প্রাউট ও নব্যমানবতার পথে শোষনমুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে

লেখক
প্রবীর সরকার

আজ সমস্যাসংকূল পৃথিবীর বুকে সকল সমস্যা সমাধানের যে পথটি অনুসরণ করা ও তাকে স্মরণ করে চলার বিশেষ প্রয়োজন হয়েছে, তা হ’ল মহাসম্ভূতি শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী সর্বানুসূ্যত দর্শনের পথ৷ তিনি বলেছেন, ‘সংগচ্ছধবং’ মন্ত্র নিয়ে এক সঙ্গে চলাই হ’ল ধর্ম৷ এক সঙ্গে চলতে হলে সংঘবদ্ধভাবে চলতে হবে৷  মানুষ কুসংস্কার, অজ্ঞানতাবশতঃ, ধর্মান্ধতা জাত-পাতের ভিত্তিতে টুকরো টুকরো হয়ে বিরোধ করছে৷ সেই সব বন্ধ করে এক হয়ে কৃষ্টি, ভাষা, সংস্কৃতির ঐক্যসূত্রে একত্রিত হয়ে সকল প্রকার শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে৷ প্রথমেই মনে রাখতে হবে আমরা সকলেই মানুষ৷ আপেক্ষিক জগতে বৈচিত্র্যের মধ্যে যে ঐক্য বিদ্যমান সেটা হ’ল মানবিক মূল্যবোধ৷একই পৃথিবীর স্তন্যে আমরা পালিত৷ আমাদের তাই মনে রাখতে হবে যে, ‘হর গৌরী আমাদের পিতা মাতা, আর ত্রিভূবন আমাদের স্বদেশ৷৷ ঈশ্বরের সৃষ্ট পৃথিবীতে জীব-জন্তু গাছপালা সকলেই সকলের সঙ্গে পারস্পরিক যুক্ত৷ কেউই গুরুত্বহীন নয়৷ সবাই সবাইয়ের কাছে কোন না কোন ভাবে সম্পর্কিত ও বন্ধনে আবদ্ধ৷

আমাদের সমাজবদ্ধভাবে এগোতে হবে, কারণ এগিয়ে চলাই হ’ল লক্ষ্য৷ থেমে থাকা যাবে না, আর চলাই হ’ল সৃষ্টির প্রবাহ৷ কিন্তু চলার পথে নানান বাধাকে ঠেলে এগোতেই হবে৷ সেটা হ’ল সংগ্রাম৷  সংগ্রামই হ’ল জীবন৷ কিন্তু নানা দিক থেকে নানা বাধা আসে৷ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধা দূর করে চলতে হলে অবশ্যই জীবনে যে সকল শোষণ চলার পথে আসে সেই সার্বিক শোষণমুক্তির আন্দোলন দরকার৷ সামাজিক জীব হিসাবে মানুষকে আন্দোলন করতেই হবে৷ এটাই ‘সমাজ’  আন্দোলন৷ সমাজের বুকে শোষিতদের অবশ্যই শোষকদের চিহ্ণিত করে আন্দোলনের মাধ্যমে এগোতে হবে৷ শোষক স্বার্থান্ধ হয়ে সংকীর্ণ স্বার্থে শোষণ করে তাদের স্বার্থপূরণে৷ এই যে শোষণ, এতে সমাজের বৃহত্তর অংশ শোষিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে৷ তাই সংঘবদ্ধ হয়ে যদি সমাজে বসবাসকারীরা এক হয়ে এগোতে না পারে তাহলে তাদের অগ্রগতি হবে না৷ তারা শোষিতই হবে৷ তাই আজ প্রয়োজন, সমাজের সকল শোষিতদের আর্থিক, সামাজিক, ধর্মীয়, সাংসৃকতিক সকল দিকে যে শোষণ চলছে সেটা বুঝে নিয়ে সকল মানুষ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এক হয়ে তীব্র আন্দোলন৷ সেটার থেকে সরে আসলে চলবে না৷ আজ সামগ্রিকভাবে সামাজিক আন্দোলন দরকার৷ একেই বলে সমাজ আন্দোলন৷

কেউই ছোট নয়, জাত-পাতের মিথ্যা ভেদাভেদ সৃষ্টি করে মানুষ মানুষকে খাটো করে রেখেছে৷ তাই শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী মানবতার মুক্তির জন্যে সমাজ আন্দোলনের আহ্বান করেছেন৷ মানুষ উন্নত আধ্যাত্মিক জীব৷ আধ্যাত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষকে বুঝে নিতে হবে এ জগতে কেউ ছোট নয়৷ সবাই ঈশ্বরের সন্তান আর বসুন্ধরার সকল সম্পদ ভোগ করার অধিকার সকল মানুষের৷ যারা তাদের বঞ্চিত করছে তারা হ’ল শোষক ও অমিত্র৷ তারা বন্ধু নয়, সেটা জানতে হবে বুঝতে হবে৷ আর্থিক, সামাজিক, ধর্মীয়, সাংসৃকতিক সকল প্রকার শোষণমুক্ত হয়ে প্রত্যেক মানুষ আধ্যাত্মিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিপূর্ণ মানুষ হোক---এটাই তাঁর ইচ্ছা৷ তাই শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী সকল মানুষের জন্যে আনন্দমার্গ দর্শন দিয়েছেন৷ আর এই দর্শনেই তিনি প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব দিয়েছেন, যার নাম ‘প্রাউট’ দর্শন---সেটি আর্থিক ও সামাজিক দর্শন৷

অধিকার অর্জন করতে হয়, অধিকার কেউ দেয় না৷ পৃথিবীর বুকে একদল মানুষ কোটি কোটি মানুষকে শোষণ করে সম্পদ ভোগ করছে৷ সেটা হচ্ছে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক সমাজব্যবস্থা৷ জড়বাদী সাম্যবাদী নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের নাম করে বিশেষ এক পার্টির একনায়কতন্ত্র চলে৷ সেটাও কোনভাবেই কাম্য নয়৷ তাই প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র হ’ল মানুষের এগিয়ে চলার একমাত্র পথ৷ সবাই বাঁচুক ও সবাইকে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়াই হ’ল মানবতার ধর্ম৷ শোষণমুক্ত হয়ে সমাজগুলি যখন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে তখনই সেই এক বিশ্বরাষ্ট্র সৃষ্টি হবে৷ ভারতের ৪৪টি সমাজ আর পৃথিবীর প্রায় ২৫০টি সমাজ ইয়ূনিটগুলি সব দিক থেকে সার্থক স্বয়ংসম্পূর্ণ অঞ্চল হয়ে গড়ে উঠুক৷ সেখানে কেউ ছোট নয়৷

