ পান করে হজম করার দিনটি---১২ই ফেব্রুয়ারী ‘নীলকণ্ঠ দিবস’ হিসেবে পালন করে৷

আজ বিশ্বের সকল প্রাউটিষ্টদের ‘নীলকণ্ঠ দিবসে’ শপথ নিয়ে শোষণমুক্ত বিশ্ব গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করা উচিত৷