প্রাউটের অর্থনীতি নিয়ে কিছু কথা

লেখক
এইচ. এন. মাহাতো

একটি দেশের নাগরিকদের জন্য সাচ্ছন্দ্য আনতে হলে সেই দেশের কৃষি ব্যবস্থা ও কর্ষকদের মনোন্নয়ন বৃদ্ধির সাথে সাথে ওই  অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তরাম্বিত করতে শিল্পের বিকাশ খুবই প্রয়োজন৷ কৃষি ও শিল্পের সমন্বয়ে সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব৷ দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার শিল্পনীতি সম্পর্কে বলেছেন--- যে কোন অবস্থায় কেন্দ্রীভূত শিল্প স্থানীয় শ্রমিকদের করে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বেশী ঘটায়৷ এরফলে ওই অঞ্চলের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে, বহিরাগত শ্রমিকদের ওপর রাজনৈতিক  নেতাদের দাদাগিরি বৃদ্ধি পায়৷ এরজন্যে কলকারখানায় নানা ভাবে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হয়৷ তাই প্রাউট প্রবক্তা বলেছেন শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ দরকার৷ প্রথমেই তিনি কোন জমিতে শিল্প গড়া উচিৎ বলতে গিয়ে বলেছেন কোন অবস্থায় উর্বর জমিতে শিল্প গড়া হলে ভবিষ্যতে খাদ্যাভাব দেখা দিতে বাধ্য৷ শিল্প গড়ার জন্য অপেক্ষাকৃত  অ-কৃষি জমি ও অনুর্বর জমিকে শিল্পতালুকের আওতায় আনা উচিৎ৷ এর পাশাপাশি কাঁচামালের  যোগান বাজারজাত করার সঙ্গে সঙ্গে  যোগাযোগের ব্যবস্থাও থাকা দরকার, কোন অবস্থায় বহিরাগত শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল হলে অর্থের বহিস্রোত ঘটবেই, ফলে স্থানীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যাবে৷

প্রাউটের দৃষ্টিতে শিল্প অবস্থা অনুযায়ী তিন ধরনের হওয়া দরকার,

১) মূল শিল্প---যাহা বড় বড় কারখানা৷ যেমন---ইস্পাত, গাড়ির শিল্প, বড় কাপড়ের সুতা শিল্প ইত্যাদি ইত্যাদি৷ এই শিল্পের নিয়ন্ত্রণ থাকবে স্থানীয় সরকারের হাতে৷ এগুলো চলবে না লাভ না ক্ষতির  ভিত্তিতে ৷

২) মাঝারি শিল্প --- মূল শিল্প ও ক্ষুদ্র শিল্প ব্যাতিরেখে মাঝারি শিল্প, যেমন --- দুগ্দখামার, মৎস উপাদান, কৃষিজাত শিল্প, কৃষি সহায়ক শিল্প৷ এই শিল্পগুলি মূলতঃ সমবায়ের  মাধ্যমে পরিচালিত হবে৷ ক্ষুদ্র শিল্প--- এই শিল্পের মধ্যে রয়েছে তাঁত  শিল্প, মৃৎশিল্পী, বাঁশ ও বেত শিল্প, আসবাবপত্রের শিল্প ইত্যাদি ইত্যাদি৷ এই শিল্পটি মূলতঃ ব্যষ্টিসহায়ক ও পারিবারিকভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে মজবুত করতে সহায়ক৷

প্রাউটের রূপরেখা তৈরী করতে গিয়ে দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন একটি মূল শিল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক ইউনিট--- যেমন মূল শিল্প সুতা উৎপাদনকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে তন্তুবায়রা বস্ত্রবয়ানের সঙ্গে  আনুষঙ্গিক কিছু কাজ ঘরে বসেই করবে৷ এরফলে তাদেরকে ঘর বা গ্রামছাড়া হয়ে প্রত্যন্ত দেশে পাড়ি দিতে হবে না৷ এছাড়াও তিনি বলেছেন--- সমবায়ের  মাধ্যমে প্রত্যেক শ্রমজীবীকে সেই কারখানার মালিকানা সত্ত্ব প্রদান করলে ওই  কারখানায় মালিক ও শ্রমজীবী বলে কোন সম্পর্ক থাকবে না৷ শ্রমজীবীরা সমবায় ব্যবস্থায় তার শেয়ারের সঙ্গে সঙ্গে যারা কর্মী হয়েছেন তারজন্য বেতন যেমন পাবে তার সঙ্গে  দক্ষতা বৃদ্ধিতে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক পাবেন৷ এরফলে তাদের  আর্থিক অবস্থা উন্নত  হবে৷ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এরদ্বারা বৃদ্ধি পাবে৷ শিল্পগুলিকে  শ্রমনিবিড় করে শ্রমজীবীদের  কাজের সময় কমিয়ে দিয়ে মানসিক  ও  আধ্যাত্মিক চর্চার সময় বাড়িয়ে মানসিক শিক্ষিতের হার বাড়ালে পার্থিব সম্পদের প্রয়োজন ধীরে ধীরে কমে আসবে৷

শিল্প কারখানা গুলির পরিচালন কমিটি ও শ্রমজীবীরা বৃহৎ স্বার্থের কথা ভেবে, স্থান কাল পাত্র ভেদে পরিচালনা সংক্রান্ত একটি সুন্দর সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরী করে উৎপাদন, বন্টন ব্যবস্থা, শ্রমজীবীদের নানা প্রয়োজন ,তৎসহ পরিকল্পনাগুলিকে  সবার হিত ও কল্যাণের জন্যে তৈরী করা হবে৷ এইভাবে একটি সুসামঞ্জস্য সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দ ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হবে৷