সমাজের মুক্তি আনবে প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র৷ গণতন্ত্র মন্দের ভাল৷ কিন্তু গণতন্ত্র যদি দলীয় রাজনৈতিক দলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ও ধনীদের অঙ্গুলী হেলনে চলে তাহলে গণতন্ত্র কখনই কল্যাণের পথ দেখাতে পারবে না৷ যদি সৎ নীতিবাদী, আধ্যাত্মিক পথের পথিকগণ সেবক হিসাবে গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করেন ও সমবায় আন্দোলনকে উৎপাদন ও বণ্টনে অগ্রাধিকার দেয়, তাহলে সমাজে সামাজিকীকরণ আনতে পারে ও আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণের কল্যাণধর্মী কিছু আলো মানুষ দেখতে পাবে, নচেৎ নয়৷ দীর্ঘ ৭৭ বছরে গণতান্ত্রিক শাসনে হতভাগ্য মানুষ ভারতে ভিখারী থেকে আরও ভিখারী হয়েছে৷ লোভী শাসকগণ নিজেদের স্বার্থে তাদের অন্ধকারের দিকে কি টেনে নিয়ে যাচ্ছে না? আজ দলতন্ত্রের সর্বনাশা অবৈজ্ঞানিক পথে গণতন্ত্র কি ধর্ষিত হচ্ছে না? এর সদুত্তর কে দেবে? বর্তমান পৃথিবী ধনতান্ত্রিক শোষণে অক্টোপাশের ববন্ধনজালে আবদ্ধ৷ মুক্তির পথ হ’ল প্রাউটের প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র৷

 

মানুষ বিশ্বৈকতাবাদী হবে

শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি

গত রাতে আমি এই পরিদৃশ্যমান জগতে বিভিন্ন সম্ভাবনাপূর্ণ অস্তিত্ব, যেমন---অণু মানসসত্তা ও চিতিসত্তা সম্পর্কে বলেছিলুম৷ পরম চিত্তিশক্তির যে অন্তর্মুখী গতি (বহির্মুখী গতিতে পঞ্চভৌতিক জগতের উৎপত্তি) তারই এক স্তরে মানুষের সৃষ্টি৷ এই অন্তর্মুখী গতি পরম চিতিশক্তিতে ফিরে আসার জন্যে৷

এখন আমরা জানি শক্তির ঘনীভূত রূপ হচ্ছে জড় বস্তু৷ আবার এই জড়তত্ত্ব চুর্ণীভূত হলে (সূক্ষ্মত্বের পথে চলতে থাকলে) মনের উৎপত্তি হয়৷ ধর, তোমাকে খুব কষ্টকর শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে হচ্ছে৷ এতে স্বাভাবিক ভাবে তুমি এক সময় পরিশ্রান্ত হয়ে পড়বে৷ কিন্তু তুমি যদি একনাগাড়ে দশ-বারো ঘণ্টা ধরে বৌদ্ধিক শ্রমের কাজ করতে থাক তাহলেও তুমি ক্লান্তিবোধ করবে৷ েেসক্ষেত্রে তুমি শরীর মন দু’য়েতেই ক্লান্তি অনুভব করবে৷ তাই নয় কি?

তাই মানুষের শরীর কেবলমাত্র একটি জড়াধারই নয়, এটি মানসাধার ও আত্মিক অস্তিত্বও বটে৷ আসলে এই আত্মিক অস্তিত্বের ব্যাপারটা একটু অন্যরকম৷ মানুষের আছে পাঞ্চভৌতিক দেহ আর আছে মানসদেহ যাতে আছে বিভিন্ন স্তর বা কোষ---স্থূল-সূক্ষ্ম-কারণ ইত্যাদি৷ কিন্তু আধ্যাত্মিক অধিক্ষেত্রে কোন দেহ বা আধার থাকতে পারে না৷ আধ্যাত্মিকতা হচ্ছে সাক্ষীতত্ত্ব যা দেহভূত কোন সত্তা হতে পারে না৷

কিন্তু এই সাক্ষীতত্ত্ব অবশ্যই শরীর ও মনের সঙ্গে সর্বদা সম্বন্ধিত হয়ে থাকছে৷ তোমর শরীর যা কিছু করছে আত্মা তার সাক্ষী হয়ে সব দেখছে, জেনে যাচ্ছে৷ অনুরূপভাবে তোমার মানসদেহেরও সব চিন্তাভাবনা সাক্ষী হচ্ছেন আত্মা৷

যখন এই সাক্ষীতত্ত্ব কোন ব্যষ্টিসত্তার সাক্ষীস্বরূপ হয়ে থাকে তখন তাকে বলা হয় জীবাত্মা বা অণুচৈতন্য৷ আর যখন তা সামূহিকভাবে এই বিশ্বের সব কিছুর জ্ঞাতা তখন তা পরমাত্মা বা পরম চৈতন্যসত্তা৷ তাই এই পরম চৈতন্য হচ্ছেন পরমপুরুষ, পরমপিতা অণুচৈতন্য হচ্ছেন জীবাত্মা৷

অণু ও ভূমার মধ্যে এখানেই পার্থক্য হয়ে যায়৷ অণুচেতন্য বা জীবাত্মা, অণুমন বা দেহ কী করছে তা জানতে পারছে৷ ধর, কেউ একজন একাদশী তিথিতে নির্জলা উপবাস করছে৷ সে একটি ঘরে বসে লুকিয়ে চকোলেট খেয়ে নিলে৷ সে ভাবছে কেউ জানতে পারল না৷ কিন্তু তা নয়৷ জীবাত্মা সঙ্গে সঙ্গে এটা জেনে যাবেন যে সে লুকিয়ে চকোলেট খেল৷ আর জীবাত্মা জানবেন বলেই পরমাত্মাও জেনে যাবেন যে ওই মানুষটি একটা ঘরে বসে লুকিয়ে চকোলেট খেল, আর সে মনে মনে ভাবছে উপবাসের দিনে তার চকোলেট খাওয়া কেউ জানতে পারল না৷ না, তাঁর কাছে কিছুই লুকোনো থাকে না৷

ধর ‘ক’ নামে একজন মনে মনে ভাবল---‘আজ রাতে আমি জেনারেল দর্শনে যাব না আর ‘বাবা নাম কেবলম্‌’  কীর্ত্তনও করব না’ কিন্তু ‘ক’ এর এই চিন্তাতরঙ্গ পরমপিতার কাছে তৎক্ষণাৎ পৌঁছে যাবে৷ তিনি বলবেন---‘‘হুঁ ‘ক’ এই ভাবছে৷ আচ্ছা আজ থেকে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে দাও যে ‘ক’ কোনদিনই জেনারেল দর্শনে যোগদান করতে পারবে না৷’’ তাই তার কাছে গোপন বলে কিছু থাকতে পারে না৷

