প্রেতযোনিও একপ্রকার নেগেটিব মাইক্রোবাইটাম্

লেখক
সমরেন্দ্রনাথ ভৌমিক

‘পিশাচ’ শব্দ হতে ‘প্রেতযোনি’ নাম হয়েছে৷ সাধারণভাবে যে সমস্ত মানুষ অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ করেছে এদের বিশেষ বিশেষ গুণগত ত্রুটির জন্যে এদের মৃত্যুর পর পাঞ্চভৌতিক দেহ নিয়ে পৃথিবীতে জন্ম হয় না৷ এরা অশরীরি অবস্থায় অর্থাৎ লুমিনাস বডিতে অবস্থান করে৷ এইভাবে অবস্থান করলে এদের বলা হয় প্রেতযোনি৷ এদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রেতযোনিকে সাত প্রকারে বিভক্ত করা হয়েছে৷ এরা হ’ল---

(১) দুর্মুখ (২) কবন্ধ (৩) মধ্যকপাল (৪) মহাকপাল (৫) ব্রহ্মদৈত্য (ব্রহ্মপিশাচ) (৬) আকাশী প্রেত (৭) পিশাচ৷

বিদেহী মনই ‘দেবযোনি’ অথবা ‘প্রেতযোনি’ অবস্থা গ্রহণ করে৷ যে মানুষেরা ঈশ্বর বা পরমপুরুষকে চেয়েছে কিন্তু কোন ভুল বশতঃ ঈশ্বরকে ভুলে পার্থিব বস্তু বা ভৌতিক জগতের প্রতি আসক্ত হয়েছে, সেই সমস্ত মানুষগুলো মানুষের মঙ্গলকামনা বা হিতের চিন্তাও করেছে, তারাই মরণের পর দেবযোনি অবস্থা প্রাপ্ত হয়৷ এরা মরণের পর আর পাঞ্চভৌতিক শরীর পায় না৷ এরা তেজ, মরুৎ ও বোম্তত্ত্ব সমন্বিত ত্রিভৌতিক শরীর পায়৷ এই দেবযোনিরা মানব শরীর পাওয়ার জন্য তীব্র লালায়িত হয়৷ দেবযোনিরা মানুষের সান্নিধ্যে আসে ও মানুষের উপকার করে৷ এরা কখনও মানুষের ক্ষতি করে না৷ তাই এদের মিত্র মাইক্রোবাইটাম বলে, অর্থাৎ এরা একপ্রকার পজিটিব্ মাইক্রোবাইটাম Positive Microvitum)৷ অপরপক্ষে যে সমস্ত মানুষ ঈশ্বর বিমুখ পরমপুরুষ, বিমুখ তারাই মরনান্তে প্রেতযোনি অবস্থা প্রাপ্ত হয়৷ যেমন---জড়বাদী দর্শন বা ঈশ্বব-বিমুখ দর্শনে বিশ্বাসী মানুষেরা কেবল জড়কেই জীবনের ধ্যান-জ্ঞান বলে জানে, যাদের কাছে ঈশ্বর বা পরমপুরুষের কোন অস্তিত্বই নেই, তারা ‘প্রেতযোনি’ প্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী৷

দুর্মুখ ঃ যে সব মানুষ অশিক্ষার দরুণ কিংবা অন্য কোন কারণবশতঃ মানুষের মনে কেবল ক্লেশ ও আঘাত দিয়ে কথা বলে এসেছে৷ ভুলেও এরা কখনও মানুষকে স্নেহ-ভালবাসা দেয় না, বরং এরা ভাবে---অন্যের আরও আঘাত লাগুক, এরূপ চিন্তাধারায় জীবন কাটিয়েছে৷ এই সমস্ত মানুষেরা মৃত্যুর পর ‘দুর্মুখ’ নামীয় প্রেতযোনি প্রাপ্ত হয়৷ মৃত্যুর পরে প্রেতযোনি হ’য়েও এরা চায় অন্যের মনে আরও আঘাত লাগুক৷

কবন্ধ ঃ যে সকল মানুষ গ্লানিতে বা অপমানে বা অতিলোভে অথবা হতাশাগ্রস্ত হ’য়ে আত্মহত্যা করে তারা ‘কবন্ধ’ প্রেতযোনি প্রাপ্ত হয়৷ এই সমস্ত কবন্ধরা মানসিকভাবে দুর্বল মানুষকে আত্মহত্যার জন্য প্ররোচনা দিয়ে ডাকতে থাকে৷

