নোতুনের আহ্বান

লেখক
পথিক বর

 প্রথমবার কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সুভাষচন্দ্র অভিযোগ করেছিলেন---‘দেশীয় পুঁজিপতিরা ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে শক্তি যোগায়৷’প্রাউট প্রবক্তা শোষণের তিনটি রূপ বলতে গিয়ে লিখেছেন---’ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অবসানের পর ১৯৪৭ সালে বাঙলা বিভাগের মধ্যে দিয়ে এলো ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী শোষণের যুগ৷’

 শোষণের সংজ্ঞায় তিনি বলেছেন---’একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক সীমানার মধ্যে অবস্থিত তথাকার জনগোষ্ঠীর দৈহিক মানসিক ও আত্মিক বিকাশকে স্তম্ভিত করে’’, ওই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদের সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর শ্রম ও মানসিক সম্পদের অবাধ লুণ্ঠনই হলো শোষণ’৷

 সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বাঙলার প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠনে ব্যস্ত ছিল৷ মানসিক সম্পদের দিকে নজর দেয়নি৷ তাই পরাধীন ভারতে বাঙলা পেয়েছিল রামমোহন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল, অরবিন্দ, বিবেকানন্দ, জগদিশ চন্দ্র বোস, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বোস, দেশবন্ধু, সুভাষচন্দ্র বোস--- এক কথায় পরাধীন ভারতে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞানে, অর্থনীতিতে, রাজনীতিতে ধর্মে বাঙলা ছিল সবার আগে---সারা বিশ্বে বাঙলাই ছিল ভারতের পরিচয়৷

 স্বাধীনতার পর মুহূর্ত থেকেই দেশীয় সাম্রাজ্যবাদীরা বাঙলার বুকে অর্থনৈতিক শোষণের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক মানসিক ও আত্মিক শোষণ চালিয়ে যাচ্ছে নির্মমভাবে৷ এই শোষণের অন্যতম হাতিয়ার বলিউড মার্কা সিনেমা ও রাজনৈতিক দলগুলো৷ একবার ভাবুন নীলদর্পণ নাটক, শরৎচন্দ্রের পথের দাবী, বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাস ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল, কারণ ওই নাটক ও উপন্যাস দেশপ্রেমে অনুপ্রেরণা দিত, তাই নিষিদ্ধ করেছিল ওই উপন্যাস ও নাটক৷ আজ বলিউডের সেক্স ভায়োলেন্স মার্কা সিনেমা কি খুন ধর্ষণে প্রেরণা দিচ্ছে না! বলতে বাধা নেই উত্তম-সুচিত্রা, সৌমিত্র, ঋত্বিক, মৃণাল, সত্যজিৎ রায়ের যুগের অবসানের পর টলিউডও বলিউডের গ্রাসে চলে গেছে৷ তাই আজ বলিউডের কোন সিনেমা কত ভালো কিংবা খারাপ বিচার নয়, এই মুহূর্ত থেকে বলিউডকেই বর্জন করা উচিত৷ যে কৃপান আপনার গলা কাটতে আসছে আপনি কি তখন সেই কৃপানের চরিত্র বিচার করবেন সোনার না লোহার! সেই কৃপানকেই রুখতে হবে৷ তাই আজ মানসিক শোষণের অন্যতম হাতিয়ার বলিউড কেই রুখতে হবে, তার কোন সিনেমা ভালো কোনটা খারাপ সে বিচারের সময় আজ আর নেই৷

 অপরদিকে বাঙলার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল গুলোকে দেখুন---দেশ ভেঙ্গে স্বাধীনতা নেওয়ার পর ৭৫ বছর ধরে শুধু দল ভেঙেছে আর দল গড়েছে, ভাই ভাই লড়াই করেছে, ভাই ভাইয়ের বুকে ছুরি বোমা মেরেছে, ভাই ভাইয়ের ঘরে আগুন লাগিয়েছে, হাজার হাজার মা-বোনের হাতের শাখা ভেঙেছে, সিথির সিঁদুর মুছেছে, পাড়ায় পাড়ায় শহীদ বেদী করেছে, আর বাঙলার সম্পদে রাজস্থান গুজরাটের মরুভূমিকে সমৃদ্ধ করেছে৷ এ ব্যাপারে ডান বাম রাম সবাই এক৷ স্বাধীনতার অমৃত মহৎসবে এর বেশি কিছু বাঙলা পায়নি৷

 তাই বাঙালীকে আজ নোতুন করে ভাবার সময় এসেছে৷ প্রাউট প্রবক্তা বিশ্বের প্রতিটি শোষিত নিপীড়িত বঞ্চিত জনগোষ্ঠী কে আর্থিক মুক্তির নতুন পথ দেখিয়েছে--- সমাজ আন্দোলনের পথ৷ পুরাতনের জীর্ণ কঙ্কাল ছেড়ে বেরিয়ে এসে নোতুনের আহবানে সাড়া দিয়ে সমাজ আন্দোলনে না নামলে ভারতে বাঙালী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে যাবে৷