নির্বাচনী বণ্ড সম্বন্ধে দু’চার কথা

লেখক
প্রভাত খাঁ

প্রথমেই মনে করিয়ে দিতে চাই একটি কথা ধান্দাবাজ ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পূজারীদের, যারা দলতন্ত্রের সমর্থক সেই রাজনৈতিক দলের নেতাদের সবার উপরে গণতন্ত্রের নাগরিকগণ যাঁরা নির্বাচনে মত দান করবেন--- তাঁদের মতদান কে কলঙ্কিত করতে দলীয় শাসকগণ অসৎ উপায় নির্বাচন বন্ড নামে ধনীদের কাছ থেকে চোরা পথে চাঁদা নিয়ে বোটে সেই অর্থ দলীয় স্বার্থে খাটায় সেটা কি অসৎ পথ নয় তা কিন্তু সবাই বোঝে যে এটা অনৈতিক৷ তাই পবিত্র লোকসভায় সেই অন্যায় অনৈতিক নির্বাচনীবণ্ড নামে বিল পাশ করিয়ে কেবলমাত্র একটি বিশেষ ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকা আদায়ের পথ করে সেটা তারা পারে না--- যারা রাজনৈতিক দলের হয়ে লোকসভায় ও বিধানসভায় মোটামুটি জনপ্রতিনিধি আছে! এই ফাঁকি বাজিটা যে--- সম্পূর্ণ গণতন্ত্র বিরোধী এটা মূলতঃ দলতন্ত্রের বড়ো রাজনৈতিক দলের স্বার্থ সিদ্ধির আইন তাই সম্পূর্ণ অবৈধ৷ এতে দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকরাই সুবিধা পাবে জোর টাকার খেলে গদীতে যেতে অতি সামান্য ব্যষ্টিও এটা বোঝে৷ ব্যাঙ্কের গোপনীয়তা সেটা অন্য কথা৷ এটাতো একটা ধান্দাবাজ শাসকদের স্বার্থে তৈরী অতি লজ্জাজনক বেআইন পথে গড়া অতি বিপদজনক আইন যা শুধু সারা পৃথিবীতে ভারতে আছে৷ এটা কি অধঃপতিত সরকার নয়? তাই সুপ্রিমকোর্ট আছেন ন্যায়ধর্মকে রক্ষায় নোংরা দলবাজিকে নয়৷ মহামান্য নির্বাচন কমিশন যাঁরা জানেন না এই অন্যায় আইনের কতটা ক্ষতিকারক পবিত্র নির্বাচনের পক্ষে৷ তাই মহান কোর্ট তাঁদের জানাতে বলেছেন৷ কোন সংবাদ মাধ্যমে নয়৷ তাঁরা তাঁদের ওয়েভসাইটে প্রকাশ করবেন৷ এটা একটি ঐতিহাসিক রায় তাকে চ্যালেঞ্জ করাটা হবে আরো অপরাধ৷ ব্যাঙ্ককে গোপনীয়তা রক্ষা অধিকার দেওয়া হয়েছে যাতে পাপাচারিতা ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের ক্ষতি না করতে পারে৷ যদি তেমন ও কোন আমানতকারী যদি আইনের পথে যান তখন অবশ্যই বিশেষ কারণে গোপনীয়তা ভঙ্গ করে বিশেষ ক্ষেত্রে দেখাতে বাধ্য মহামান্য আদালতের নির্দেশে৷

তাই কেন্দ্র সরকারকে এ ব্যাপারে লোকসভার সম্মান রক্ষায় আর বেশী অযথা বাড়াবাড়ি না করাটাই মঙ্গলজনক৷ আইনটাতো অবৈধ৷ তাই মামলা গ্রহণ করবেন না মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট৷ যেটা অবৈধ ঘোষিত হয়েছে সেটার জন্য বাজে সময় নষ্ট করার সময় ন্যায়ালয়ের আছে কি? ন্যায়ালয় সবার উপরে অবস্থান করছেন৷ লোকসভার মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার দায় মহামান্য আদালতেরই৷ যদি তা না হয় তা হলে স্বৈরাচারী শাসকরাই তো সভ্যতা ও সবকিছু ধবংস করে ছাড়বে৷ তাই এই রায় একটা ঐতিহাসিক৷ নির্বাচনী বন্ড নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা ও আস্থা আরও বেড়ে গেল৷ নতুবা বিচারের মহাপবিত্র আসনটা হয়ে যাবে একটা পরিহাসের অশুভ স্থান! তাই শুভবুদ্ধির বিকাশ হোক শাসকদের! যাঁরা জনগণের বোটে শাসনে আসেন!

পরিশেষে বলি মনে রাখতে যে ব্যাঙ্কের গোপনীয়তা রক্ষা করা ব্যাঙ্কেরও ততটুকুই কাজ যাতে আমানতকারী যিনি তিনি যতোদিন ন্যায়পথে আছেন ততদিন৷ কিন্তু আমানতকারীই যদি বেআইনী পথ প্রদর্শক হন ও মহামান্য আদালত যদি তার সম্বন্ধে আর্থিক ব্যাপারে জানতে চান সুবিচারের স্বার্থে তখনও ব্যাঙ্কের ম্যানেজার গোপনীয়তা রক্ষায় বিচারক বিচারের স্বার্থে তাঁর নির্দেশ অমান্য করতে পারেন৷ সেটা কখনো হবে না৷ তাতে অপরাধী হয়ে যাবে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার৷

তবে শুধু বিচার ব্যবস্থার দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না৷ জনগণকেও সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক দিক থেকে সচেতন হতে হবে৷