পরধর্মঃ ভয়াবহ

লেখক
পত্রিকা প্রতিনিধি

গীতার একটি শ্লোকে বলা হয়েছে ‘‘স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মঃ ভয়াবহ৷’’  মানুষ সাধারনতঃ নিজের নিজের ধর্মমতকে স্বধর্ম ও অন্যের ধর্মমতকে পরধর্ম বুঝে থাকে৷ কিন্তু এখানে শ্রীকৃষ্ণ স্বধর্ম বলতে বুঝিয়েছেন  মানুষের ধর্ম---ভাগবত ধর্ম, পরধর্ম অর্থাৎ পশুর ধর্ম৷ ধর্ম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন---‘‘পশু বলছে সহজ ধর্মের পথে ভোগ কর, মানুষ বলছে মানব ধর্মের সাধনা কর৷’’ তিনি আরও বলেছেন তরুলতা সহজেই তরুলতা, পশুপাখি সহজেই পশুপাখি, কিন্তু মানুষকে প্রাণপণ চেষ্টায় মানুষ হতে হয়৷ অর্থাৎ মানুষকে মানুষ হতে হলে  মানবধর্মের সাধনা করতেই হবে৷ কিন্তু আজকের মানুষ মানব ধর্মের সাধনা ছেড়ে সহজ ধর্মের পথে ভোগের পথে  ছুটে চলেছে৷ অর্থাৎ মানুষ স্বধর্ম-ভাগবত ধর্ম ছেড়ে পরধর্ম পশুর ধর্মকে আঁকড়ে ধরেছে৷ তাই তার জীবন হয়ে উঠেছে জড়মুখী৷ জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি জড়াভিমুখী হয়ে যাওয়ার কারণেই বর্তমান সমাজে  এত সমস্যা,সভ্যতার এত সংকট৷ ভোগ সর্বস্ব জীবনচর্যাই মানুষের নৈতিকস্খলনের  মূল কারণ৷ বর্তমান সমাজ  ভোগসর্বস্ব জীবনচর্যার করালগ্রাসে এতটাই  গ্রস্ত হয়ে পড়েছে যে লোভ-লালসা কামনা-বাসনা ইত্যাদি ঐহিক সুখভোগের তাড়নায় মানুষ ন্যায়,নীতি সততা, মূল্যবোধ সব ভুলে বিবেকহীন হয়ে দুর্নীতি ও পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে৷ সমাজ পুঁজিপতিদের সৃষ্ট ভোগবাদ রূপ কালব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গেছে৷  সমাজ দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুন ধরে গেছে৷ শিক্ষাক্ষেত্র, রাজনৈতিক জগৎ, প্রশাসনিক ক্ষেত্র, সাংসৃকতিক পরিমণ্ডল, প্রভৃতি সর্বক্ষেত্রেই নীতিহীন একদল ধান্দাবাজদের দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে৷

এই সর্বব্যাপী স্খলনের কারণ--- সমাজের উত্তরণের  দুটি জিনিসের  অভাব৷ প্রথমটি হচ্ছে---এক পূর্ণাঙ্গ জীবনাদর্শের অভাব৷ দুই --- সৎ, আদর্শ নীতিবাদী মানুষের অভাব৷ মহান দার্শনিক ও ধর্মগুরু শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী ব্যষ্টি ও সমষ্টির এই অবক্ষয় থেকে উত্তরণের  জন্য দিয়েছেন এক সর্বাত্মক জীবনাদর্শ যার ভিত্তিভূমি, আধ্যাত্মিকতা৷ মানুষকে আদর্শ তথা পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে প্রতিষ্টিত করতে তিনি দিয়েছেন আধ্যাত্মিক অনুশীলন মানব ধর্মের সাধনা৷

কিন্তু  মানুষ আজ মানব ধর্মের সাধনা ভুলে ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ ভুলে গিয়ে ধর্মমতের উপাচার নিয়েই ব্যস্ত আছে৷ ধর্ম হল মানুষের অবিনাভাবী স্বভাব৷  যার অনুপস্থিতিতে  মানুষ হল জড়ের মোহে পশুত্বের স্তরে নেবে যায়৷

আজ সমাজ যে চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন, তার মূল কারণ হলো মানুষের জড়াভিমুখী জীবন৷ সমাজকে এই চরম বিপর্যয়ের  হাত থেকে রক্ষা করতে হলে সবার আগে মানুষকে এই জড়াভিমুখী জীবন ত্যাগ করে, পশুর ধর্ম ত্যাগ করে স্বধর্মে প্রতিষ্ঠিত  হতে হবে, মানব ধর্মের সাধনা করতেই হবে, মানুষকে  মানবত্ব অর্জন করতে হবে, তবেই সমাজ সভ্যতা বাঁচবে৷