প্রাউটের পথেই প্রতিষ্ঠিত হবে প্রগতিশীল সমাজ

লেখক
প্রভাত খাঁ

বর্তমান কেন্দ্র সরকার ধনীদের মাথায় তুলে নাচে তাই পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র লোক সংখ্যার অনুপাতে সেখানে বর্তমান আর্থিক বছরে যে বাজেট হয়েছে সেখানে সাধারণ জনগণের জন্য ছিটে ফোঁটা কোন সুবিধার কথা ভাবা হয়নি৷ তাই ভারতের বাণিজ্য রাজধানী মুম্বাই এতে শিল্প মহলের কর্র্ত্তদের সঙ্গে আলোচনা কালে অর্থমন্ত্রী মাননীয়  সীতারমন ও তাঁর দলবল প্রচণ্ড ক্ষোভের মুখেই পড়েন৷ শিল্পপতিরা বর্ত্তমান বাজেটে মোটেই সন্তুষ্ট হননি৷ কারণ অতিসাধারণ যেটা জরুরী শিল্প মহলের তা হলো দেশের বৃহত্তম জন সাধারণ এর হাতে যদি অর্থ না থাকে শিল্পপতিদের শিল্পজাত ভোগ্যপন্য বাজারে কিনবে কে? দেশের গ্রামীন অর্থনীতির ? অদ্যাবধি কোন আর্থিক উন্নতিই হয়নি৷ সব ব্যাপারে গ্রামগুলি তো পিছিয়ে৷ আর টাটা কর্র্ত্তর বক্তব্য হলো গত কয়েক বছরে মহিলা কর্মী ও শ্রমিকরাই তো সব থেকে বেশী কাজ হারিয়েছেন মূলকারণটা হলো লকডাউনের ছাঁটাই পর্বে বেশী সংকটে পড়েছেন মহিলারাই৷ এই আলোচনায় উঠে আসে জিএসটির কথা৷ শিল্পপতিদের মতে বিজেপির জিএসটি পদ্ধতিটা সরকারের গরীব দেশে একধরণের  কর আদায়ে বাড়াবাড়ি৷ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সেই গরিব জনগণের বোটেই নির্বাচিত হন কিন্তু তুষ্ট করছে তারা সেই মুষ্টিমেয় ধনীদের কারণ ট্যাক্স আদায় করে সরকার সেই অতীতের  বাদশা ও সম্রাটদের মতোই কোষাগারের অর্থ ব্যয় করেন দেশের কল্যাণের জন্য নয়৷ নিজেদের দলের প্রতিষ্ঠায় আর নির্বাচনে জেতার জন্য পরবর্তীকালে৷ তাছাড়া এই সরকার নোতুন নোতুন  কোটি কোটি  টাকা ধার করে পার্লামেন্ট হাউস, জনপ্রতিনিধিদের আরামের বাড়ি নির্মাণ ইত্যাদি৷ তাছাড়া ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এঁরা হিন্দুত্ববাদী এটা প্রতিষ্ঠা করতে ও জাহির করতে মন্দির, নির্মাণও সংস্কারে গরিব নাগরিকদের  পেটে মেরে কোটি কোটি টাকা অর্থ ব্যয় করে চলেছেন৷

এঁরা কোনটার প্রয়োজন বেশী সেদিকে নজর নেই৷ এরা নোতুন ভারত গড়বেন ধনীরাষ্ট্রের মত৷ কিন্তু ভারতের মতো বহুভাষাভাষী ও ধর্মমতের দেশে যে এটা অবাস্তব ও সংবিধান বিরোধী সেটার ধারই যেন ধারেন না৷ সরকারটি যে জনগণের দ্বারা ও জনগণের যেন শাসন ক্ষমতার দম্ভে ভুলেই যান৷ ভারতকে দাঁড়াতে হবে কষ্টের ত্যাগ ও নিষ্ঠার মধ্য দিয়েই৷ মনে রাখতে হবে গরিব দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রিত রাখলে ও উৎপাদন বৃদ্ধি করলেই জনগণ কিনবেন ও আয় বাড়বে কিন্তু রান্নার,ডিজেল, পেট্রোল, প্রাণদায়ী ওষুধের দাম অত্যধিক বাড়ালে মধ্যবিত্ত, অর্দ্ধ মধ্যবিত্ত ও  গরিব লোক ঐ সব জিনিস কম কিনবেন ? ব্যবসায় মার খাবে দেশ৷