এখন আধ্যাত্মিক সাধনা হচ্ছে অণুস্তিত্বকে ভূমাস্তিত্বে রূপান্তরিত করা৷ ব্যাপারটা আরো স্পষ্ট করে বলি৷ প্রতিটি অণুসত্তা সীমার ন্ধনে আদ্ধ৷ আর যা সীমিত তা সত্ত্বগুণ৷ রজোগুণ ও তমোগুণ---এই ত্রিগুণের পরিসরে এসে যাবেই৷ যখন মনের বিষয় বাobject কোন সীমিত বা ক্ষুদ্র সত্তা তখন তার বিষয়ীভূত  counterpart হচ্ছে অণুচৈতন্য৷

যখন কোন ক্রিয়া সংঘটিত হয় তাতে থাকে দু’টি সত্তা---বিষয় (object) আর বিষয়ী (subject)৷ দৃষ্ট বস্তু হচ্ছে বিষয় দ্রষ্টা হচ্ছে বিষয়ী আর এদের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে থাকছে দর্শন রূপ কার্য (act of seeing)৷ এখন বিষয় যেখানে সীমায়িত বা ক্ষুদ্র তখন বিষয়ী হচ্ছে জীবাত্মা৷ কিন্তু বিষয় যখন অসীমিত বা অনন্ত তখন  বিষযী অবশ্যই হবেন অনন্তসত্তা অর্থাৎ ভূমাচৈতন্য৷

তাই সাধনা হচ্ছে এই ক্ষুদ্র বিষয়কে অনন্ত বিষয়ে পরিণত করা৷ তুমি যখন এটুকু ভাব---‘এই ক্ষুদ্র শরীরটা আমার’---তুমি তখন জীবাত্মা৷ আর যখন তুমি ভাব বা ভাবতে পার,  এই বিশাল মহাবিশ্ব আমার’---তুমি তখন হয়ে গেলে পরমপুরুষ৷ প্রথম ক্ষেত্রে তুমি অণুমনের সবকিছু জেনে যাবে৷ কিন্তু যখনই এই মহাবিশ্ব তোমার বিষয় হয়ে যাবে তুমি তখন এই ব্রহ্মাবাণ্ডের সব রহস্য জেেন যাবে৷ তাই তোমার সাধনা হচ্ছে ক্ষুদ্রকে বৃহতে  রূপান্তরিত করার অনুশীলন৷

সাধনার মধ্যে দিয়ে নিজেকে রূপান্তরণের এই যে প্রয়াস তাই মানুষকে  বিশ্বমানবতার  পূজারী করে তোলে৷ এই ভাবেই তার মন দেশকালপাত্রের সীমা ছাড়িয়ে অসীমের দিকে ধাবমান হয়৷ সেই অবস্থায় সে শুধু সর্বশক্তিমান হয়ে যায় তাইই নয়৷ সে সর্বজ্ঞত্বত্ত অর্জন করে৷ সে গাদা গাদা বই না পরেও সব কিছু জেনে যায়৷

অণুর ক্ষেত্রে কোন রকমের জ্ঞান অর্জন করতে গেলে একজন মানুষকে অনেক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, অন্য মানুষের সাহায্য নিয়ে ও পুস্তকের মাধ্যমে অনেক কিছু শিখে নিতে হবে৷ তাছাড়া অণএসত্তাকে নানা আশা-নিরাশা, অনেক রকম সংঘর্ষ-সমিতির মধ্যে দিয়েও যেতেহবে৷

কিন্তু পরমপুরুষের ক্ষেত্রে কোন হতাশা, কোন সংঘর্ষ-সমিতির প্রশ্ণ থাকে না৷ কেননা ভূমার ক্ষেত্রে সবকিছু আভ্যন্তরীণ সবকিছুই তাঁর মনের মধ্যে, কোন কিছুই ভূমার বাইরে নেই, সমগ্র মহাবিশ্ব ভূমার মানসসত্তার অঙ্গীভূত হয়ে আছে, তাই এই ক্ষেত্রে কোন দ্বিতীয় সত্তা থাকতে পারে না৷ সেই জন্যে কোন সংঘর্ষ-সমিতির প্রশ্ণও ওঠে না৷

তাই কেউ যদি মানসিক শান্তি পেতে চায় তাহলে তাকে কি করতে হবে? তাকে তার ক্ষুদ্র অস্তিত্বকে বৃহৎ অস্তিত্বে রূপান্তরিত করতে হবে৷ মানসিক শান্তি পাওয়ার আর দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেই৷ শুধু শান্তির বাণী প্রচার করলেই মানুষের জীবনে শান্তি আসবে না৷ তোমাকে এই জন্যে নিজের ক্ষুদ্রত্বকে বিসর্জন দিয়ে বৃহত্বে পর্যবসিত হতেই হবে৷

(লিঁয়, ফ্রান্স, ৩রা জুন, ১৯৭৯, সকাল)

 

জড়তার মুক্তি

শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকাব

গত পরশু সন্ধ্যায় রেণেশাঁ ক্লাবের সভায় আলোচ্য বিষয় ছিল ‘‘ বুদ্ধির মুক্তি’’৷ কারো কারো মনে প্রশ্ণ জাগতে পারে---মুক্তি তো মানুষের জন্যে প্রয়োজন৷ বুদ্ধির মুক্তি আবার কী রকম কথা৷ বুদ্ধি জিনিসটা হ’ল অমূর্ত বা ভাববাচক৷ যা অমূর্ত যা ভাববাচক তার আবার মুক্তি কী! এই প্রসঙ্গে আমার অভিমত হ’ল---হ্যাঁ, বুদ্ধিরও মুক্তির প্রয়োজন আছে বৈকি৷ এই জগতে যা কিছু রয়েছে---জড়, ভাব, চেতন, সকলেরই মুক্তি চাই৷ মুক্তি না ঘটলে বস্তু বা ব্যষ্টির স্বাভাবিক স্ফূরণ ঘটে না অর্থাৎ যার মধ্যে যে গুণ রয়েছে, যে সামর্থ্য রয়েছে সেই গুণ বা সামর্থ্যের পূর্ণ বিকাশ, পূর্ণ অভিপ্রকাশ যদি দেখতে চাই তাহলে সেই ব্যষ্টি বা বস্তুর মুক্তি অপরিহার্য৷

