গত কয়েক মাস ধরে প্রায় প্রতিদিনই পেট্রল ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে৷ পেট্রল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি মানে অন্যান্য সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ৷ কারণ তেলের ওপর নির্ভরশীল ট্রাক, বাস প্রভৃতি পরিবহন৷ ভোগ্যপণ্যের পরিবহন খরচ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে তার দাম বাড়বে৷ এমনিতে করোনা সংক্রমণ ও লক্ডাউন বিধিনিষেধের কারণে বহু মানুষের আয়ের দরজা বন্ধ৷ তারপর পেট্রল ডিজেলের দাম দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাওয়া ও তার সঙ্গে তাল রেখে বাড়ছে শাক-সব্জি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম৷ সাধারণ মানুষের ত্রাহি ত্রাহি রব৷
সাধারণ মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত৷ আয়ের উৎস বন্ধ৷ মানুষের হাতে টাকা পয়সা নেই৷ তারপর আমপানের ঘা শুকোবার আগেই ইয়াসের তাণ্ডব৷ এই অবস্থায় গরীব মানুষকে স্বস্তি দিতে যখন সরকারের সাধারন মানুষের পাশে দাঁড়াবার কথা তখন সব কা সাথ সবকা বিকাশের সরকারের কাজে কর্মে ধন কুবেরদের ভাণ্ডার পূর্ণ হচ্ছে আর অসহায় গরীব মানুশ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য ও রাজ্য সরকারের দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভর করে আছে৷
করোনা বিধিনিষেধের কারণে এখনও ট্রেন বন্ধ৷ বাসই একমাত্র ভরসা৷ সরকারী বাসের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য৷ তাই বেসরকারী বাসের ওপরই ভরসা৷ আবার করোনা সন্ত্রাস রুখতে স্যোসাল ডিসট্যান্স মানতে হলে আগের মত গাদাগাদি করে বাসে লোক নেওয়া চলবে না৷ তাই রাস্তায় বেরুতে হবে৷ কিন্তু কীভাবে যাবে? বাসওয়ালারা বলছেন, প্রায় প্রতিদিন ডিজেল-পেট্রলের দাম বাড়ছে, ফলে বাস চালানোর খরচ বাড়ছে৷ এত ক্ষতি করে আমরা বাস চালাতে পারব না৷ তাই বহু বাস মালিক এখন বাস নামাচ্ছে না৷ ফলে জনগণের দুর্র্ভেগের অন্ত নেই৷ এদিকে মানুষের অর্থের প্রয়োজন ঘরে বসে থাকলে চলবে না৷
মানুষের সেবার জন্যেই তো সরকার! ডিজেল ও পেট্রল দেশের অর্থনীতির, বলতে গেলে, প্রাণভোমরা ৷ সেই জ্বালানী তেল নিয়ে সরকারের নীতি বিস্ময়ের উদ্রেক করে৷ আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে তেলের দাম কমেছে,অন্যান্য সব অর্থোন্নত দেশগুলিতে যখন তেলের দাম হ্রাস করা হচ্ছে, তখন ভারতে কীভাবে তেলের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে? এটা কি পুঁজিপতিদের স্বার্থে? অথবা আগামী নির্বাচনের জন্যে অর্থসংগ্রহের নয়াকৌশল৷ মানুষ বাঁচলে তবে না আগামী নির্বাচনেও গদী দখলের স্বপ্ণ? কেন্দ্রীয় সরকারের এই জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে দেশের বিরোধী দলগুলি আন্দোলনে সামিল হচ্ছে৷
কেন্দ্রীয় সরকারের ভেবে দেখা উচিত, পুঁজিপতি স্বার্থ আগে নয়, জনগণের স্বার্থ আগে৷ বিভিন্ন ব্যাপারেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সরকার বড় বড় শিল্পপতিদের স্বার্থেই কাজ করছেন, তাঁদের কথা মতই চলছেন৷ সরকার দেশের সম্পদ খনি, রেল, বীমা প্রকল্প প্রভৃতি ধীরে ধীরে বেসরকারী মালিকানার হাতে ছেড়ে দিচ্ছেন৷
পুঁজিপতিরা জনগণকে বাঁচাবে না৷ ‘টি্ক্ল ডাউন’ তত্ত্ব জনগণেরে কল্যাণে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে৷ পুঁজিপতিদের দয়ায় দেশ বাঁচবে না৷ বরং অর্থনীতির চালিকা শক্তি যাতে জনগণের হাতে থাকে--- সরকারকে তারই ব্যবস্থা করতে হবে৷ সরকার মুখে দেশের জনগণকে আত্মনির্ভর হওয়ার কথা বলছেন৷ আত্মনির্ভরতা মানে পুঁজিপতি নির্ভরতা নয়৷ পুঁজিপতিরা মুনাফা ছাড়া কিছু বোঝে না৷ সরকারের কর্তব্য দেশের জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানো, তাদের অভাব-অভিযোগ , তাদের দুঃখকষ্ট লাঘব করা৷ আর প্রকৃতি মা দেশের সর্বত্র যে সম্পদ দিয়েছেন--- কাঁচামালের সঞ্চয় রেখেছেন, তার ওপর নির্ভর করেই কৃষি, কৃষিনির্ভর শিল্প, কৃষি সহায়ক শিল্পের ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর শিল্প জনগণের যৌথ মালিকানায় গড় তুলতে হবে৷ এ ব্যাপারে সরকারকে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে৷ জনগণকে আত্মনির্ভরশীল হতে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে৷ অর্থনৈতিক শক্তিকে জনগণের মধ্যে বন্টিত করতে হবে, তবে হবে জনগণের সরকার নাহলে তারা হবেন জনগণের সেবকের বেনামীতে জনগণের শোষক৷
- Log in to post comments