মধ্যকপাল ঃ যে সকল মানুষ অস্থিরমতি অর্থাৎ যাদের মানসিকতার কোন স্থিরতা নেই, সকালে একরকম কথা বলে, দুপুরে একরকম কথা বলে এরূপ মানুষেরাই মৃত্যুর পর সাধারণত ‘মধ্যকপাল’ প্রেতযোনিতে পরিণত হয়৷ এদের এই অস্থির মতিগতির জন্যে এরা নিজেরা কষ্ট পায় ও সেই সাথে অন্যকেও কষ্ট দেয়৷ উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের দেশের রাজনীতিকরা বেশীরভাগই অস্থির মতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন৷ দেখা যায়, এই সমস্ত রাজনীতিকরা সকালে, দুপুরে ও রাত্রে বিভিন্ন সময়ে বহু অসঙ্গতিপূর্ণ উক্তি করেন৷ এই ধরণের রাজনীতিকরা মৃত্যুর পরে ‘মধ্যকপাল’ প্রেতযোনি প্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী৷

মহাকপাল ঃ যে সমস্ত মানুষ নিজের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্যে অন্যের ক্ষতি করে, প্রয়োজনে অন্যকে ধবংস করার জন্যে কুমতলব বা চক্রান্ত করে, যারা মারণাস্ত্র তৈরী করে’ লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষকে মানুষকে অকারণে হত্যা করে, মৃত্যুর পর এরা মহাকপাল প্রেতযোনি হয়৷ এ ধরণের প্রেতযোনিরা সব সময় যাতে জীবজগৎ ধবংস হয় তার জন্য চেষ্টা করে৷

ব্রহ্মদৈত্য ঃ বুদ্ধিজীবী মানুষ বা বিপ্রশ্রেণীর মানুষেরা যদি তাদের বুদ্ধিমত্তাকে Intellect) মানব সমাজের হিতের কাজে না লাগিয়ে কেবল শোষণের কাজে, অন্যকে দাবিয়ে রাখার কাজে লাগিয়ে থাকে ও মানুষের মনে হীনম্মন্যতা সৃষ্টির কাজে লাগায়৷ এরূপ বিপ্রশ্রেণীর মানুষেরা মৃত্যুর পর ব্রহ্মদৈত্য বা ব্রহ্মপিশাচ নামীয় দেবযোনি হয়৷

আকাশী প্রেত ঃ যে সমস্ত মানুষের যোগ্যতা থাক্ অথবা না থাক্, কিন্তু ‘উচ্চআশার’ দ্বারা প্রেষিত হ’য়ে জগতে অনর্থ ঘটিয়ে চলে, সেই ধরণের অযোগ্য উচ্চআশার মানুষেরা মরণের আকাশী প্রেতযোনি প্রাপ্ত হয়৷

পিশাচ ঃ যে সমস্ত মানুষেরা খাদ্য অখাদ্য বিচার না ক’রে সব কিছুকেই নিজের ভোগ্য বস্তু হিসাবে গ্রহণ করে, সেই সমস্ত মানুষেরা মরণের পর পিশাচ নামীয় প্রেতযোনি হ’য়ে জন্মাতে পারে৷

এই সাত প্রকারের প্রেতযোনিরা অশরীরি অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় ও মানুষের কেবল ক্ষতি করতে থাকে৷ প্রেতযোনিরা ভুলেও কখন কোন মানুষের উপকার করে না৷ তারপর এরা দীর্ঘকাল পরে কর্মফল ভোগ হলে , তবে আবার মানবদেহে পৃথিবীতে জন্মলাভ করে৷ আগেই বলা হয়েছে এরা এক ধরণের নেগেটিভ মাইক্রোবাইটাম৷

দেবযোনিরা ত্রিভৌতিক শরীর নিয়ে মানুষের কাছে আসে ও মানুষের বহু উপকার করে৷ কিন্তু খুব খারাপ লোকেরা, এতটাই খারাপ কাজ করে যে, যাতে ক’রে এরা মৃত্যুর পর ত্রিভৌতিক শরীরটাও পায়না৷

দেবযোনি অথবা প্রেতযোনি উভয়েই কর্মফল ভোগান্তে মানবদেহ লাভ করে৷