নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দিল্লীতে মাত্রাতিরিক্ত দূষণের ফলে এমন অবস্থা যে দিল্লী থেকে মানুষ দলে দলে শহর ছাড়ছেন৷ রাস্তায় মাক্স পরা মানুষের ভিড়, স্কুল বন্ধ, বাচ্চা ছেলেমেয়েরা ঘর থেকে বাইরে যাচ্ছে না৷ দিনের বেলাতেই চতুর্দিকে অন্ধকার৷ ধূলি ও ধোঁয়াতে ভরে গেছে বাতাস৷ শ্বাসকষ্টের রোগ নিয়ে হাসপাতালে রোগীর ভিড়৷ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা দিল্লী, পঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানা সরকারকে এমনকি কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র ভৎর্সনা করেছেন৷ তারা বলছেন প্রতি বছর এমনই হচ্ছে৷ অথচ সরকারের কোনও হেলদোল নেই৷ এই দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলিতে এই সময় ফসলের অবশিষ্টাংশ (খড়) ক্ষেতেই ব্যাপকভাবে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে৷ তাছাড়া শহরের বর্জ্য জ্বালানো, ডিজেলের গ্যাস প্রভৃতিও রয়েছে৷
দেশের অন্যান্য স্থানে, আমাদের কলকাতাতেও পরিস্থিতি এত মারাত্মক না হলেও পরিবেশ দূষণ বেড়েই চলেছে৷ আমরা পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে খুব বেশী সচেতন নই৷ এতে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না---অন্তত যতটা দেওয়া উচিত ছিল৷ তাই বে-পরোয়াভাবে গাছ কাটা চলছেই৷ যেভাবে গাছ লাগানোতে উৎসাহ দেওয়া উচিত ছিল তা হচ্ছে না৷ ডিজেলের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ, প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ, প্লাস্টিক সহ বিভিন্ন বর্জ্য পোড়ানো, যত্রতত্র নোংরা আবর্জনা জমিয়ে রাখা এসব চলছেই৷ ফলে পরিবেশ দূষণ ক্রমশঃ বেড়ে চলেছে৷ মানুষ নিজের স্বার্থটাই বেশী দেখছে৷ সমাজ সচেতনতা খুবই কম৷ সবাই মিলে পরিবেশটা বিশুদ্ধ রাখা, এই পৃথিবীটাকে রক্ষা করা সবার সর্বাধিক ধ্যান দেওয়া উচিত৷ কিন্তু সেটা খুব একটা কেউ করছে না৷
বিভিন্ন জিনিস খুঁটিয়ে বিচার করলে দেখা যাবে মানুষের ভয়ঙ্কর লোভ বৃত্তিটাই এই দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ৷ তাই পরিবেশ দূষণের সঙ্গে সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত মানসিক দূষণ৷ মানুষের মনের দূষণ দূর করতে না পারলে এই সমাজকে, এই পৃথিবীকে রক্ষা করা যাবে না৷
আর তা করতে গেলে দেশের মহান মনীষীরা নৈতিক ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন৷ আধ্যাত্মিক মানে অবশ্যই সঙ্কীর্ণ ধর্মমত (রিলিজিয়ন) ভিত্তিক নানা ভাবজড়তা, নানান প্রথা -পদ্ধতি, জাত-পাত- সাম্প্রদায়িক ভেদ এসব নয়৷ আধ্যাত্মিকতা মানে মনের বিস্তার ও ভূমা চৈতন্যের সঙ্গে মনের একাত্মতার নিত্য প্রয়াস৷
মানুষ বিজ্ঞান প্রযুক্তি নিয়ে যত মাতামাতি করছে, মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য ততটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷ শিক্ষিত মানুষেরাই এ ব্যাপারটার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে না৷ বিজ্ঞান -মানসিকতার অবশ্যই প্রয়োজন৷ কিন্তু তার সঙ্গে সমভাবে প্রয়োজন নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশের৷ বলা বাহুল্য নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা অবিনাভাবী৷ একের অভাবে অপরের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে৷ প্রকৃত শিক্ষা মানে ভৌতিক (অর্থাৎ জাগতিক যেমন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত), মানসিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা৷ এটাই প্রকৃত জ্ঞানের বিস্তার৷ জ্ঞানের প্রকৃত বিস্তার ছাড়া সমাজের বাঁচার কোনও রাস্তা নেই৷
- Log in to post comments