মানুষ জড়তার বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে চায়৷ এখন এই মুক্তি জিনিসটা কেমন ধারা৷ মানুষের এই যে জড় শরীরটা সেটা থেকে তো মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়৷ শরীর থেকে মুক্তি মানেই মৃত্যু৷ কিন্তু জড়তার যে বন্ধন তা’ থেকে মুক্তি লাভের জন্যে প্রয়াস অবশ্যই করতে হবে৷ জড় জগতে যে অর্থনৈতিক বন্ধন, রাজনৈতিক দাসত্ব, নানান ধরণের সামাজিক পরাধীনতা---এসব থেকে মুক্তিলাভের যে প্রয়াস সেটাই হ’ল জড় জগতের মুক্তি৷ এই ধরণের জাগতিক বন্ধনমুক্তির জন্যে মানুষকে চেষ্টাশীল হতে হবে৷ কোন দেশ যদি অপর দেশের কাছে পরাধীন থাকে তো সেই পরাধীনতার দাসত্ব-শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হার জন্যে সংগ্রাম অবশ্যই করতে হবে৷ তাই এই জাগতিক বন্ধন-মুক্তি মানুষের পক্ষে অত্যাবশ্যক৷ আমরা দেখেছি, যেখানে জাগতিক পরাধীনতা---সেটা অর্থনৈতিক হোক, রাজনৈতিক হোক, সামাজিক হোক--- সেখানে মানুষের অন্তর্নিহিত গুণগুলো বা তার প্রতিভার সম্যক্‌ বিকাশ সুদূরপরাহত হয়৷ তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মুক্তি চাই, জড়ের বন্ধন থেকে মুক্তি তো চাই-ই৷

জড়ের চেয়ে সূক্ষ্ম হ’ল মন৷ মানসিক দাসত্ব থেকে মনকে মুক্ত করতে হবে৷ আমরা দেখতে পাই, মানুষের সমাজে কত রকম মানসিক চাপ, কত রকম শোষণ চলেছে৷ এই শোষণ, এই অত্যাচার, এই মানসিক বন্ধন থেকে মুক্তির জন্যে মানুষকে অবশ্যই প্রয়াসশীল হতে হবে৷ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মুক্তিলাভের এষণা মানুষ মাত্রেরই এক স্বাভাবিক ধর্ম৷ মানব মনের যা সার অংশ তার নাম বুদ্ধি৷ বোধিকে ঠিক মনের সারাংশ লতে পারি না৷ বাস্তবে বোধি মনের চেয়েও সূক্ষ্ম ও এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ বোধিকে বলতে পারি একাদশ সত্তা অথবা ষষ্ঠেন্দ্রিয়৷ বৌদ্ধিক জগতে এই যে শুদ্ধাশুদ্ধ, নিত্যানিত্য, শুচ্যশুচি বিচার---এর একটা মাপকাঠি রয়েছে৷ এই যে মাপকাঠি, এটাকে অবশ্যই নিষ্কলুষ থাকা দরকার৷ জড় জগতে বুদ্ধির ওপর নানান ধরণের শোষণ ও অত্যাচারের বন্ধনহেতু এক রুদ্ধ বেদনায় মানুষের অন্তরাত্মা কাঁদতে থাকে৷ ঠিক তেমনি মানসিক জগতে চিন্তা করার যে শক্তি মানুষের থাকা উচিত সেই শক্তিকেও ছিনিয়ে নেওয়া হয়৷ আবার ঠিক তেমনি বৌদ্ধিক ক্ষেত্রে মানুষ যেখানে পারমার্থিক তথা প্রজ্ঞার বিকাশের জন্যে চিন্তা-ভাবনা করতে চেষ্টা করে সেখানে ভাবজড়তা(dogma) এসে বাধা সৃষ্টি করে৷

এখন এই ভাবজড়তা জিনিসটা কী?---না, সেটা হ’ল পূর্ব-নির্ধারিত ভাববিশেষ যার বাইরে মানুষকে যেতে নিষেধ করা হয়৷ এই পরিস্থিতিতে মানুষের বুদ্ধি পুরোপুরি কাজ করতে পারে না৷ কেউ কেউ বলে, ঠিক আছে, পুরো উপযোগ না পেলেও শতকরা দশ-বিশ ভাগ তো পেতে পার৷ কিন্তু আমার অভিমত হ’ল যে ভাবজড়তার ফলে মানব-মনীষার দশ-বিশ ভাগ অংশও ঠিকমত কাজে আসে না৷ যে অল্প একটু মানুষের কাজে আসে সেটা ঠিক খাঁটি জিনিস নয়৷

মানুষের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে তার মনন শক্তি, তার বুদ্ধি৷ এই বুদ্ধিকে আমি পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারব না---এর চেয়ে বেদনাদায়ক পরিস্থিতি আর কী হতে পারে৷ তাই মনের মুক্তি চাই ও তারও আগে বুদ্ধির মুক্তি চাই৷ ভাবজড়তার ব্যাপারটা হ’ল এই রকম ঃ বুদ্ধি একটা বিশেষ রাস্তা দিয়ে চলতে চাইছে এমন সময় ভাবজড়তা চারদিকে এসে যেন বলছে---না, না, তুমি ওধারে যেতে পারবে না৷ ভাবজড়তা বলে ঃ না ওধারে এক পা-ও বাড়িয়ো না৷ যদি যাও তো তোমাকে অনন্তকাল নরকাগ্ণিতে জ্বলে পুড়ে মরতে হবে, অনন্তকাল তোমার নরক বাস হবে৷ বুদ্ধি যখন জাগতিক সম্পত্তির পুরোপুরি  উপযোগ নিতে চায়, তখন ভাবজড়তা এগিয়ে এসে যেন লে---না, এটা করা চলবে না৷ মানুষের পক্ষে এটা ক্ষতিকর, অপবিত্র৷ এতে মনুষ্যত্ব খর্ব হবে৷

মানুষের বুদ্ধি যখন পূর্ণ উদ্যমে মানুষভূমিতে সাহসিকতাপূর্ণ কোন কাজ করতে তৎপর হয় তখন এই ভাবজড়তা যেন এসে লে---না, এমনটা করা চলবে না, এতে তোমার সর্বনাশ হয়ে যাবে৷ অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি পদক্ষেপে এই ভাবজড়তা মানুষের মনের ওপর, বুদ্ধির ওপর চাপ সৃষ্টি করে৷ তাই যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা বুদ্ধিকে বন্ধনমুক্ত করতে না পারছি ততক্ষণ বুদ্ধিকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি না৷ তাই মানবতার সেবার জন্যে এই বুদ্ধিকে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে, ভাবজড়তা থেকে, নানাবিধ অশুভ প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে৷ যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন মানুষ জাতির ভবিষ্যৎ স্বর্ণোজ্জ্বল হতে পারে না৷ যদি আজকের মানুষের সামনে স্বর্ণিম প্রভাত আনতে হয় তাহলে অসীম সাহসে ভর করে এই ভাবজড়তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বুদ্ধির সর্বাত্মক বন্ধন-মুক্তি ঘটাতে হবে৷ আর সেইজন্যেই আজ পৃথিবীর সকল প্রান্তেই আমাদের সমস্ত কণ্ঠে কেবল একটি উদ্‌ঘোষই যেন ধবনিত প্রতিধবনিত হয়---‘‘ভাবজড়তা আমরা মানি না, মানব না’’৷