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তো জনগণের সমর্থনে নির্বাচিত হয়ে শাসনে আসেন তাঁদের সেবা দিতে কিন্তু এটা কি গণতান্ত্রিক সরকারের শাসনব্যবস্থা? সব জিনিসের দাম বাড়িয়ে গরিবদের কি শোষণ করা দায়ী ১৩৫/৩৬ কোটি মানুষের  মধ্যে কতজনে রেশন পান? ৮টি জিনিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় লিখিতভাবে৷ চাল ও গম ছাড়া আর দেওয়া হয় তাঁদের সংখ্যাটা তো অতি সামান্য৷ এই ধরনের নির্র্বচিত সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণেই তো  ১৩৫/৩৬ কোটি মানুষের মাথা পিছু ঋণ হু হু করে বেড়েই চলেছে৷ চার্বাকি দর্শনের সেই ‘‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ হচ্ছে৷ কয়েক বছর আগে মাথা পিছু ঋণ ছিল গড়ে ৪৭ হাজার টাকা বর্তমানে মোদি সরকারের ৮ বছরের শাসনে সেটা দাঁড়িয়েছে প্রায় এক লক্ষ টাকার মতো৷ এটাতো নির্বাচিত জন সেবকদের সুশাসনের লক্ষণ নয়! দেশকে তো এঁরা রসাতলে পাঠানোর বন্দোবস্তটা করে রেখেছেন৷ ভাঁড়ে মা ভবানী আর সরকার বাজেট করে বসছেন এক প্রচণ্ড ঘাটতি বাজেট তাই  জাতীয় সম্পদ বিক্রি করে বেচারাম সরকার হচ্ছেন! ট্যাক্স আদায় করে সরকারী ভাঁড়ার পূর্ণ করাটা তো সার্থক গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ নয়৷ জনগণের সেবক সরকারকে আয়ের উৎস বাড়াতে হবে সরকারের নিজস্ব উৎপাদন সংস্থা ঘটন করে জাতীয়  সম্পদ বিক্রি করে নয়৷ যে সরকার জাতীয় সম্পদ বিক্রি করে সরকার চালাবার খরচ যোগাড় করেন সেটাতো প্রগতির লক্ষণ নয় ‘অধোগতি লক্ষণ!

ভারতের দলতান্ত্রিক গণতন্ত্রটা ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থায় একটা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি৷ এতে জনগণ শোষিত হয় কারণ ধনীরাই দলকে নিয়ন্ত্রিত করে থাকে৷ তাই শাসককে হতে হয় ধনীদের ‘ইয়েসম্যান’৷ শোষণের উপর এদের সমৃদ্ধি৷ সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় গণতন্ত্র সার্থক হয়৷ কারণ বিকেন্দ্রীত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা (রূপায়ন) না হলে গণতন্ত্র বর্তমান ভারতের  জনগণের দুর্দশা সেটাই চলবে আর একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে যখনই একটি বিশেষ দল শাসনে আসবে তাদের প্রবণতাটা হবে অতীতের ইন্দিরার আমলে কংগ্রেস যেমন একদলীয় শাসনকে প্রতিষ্ঠা করার প্রবণতাটা বাড়ে ঠিক তেমনই বর্ত্তমানে বিজেপি কেন্দ্রে শাসন ক্ষমতা পেয়ে এক দলীয় শাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে হিন্দুত্ববাদকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে রাতে দিবা স্বপ্ণ দেখছে কারণ ইন্দিরাকে জনগণ সমুচিত জবাব দিয়েছিল৷ জনগণ আজ অনেক সচেতন তাই বর্তমানে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই প্রাকৃতিক কারণ সংকীর্ণতাকে স্বীকারই করে না৷  বিশ্বৈকতাবোধে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে৷

এটা প্রাউটের  যুগ আর ভারত এর সংবিধানও সংকীর্ণ ধর্মমতকে মান্যতা দেয় না৷ তাই গণতন্ত্রে অন্ধের মতো বিশেষ ধর্মমতকে নিয়ে যে রাজনৈতিক দল বেশী করে মাতামাতি করে  তারা বেশী দিন শাসনে বসে থাকতে পারেনা, কারণ জনগণ এটা  মেনে নেয় না৷ ‘‘শোনরে মানুষ ভাই সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই৷’’ তাই মহাকাল প্রগতিশীলতার পথে এগিয়ে চলেছেন আর সৃষ্টির ধর্মই হলো এগিয়ে চলা সংকীর্ণতা ও কুসংস্কার পশ্চাতে পড়েই থাকবে৷ এগুতে পারবে না৷ প্রাউটের পথেই প্রতিষ্ঠিত হবে প্রগতিশীল সমাজতন্ত্র৷