প্রভাত সঙ্গীত--- নবজাগরণের সঙ্গীত

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূ্ত

পূর্ব প্রকাশিতের পর

ঊনপঞ্চাশ সংখ্যক প্রভাত সঙ্গীত ঘিরে রয়েছে সেই আলোর পথে যাত্রারই সুষ্পষ্ট ও উদাত্ত আহ্বান---

‘ডাক দিয়ে যাই যাই যাই,

আমি ডাক দিয়ে যাই যাই যাই

আলোকের পথ ধরে যারা যেতে চায়

               তাহাদের চিনে নিতে চাই৷৷’

৪৬৯৯ সংখ্যক প্রভাত সঙ্গীত রয়েছে---

‘‘তমসার পরে আশার আলো

পূবাকাশে রঙ এনেছে

‘আর ঘুমায়ো না’ ভুলোক দূ্যলোকে

মানবতা ডেকে চলেছে৷’’

৪৬ নম্বর সঙ্গীতে সঙ্গীতকার নিপীড়িত শোষিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন---

‘‘এরা কান্নায় ভাঙ্গা, রুধিরেতে রাঙ্গা

হতাশায় ভাঙ্গা সবহারা

এরা হতাশায় ভাঙ্গা সব হারা৷

.......

এদের চলো নিয়ে যাই আলোর স্নানেতে

বসাইয়া দিত সকল মানেতে

সব অপূর্তি দূর করে দিই

মমতার ডাকে হৃদি ভরা৷৷’’

প্রভাত সঙ্গীতকার তাঁর দর্শনে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, মানুষের আদর্শ ‘আত্মমোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ’---অর্থাৎ একদিকে আত্মোন্নতি, অপরদিকে জগৎ কল্যাণ, এই দুটিই অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত৷ আত্মোন্নতি তথা আত্মশুদ্ধির সাধনা না করে যারা সমাজ সেবার কাজে নেমেছে শেষ পর্যন্ত তারা পদ অর্থ যশ ও লোভের বশবর্তী হয়ে সমাজের কল্যাণের পরিবর্তে সমাজকে শোষণ করেছে৷ বর্তমান রাজনীতিতে এটাই আমরা লক্ষ্য করে থাকি৷ তাই আত্মোন্নতি তথা আত্মশুদ্ধির জন্যে আধ্যাত্মিক অনুশীলন প্রতিটি সমাজ কল্যাণব্রতী মানুষের জীবনের একান্ত কর্তব্য৷

প্রতিটি মানুষেরই জীবনের পরম লক্ষ্য ঈশ্বর৷ তাই প্রভাত সঙ্গীতে স্পষ্ট বলা হয়েছে  ‘জীবনের ধ্রুবতারা ভুলো না রে৷ মানুষ যদি জীবনের ধ্রুবতারাকে ভুলে যায় তাহলে মানুষ দিশেহারা হয়ে, উশৃঙ্খল হয়ে সমাজের ক্ষতি করবে, নিজেরও সর্বনাশ করবে৷ তাই মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক আকূতি জাগাতেই হবে৷

আর এই কারণে প্রায় সমস্ত প্রভাত সঙ্গীতের সুরেই আধ্যাত্মিকতার অনুরনন৷ তাই প্রভাত সঙ্গীতে পাই ---

‘তোমার নামে তোমার গানে

               হয়েছি আপনহারা৷

আঁধার পানে চলা পথিক

               পেয়েছে আলোক ধারা৷’’

u u u

 

‘ওগো প্রভু তোমাকে আমি ভালবাসি, ভালবাসি

সতত মনের মাঝে জাগিয়া থাকে

তোমারই মধুর হাসি মধুর হাসি৷

এমনিভাবে আধ্যাত্মিক চেতনামূলক গান অনেক রয়েছে৷

প্রভাত সঙ্গীত প্রকৃতপক্ষে মানুষের সমগ্র জীবনের সঙ্গীত৷ তাই প্রভাত সঙ্গীতে রয়েছে জন্মদিনের থেকে শুরু করে সমস্ত ধরণের পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের সঙ্গীত, বিভিন্ন ঋতুর গান, শিবগীতি, কৃষ্ণগীতি, কীর্ত্তন পর্যায়ের গান, বাউল পর্যায়ের গান, এসব থেকে শুরু করে সমাজের অন্যায় অত্যাচার দুর্নীতির বিরদ্ধে সংগ্রামের গান---যেমন

‘এই পাপের নিগড় দুর্নীতিগড়

ভেঙ্গে ফেল কর চুর৷

এসো ভাই এসো প্রাণ খুলে মেশ

আর থাকিও না দূর৷৷’’

প্রভাত সঙ্গীত মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়---

‘মানুষ যেন মানুষের তরে সব কিছু করে যায়

একথাও যেন মনে রাখে পশুপাখী তার পর নয়

তরুও বাঁচিতে চায়৷’