(অভিমত, ৪/১১১ সন্ধ্যাবেলা, পটনা, ২৮শে জানুয়ারী, ১৯৮০)

 

অর্থনৈতিক গণতন্ত্রই একমাত্র বিকল্প

প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই  বিভিন্ন ভাবে কি কেন্দ্রীয় সরকার কি রাজ্য সরকার দরিদ্র্য জনসাধারণের সমস্যা সমাধানের নামে নানা ধরণের চমক দিয়ে চলেছেন৷ কিন্তু স্বাধীনতার পর ৭৭ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল আজও গরীব জনসাধারণের দুর্দশার অন্ত নেই৷ আসলে পুঁজিবাদ বা মার্কসবাদ–এদের কোনটাই দরিদ্র মানুষের যথাযথ কল্যাণ করতে পারবে না৷ আর ভারতবর্ষে না পুঁজিবাদ, না মার্কসবাদ, মিশ্র অর্থনীতির নামে বক–কচ্ছপ অবস্থা ভারতীয় অর্থনীতির৷ তাই হাল ফেরাতে দেশের অর্থনীতির নিয়ামকদের প্রাউটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া উচিত৷

প্রাউটের অর্থনীতির গোড়ার কথা হ’ল, বিশ্বের প্রতিটি মানুষের নূ্যনতম চাহিদা পূরণকে সুনিশ্চিত করা ও উত্তরোত্তর তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ও দেশ–কাল–পাত্রের পরিবর্ত্তনের সঙ্গে তা সঙ্গতিপূর্ণ হয় তার ব্যবস্থা করা৷

নূ্যনতম চাহিদা বলতে প্রাথমিকভাবে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান ও শিক্ষার কথা আসে৷

এগুলো একটা মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে অত্যাবশ্যক প্রাথমিক চাহিদা৷ অস্তিত্বটাই জীবনের সমস্ত কিছু নয়, এটাও ‘প্রাউট’ মানে৷ তার জীবনের বিকাশ (ভাতি) চাই৷ তারপর দেখতে হবে, মানুষ যেন তার জীবনে পরম আনন্দ লাভ করতে পারে৷ কিন্তু প্রথমে তার যা চাই  তা হ’ল অস্তিত্ব রক্ষার জন্যে অত্যাবশ্যক অন্ন–বস্ত্রাদি প্রাথমিক উপাদান সমূহ৷

প্রাউট প্রবক্তা বলেছেন, ‘‘প্রতিটি মানুষের সর্বনিম্ন প্রয়োজন মেটাবার দায়িত্ব সমাজের কিন্তু যদি এই দায়িত্বের প্রেরণায় প্রেষিত হয়ে প্রত্যেকের গৃহে অন্ন প্রেরণের ব্যবস্থা করে, প্রত্যেকের জন্যে গৃহ–নির্মাণ করিয়ে দেয়, সেক্ষেত্রে ব্যষ্টির কর্মপ্রচেষ্টায় ভাঁটা পড়বে – সে ক্রমশঃ অলস হয়ে পড়বে৷ তাই সর্বনিম্ন প্রয়োজন মেটাতে গেলে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন নিজ সামর্থ্য মত পরিশ্রমের বিনিময়ে মানুষ যাতে সেই অর্থ উপার্জন করতে পারে সেই ব্যবস্থাই সমাজকে করতে হবে ও সর্বনিম্ন প্রয়োজনের মানোন্নয়ন করতে হলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়াই হবে তার প্রকৃষ্ট উপায়৷’’

এখন, প্রতিটি মানুষের নূ্যনতম চাহিদা পূরণ করতে হবে – এটা হ’ল প্রাউটের মূল নীতি৷ এখন এই ‘নীতি’–কে বাস্তবায়িত করা হবে কীভাবে? এ ব্যাপারে প্রাউট কী বলছে – তা আমাদের জানা দরকার৷

বর্তমান সরকার ভেবেছেন দেশের গরীব মানুষকে চাল বা বিভিন্ন ভাবে কিছু দান দক্ষিণা দিয়ে তাদের সমস্ত সমস্যার সমাধান করে দেবেন–এটা আসলে জনগণের কাছে সস্তায় বাহাদূরী পাওয়ার বা ভোট সংগ্রহের উপায়ও হতে পারে, কিন্তু এতে জনগণের যথার্থ কলাণ হবে না৷ যেমন, নামমাত্র মূল্যে চাল/গম দিলেই কি খাদ্য সমস্যা মিটে যায়? খাদ্যের জন্যে কি চাল/গম ছাড়া আর কিছুর প্রয়োজন নেই? মানুষের পুষ্টির জন্যে শ্বেতস্বার কার্বোহাইড্রেট ছাড়া প্রোটিন, বিভিন্ন ভিটামিন প্রভৃতি অত্যাবশ্যক, আর তা না হলে পুষ্টির অভাবে মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়বে৷ আর সেই রেশনের কারণে মৃত্যুও প্রকৃতপক্ষে অপুষ্টিজনিত মৃত্যু অর্থাৎ খাদ্যাভাবে মৃত্যুর নামান্তর মাত্র৷

আর, সরকারী কোষাগার উজাড় করে কেবল দানছত্র খুলে চললে অচিরেই কোষাগার খালি হয়ে যাবে৷ এটা সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে মানা যায় কিন্তু স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না৷ কারণ, সরকারী কোষাগারের তো জনগণের প্রদত্ত করের অর্থেই তৈরী হয়েছে৷ তাই কোষাগার ক্রমশঃ শূন্য হয়ে যাওয়া মানে শেষে ‘ঋণ করে ঘি’ খাওয়ার দশা হবে৷ তারপর দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে৷

জনসাধারণের নূ্যনতম চাহিদা পূরণ কেবল সস্তায় বা বিনা ব্যয়ে চাল/গম প্রাপ্তিতে হবে না, চাই অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসগৃহ ও শিক্ষা৷ আর এ সব করতে গেলে অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়ণ চাই৷ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ণ ছাড়া এর কোনো স্থায়ী ‘শটকার্ট’ পদ্ধতি নেই৷ প্রাউটের মতে জনসাধারণের নূ্যনতম চাহিদা পূরণ করতে গেলে সর্বপ্রথম যা করণীয় তা হ’ল – জনগণের ১০০ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা৷

কিন্তু বর্তমান পুঁজিবাদ নির্ভর কেন্দ্রীত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় তা কখনও সম্ভব নয়৷ প্রাউট তাই অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের কথা বলে৷

বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে রাজনৈতিক গণতন্ত্র বলা চলে, যা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়৷ কারণ রাজনৈতিক গণতন্ত্র বোটাধিকার দিলেও জনগণের  অর্থনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে৷ শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক গণতন্ত্র আজ চরম ধোঁকাবাজিতে পরিণত হয়েছে৷ উন্নয়নের নামে কেবল ফাঁকাবুলি আর স্তোক বাক্য   শোনান হয়৷ প্রাউট তাই অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা চায়৷ অর্থাৎ জনগণের অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘটন করে আর্থিক ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দেওয়া সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলি তৈরী হবে জনগোষ্ঠী গত বৈশিষ্ট্য ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, আর্থিক সমস্যা, সম্ভাবনা প্রভৃতি বিষয়গুলি বিবেচনা করে৷ তাই প্রাউটের শ্লোগান–রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ধাপ্পা বাজি নয়, চাই অর্থনৈতিক গণতন্ত্র, শোষণমুক্ত সমাজ৷

 

গণতন্ত্রে সাম্প্রদায়িকতার পূজারী দলতন্ত্র অচল হয়ে পড়েছে

 প্রভাত খঁ

সাধারণ নির্বাচনটাই হলো এদেশে বিশেষ করে শাসক দলগুলোর কাছে এক চরম পরীক্ষা অস্তিত্ব রক্ষায় নিজ নিজ গদী রক্ষার্থে৷ যদি গদী যায় তাহলে দলও শেষ হয়ে যাবে৷ তাই এই পরীক্ষায় দলগুলোর লক্ষ্যই হলো জয়ী হওয়া যেন তেন প্রকারেণ৷ ছলা, কলা আর প্রতারণাটা হলো জয় লাভের হাতিয়ার৷ আর নির্বাচনকে এমনভাবে নিয়ে যাওয়া যাতে প্রতিদ্বন্দ্বীরা হেরে যায়৷ তাই সব শাসক দল এটাকে নাম দিয়েছে খেলা৷ যেটা এক ধরণের পরিহাস! রাজধর্ম রাজনৈতিক দলগুলো পালনের কথা ভুলে যায় ইচ্ছাকৃত ভাবেই বিরোধী দলগুলিকে অবহেলা করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা! আর ঝুড়ি ঝুড়ি প্রতিশ্রুতি দেওয়া যেগুলির মাত্র সামান্য ভগ্ণাংশ পালন করা হয় বোটের পর৷ জীতলে ২কোটি বেকারদের চাকুরী দেওয়া হবে এটা তাদের মন কি বাত৷ এটা প্রতিশ্রুতি নয় তাই দীর্ঘ ১০ বছরে কয়েক কোটি বেকারের কত জনের চাকুরী হয়েছে৷ এটা ছিল মোদির দেশের যুব সমাজের সঙ্গে প্রতারণা বিশেষ৷ এটা করাটা কি ঠিক হয়েছে? এবার এসেছে সেই---কথা ‘একদেশ একবোট’ এই দেশহলো ---যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার দেশ৷ বৈচিত্র্যেভরা এই উপমহাদেশ৷ উত্তর-দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে কিছুতেই এক নয় ভাষায়, কৃষ্টি সংস্কৃতিতে, এমনকিপূর্ব ও পশ্চিম ভারতের সঙ্গে  হিন্দী গোবলয়েরও কোন যোগসূত্র নেই তেমনটা ভাষায় খাওয়া দাওয়া আচার অনুষ্ঠানে৷ তবু কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক এটা হয়েছে ইংরেজ শাসনের মুখ্যত কারণে৷ ভারতের সংবিধানটি মহাভারতের মতো বিরাট!

নানা ধর্মমত এই দেশে তাই সংবিধান ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ বলে ঘোষনা করেছেন৷ আর মহান বাবা সাহেব আম্বেদকর মহান ও জ্ঞানী ও গুনী ব্যষ্টিগন ২৪৮ জন সংবিধান রচয়িতা৷ এই বিজেপির প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এটি খুব ভালো বুঝতেন তিনি হলেন মাননীয় অটল বিহারীজী৷ তিনি রাজধর্ম সুষ্ঠুভাবে পালন করতেন৷ বিরোধীদের মান্যতা দিতেন৷ সকল ভাষাকে সম্মান করতেন৷ হিন্দী ভাষা নিয়ে আর হিন্দুত্ববাদ নিয়ে মাতামাতি কোনদিনই করেননি৷ তাই তিনিই সার্থক প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷ তাঁকে সারা ভারত সার্থক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে স্বীকার করেন৷ তাই মনে হয় বিজেপির সরকারকে সারা ভারত শাসনে জনগণ সুযোগ দেন৷ কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সেদিকের ধার ধারেননি, বিরোধীদের তিনি অগ্রাহ্য করেন৷ দেশের কোটি কোটি দরিদ্র নাগরিকদের তিনি জি.এস.টি, অত্যধিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে ধনীদের সুযোগ দিয়ে দেশকে রক্তশূন্য করেছেন৷ তিনি বিচার বিভাগকে অমর্য্যাদা করে চলেছেন৷ সংখ্যাধিক্যের জোরে যা ইচ্ছা তাই করে চলেছেন! দলীয় স্বার্থে কতো টাকা ও শাসনের কারণে কতোটাকা খরচ হয়েছে৷ এ.ডি.আর রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৭-১৮ থেকে ২১-২২ পর্যন্ত নির্বাচনী বন্ড বাবদ ৫,২৭২ কোটি নির্বাচনী বন্ড থেকে পেয়েছেন৷ আর সমস্ত দলগুলি পেয়েছে মাত্র ১৭৮৩ কোটি টাকা৷ এর হিসাব ও কারা এই টাকা দিয়েছেন তার সুষ্টু সংবাদ পাবার কি কোন নাগরিকদের সুযোগ আছে? যেহেতু এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তাই এই ব্যাপার স্বচ্ছতা থাকাটা আবশ্যিক৷ কারণ রাজনৈতিক দলগুলি ও শাসকগণ দেশকে শাসক করেন তাঁদের দ্বারা যাঁরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি৷

 

অত্যন্ত লজ্জার কথা ভারতের মতো বিশাল দেশে সবদিক থেকে স্বচ্ছতা থাকাটাই কাম্য৷ কর্র্পেরেট সংস্থা যেগুলি মূলতঃ ধনীরাই মালিক তারাই রাজননৈতিক দলগুলি যারা সরকার চালায় তাদের হাতে রাখতে নিজেদের কারবার বৃদ্ধি করতেই শাসকদলকে আর্থিক সাহায্য করে৷ তাই প্রকারান্তরে তারাই হলো দেশ শাসনের নাটের গুরু৷ এব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য কোন সংস্থা নেই৷ ফলে গণতন্ত্রটাই যেন একটা প্রহসনে পরিণত হয়েছে এই উপমহাদেশ৷ দেখা যাচ্ছে সেই টাকার জোরেই নির্বাচন হচ্ছে আর টাকার জোরেই দেশের মুষ্টিমেয় ধনীরাই দেশের পরোক্ষভাবে শাসনের হাল ধরে আছে৷ মহামান্য আদালত তাই তদন্ত সংস্থাগুলিকে স্বাধীন সংস্থা করার কথা বলেন স্বচ্ছতা, বজায় রাখতে গণতন্ত্রে৷ তা হচ্ছে না! দলীয় রাজনীতিতে মুষ্টিমেয় লোক প্রথম থেকেই কর্ত্তৃত্ব করে আসছেন তাই নোংরা, দলবাজি, কুৎসা রটনা ইত্যাদিতে মত্ত ঐ রাজনৈতিক দলগুলি৷ তাই সরকার দলের, দলের জন্যও দলের দ্বারা আর জনগণ এখানে একধারে পড়ে মার খাচ্ছে আর শোষিত হচ্ছে! অত্যন্ত দুর্ভাগ্যর কথা দেশের দলীয় সরকারগুলো নির্বাচনে টাকার খেলা খেলছে বর্তমানে৷ দলীয় সদস্য সংখ্যার জোরে আর টাকার জোরে নির্বাচন নামক কর্মকাণ্ডটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে! এবারে তাই সরকার কেন্দ্রের হিন্দুত্ববাদীরা লোকসভা নির্বাচনে জিততে মরিয়া লোকসভায় ধবনি বোটে বিল পাশ করিয়ে একসঙ্গে রাজ্যগুলির ও কেন্দ্রের লোকসভার নির্বাচন করে সারাভারতে অধিকাংশ রাজ্যে ও কেন্দ্রে গদীতে আসার সচেষ্ট হবে৷ এটা প্রায় সব বিরোধী দল সন্দেহ করছে, কারণ বিরোধীদের তেমন টাকার জোর নেই, তেমনটা তারা ঐক্যবদ্ধও নয়৷ তবে ভারতের মহান সচেতন নাগরিকগণ এটা ভালো করে বুঝে নিয়েছেন তাই সিদ্ধান্ত তাঁরা  তাঁদের মতো নেবেন৷ আজও প্রায় ৩০শতাংশ নাগরিক আছেন তাঁরা রাজনৈতিক দলগুলি নোংরামী মোটেই পছন্দ করেন না৷ তাঁরা ধান্দাবাজদের উপযুক্ত জবাব দিতে তৈরী৷ দলীয় শাসকগণ কোন দিনই সংবিধানকে শ্রদ্ধা করে নি আর করার মানসিকতাটাও নেই৷ দলতন্ত্রে দলনেতা নেত্রী আর ধনীরাই খেলোয়াড়, তাই এই খেলাটা হবে অন্যভাবে৷ গণতন্ত্র বাঁচবে তখনই যখন শাসনে সৎনীতিবাদীরা এগিয়ে আসবে দেশকে উন্নত করতে আর জনসেবাকেই প্রাধান্য দিতে আর বুঝিয়ে  দিতে হবে ধনতন্ত্র নয় সমাজতন্ত্রটাই হলো গণতন্ত্রের সার্থকতার চাবিকাঠি৷ তাই দেশের নীতিবাদীরা এক হও৷ মানুষ মানুষ ভাই ভাই৷ সমগ্র মানব সমাজ এক ও অবিভাজ্য৷ দলবাজরা এটাকেই সহ্য করে না৷

 

প্রভাত সঙ্গীত প্রসঙ্গে

আচার্য নারায়ণানন্দ অবধূত

সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল সঙ্গীত৷ নিম্নমানের সঙ্গীত যেমন মানুষের অন্তর্নিহিত পশুভাবকে জাগিয়ে তোলে তেমনি উচ্চমানের সঙ্গীত মানুষের ভিতরে সুপ্ত দেবভাবকে জাগিয়ে তোলে৷ বর্তমান সমাজের সর্বাত্মক অবক্ষয় থেকে সঙ্গীত জগৎও রেহাই পায়নি৷ এই অবক্ষয়কে রোধ করে সংস্কৃতির আঙ্গিনায় নূতন প্রভাতের আবির্ভাব হ’ল শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী তথা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের রচিত ‘প্রভাত সঙ্গীত’৷ মোট ৫০১৮টি প্রভাত-সঙ্গীত রচনা ও সুর তাঁরই সৃষ্টি৷

গানের স্তম্ভ হচ্ছে চারটি---ভাব, ভাষা, সুর ও ছন্দ৷ এর মধ্যে ভাষার আবেদন সীমিত হলেও ভাব, ছন্দ ও সুরের আবেদন সর্বজনীন৷ প্রভাত সঙ্গীত আটটি ভাষায় -বাংলা,হিন্দী,সংসৃকত, অঙ্গিকা, উর্দু, মৈথিলী ও মগহী ভাষায়  রচনা করেন৷ প্রভাত সঙ্গীতের অধিকাংশ গানগুলির মধ্যে মিষ্টিকবাদের ধবনি অনুরণিত হয়েছে৷ মিষ্টিকবাদ কী? অসীমের সঙ্গে সসীমের সম্বন্ধ নির্ণয়ের যে সীমাহীন প্রয়াস তা-ই মিষ্টিকবাদ৷ আর এই কারণেই প্রভাত সঙ্গীতের গানগুলি এতই মাধুর্যমণ্ডিত হয়েছে যে সেগুলি ভারতের সীমানা পেরিয়ে বিশ্ব সংস্কৃতির বিশাল অঙ্গনে স্থান করে নিতে পেরেছে৷ তবে প্রভাত-সঙ্গীতের ভিত মিষ্টিকবাদ হলেও মানব জীবনের অপরাপর দিকের ভাবনাও এতে স্থান পেয়েছে৷ তাই দর্শন চিন্তা ও অধ্যাত্ম চিন্তা থেকে শুরু করে সমাজ চেতনা, আশাবাদ, নব্যমানবতাবাদ, নিসর্গ, প্রকৃতি, স্বপ্ণ, সামাজিক অনুষ্ঠান, ভক্তিগীতি, ভাব সঙ্গীত, ঋতু পর্যায়ের, গণসঙ্গীত, দেশপ্রেম, ঝুমুর, বাউল, কীর্ত্তন ও ভাঙা  কীর্ত্তন, গজল ও ভাঙা গজল, কাওয়ালি, শিবগীতি, কৃষ্ণবিষয়ক, রূপকথা ও জীবনীমূলক গানও এতে স্থান পেয়েছে৷ প্রভাত সঙ্গীতের মধ্যে ভাষার যে বলিষ্ঠতা ও ব্যাপকতা, ভাবের যে গভীরতা, ছন্দের যে বৈচিত্র্য ও সুরের যে হৃদয়স্পর্শিতা প্রকাশ পেয়েছে তা গানের জগতে অদ্বিতীয়৷

আজ ভোগবাদ বা জড়বাদ সর্বস্ব অপসংস্কৃতির মত্ত দানব তার নাগপাশ বিস্তার করে সমগ্র মানব সংস্কৃতির পরিবেশকে অসুস্থ ও অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে৷ এর ফলে মানুষের মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে, মানুষ হীনবল হয়ে পড়ছে৷ অপসংস্কৃতির এই বিষাক্ত পরিবেশের বিরুদ্ধে সমাজ সচেতন সকল মানুষকেই সরব ও গর্জে উঠতে হবে৷ শুধু নিন্দা করে এর গতিরোধ করা যাবে না৷ উচ্চ ভাবধারার স্পর্শে মানুষের মনের কালিমাকে দূর করতে হবে৷ জ্যোতির্ময় পুরুষের আলোয় মনের অন্ধকারকে সরিয়ে তা আলোয় ভরে দিতে হবে৷

দর্শনের জগতে আনন্দমার্গ দর্শন, অধ্যাত্ম সাধনার জগতে আনন্দমার্গের সাধনাপদ্ধতি, সামাজিক-অর্থনৈতিক জগতে ‘প্রাউট’ দর্শন, সামাজিক-বৌদ্ধিক ক্ষেত্রে ‘নব্যমানবতাবাদ’ শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী যেমন অসাধারণ সৃষ্টি, সঙ্গীতের জগতে তেমনি ‘‘প্রভাত সঙ্গীত’’ তাঁরই আরেক অতুলনীয় অবদান৷ প্রভাত সঙ্গীতের যে সর্বস্পর্শী আবেদন তা কারোর পক্ষে  উপেক্ষা করা সহজ হবে না৷ জীবনে মরণে, ব্যথা-বেদনায়, হাসি-কান্নায়, সুখে- দুঃখে-হতাশায় এই গান তাকে অফুরন্ত প্রেরণা জোগাতেই থাকবে৷

১৯৮২ সালের ১৪ই সেপ্ঢেম্বর ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে প্রভাত সঙ্গীতের রচনা শুরু করেন আর ১৯৯০ সালে ২০শে অক্টোবর (মহাপ্রয়াণের পূর্ব দিন) রাত্রি সারে এগারটায় প্রভাত-সঙ্গীতের শেষ ৫০১৮ সংখ্যক গানটি রচনা করেন৷ গানটি ছিল প্রস্তাবিত আনন্দমার্গ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত৷

 

পশ্চিমমেদিনীপুরে ‘গল্প বলা প্রতিযোগিতা’ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে

বিশ্বদেব মুখার্জী ঃ ছোটদের বই পড়ার অভ্যাস দিন দিন কমছে৷ মোবাইল ফোনে আসক্তি যত বাড়ছে বই পড়া তত কমছে৷ গল্প শোনাও কমে গেছে৷ যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট হতে হতে এখন স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানে এসে ঠেকেছে৷ তাই বর্তমান সময়ে অনেক শিশুই দাদু দিদার কাছে গল্প বা ছড়া শুনে ঘুমোতে যায় না৷ আবার কর্মরত বাবা মায়েদের সন্তানেরা অনেকেই আয়াদের কাছে দিনের বেশিরভাগ সময়টাই থাকে৷ রূপকথার বা পৌরাণিক কাহিনী শুনে অথবা নানাধরণের ছড়া শুনে আজকের শিশুরা বড়ো হয়ে উঠছে না৷ তারা মজে আছে নানা ধরনের ভিডিও গেম বা কার্টুন ফিল্মে৷ আগেরকার দিনে বাড়ির গুরুজনেরাই ছোটদের  গল্প শোনানোর  মধ্যে দিয়ে বই পড়ার  অভ্যাস গড়ে দিতেন৷ পরবর্তী সময়ে ঐ শিশু কিশোরদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার আগ্রহ তৈরি হত৷ বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার মধ্য দিয়ে যেমন অনেক বিষয়ে তাদের জ্ঞান বাড়ে, নতুন  নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তেমনি কল্পনাশক্তিও বৃদ্ধি পায়৷ গল্প, উপন্যাস, কবিতা, ছবি আঁকা বা বিজ্ঞানের কোনো আবিষ্কার--- সৃষ্টিশীল কোনো কাজই কল্পনাশক্তি ছাড়া সম্ভব নয়৷ ইদানীং বই পড়ার আগ্রহ বাড়িয়ে তোলার জন্য বিদ্যালয়  শিক্ষা দপ্তর প্রাথমিক স্তরের ছাত্র ছাত্রাদের জন্য বিদ্যালয়ে  পঠন উৎসব আয়োজন করার নির্দেশ দিয়েছে৷ এতে কিছুটা উপকার তো নিশ্চয়ই হবে৷

রেণেশাঁ আর্টিস্টস এণ্ড রাইটার্স এ্যাসোশিয়েসনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখার উদ্যোগে জেলা জুড়ে গল্প বলা প্রতিেেযাগিতার শুভারম্ভ হয় চার বছর আগে৷ ছোটদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি কল্পনাশক্তিও যাতে বাড়ে সেই লক্ষ্যেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন৷ জেলার বাছাই করা বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলছে চতুর্থ বর্ষ প্রারম্ভিক পর্যায়ের গল্প প্রতিযোগিতা৷ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সফল তিনজন করে প্রতিযোগী নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে মেদিনীপুর শহরে ডিসেম্বর মাসে৷ গল্প বলা প্রতিযোগিতা এই জেলায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়েছে উঠছে৷ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার এর ‘‘ক্যানিস গ্যাস’’ গল্পটি এবারে প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে৷ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে গল্পটি পরিবেশন করছে তা বিচারক সহ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও  অবাক করে দিয়েছে৷ অভিনব এই প্রতিযোগিতাটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে যথেষ্ট উৎসাহ ও আনন্দ এনে দিয়েছে৷  এখনও পর্যন্ত প্রায় ২৫টি বিদ্যালয়ে প্রারম্ভিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতা হয়ে গেছে৷ নভেম্বর মাস পর্যন্ত চলবে প্রারম্ভিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতা৷ বিদ্যালয়গুলির শিক্ষক শিক্ষিকাগণ যেভাবে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন তাতে কর্তপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