সংখ্যালঘু ও প্রবল (strong) সংখ্যালঘুর মধ্যে পার্থক্য কী? রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ‘‘weightage’’ পরিভাষায় অর্থ কী?
উত্তর ঃ (কোনও দেশে) জনসংখ্যার ৪০ক্ম (চল্লিশ শতাংশ)–এর কম অংশকে সংখ্যালঘু বলা হয়৷ প্রবল সংখ্যালঘু বলা হয় জনসংখ্যার ৪০% থেকে ৫০% সম্প্রদায়কে৷ লোকসভার আসনে যদি কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যে যুক্তিসঙ্গত অংশের চাইতে বেশি আসনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সেই ব্যবস্থাকে weightage বলা হয়৷ উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক্৷ কোনো দেশের ৩৮% জনসাধারণ একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের ও ৬২ আরেকটি সম্প্রদায়ের৷ সেই দেশের ১০০টি আসনের জনপ্রতিনিধি সভায় প্রথমোক্ত সম্প্রদায়ের জন্যে ৩৮টি আসন রাখা উচিত৷ যদি তাদের তুষ্ট করতে সামাজিক নিরাপত্তার নামে ৩৮টির বেশি আসন নির্ধারিত করা হয় তাহলে এই (৩৮টির) অতিরিক্ত আসনগুলিকে weightage হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ প্রবল strong সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে ভ্রন্দ্বন্ন্ধড়ব্ধ্ত্রন্ধ্ ব্যবস্থা থাকে না৷
অতীতে ৰাংলার জনপ্রতিনিধি সভায় ২৫০টি আসন ছিল৷ ২০০টি আসন পূরণ করা হ’ত নির্বাচনের মাধ্যমে আর ৫০টি আসনে মনোনয়ন দেওয়া হত৷ এই ৫০টি আসন ছিল সংখ্যালঘু ও বিশিষ্ট ব্যষ্টিদের জন্যে সংরক্ষিত৷ সেই সময় (ৰাঙলার) জনসংখ্যার ৪৫% ছিল একটি সম্প্রদায়ের ও ৫৫% ছিল অন্য সম্প্রদায়ের৷
প্রথমোক্ত সম্প্রদায়কে তুষ্ট করতে ২০০টি আসনের মধ্যে ১২০টি আসনই সংরক্ষিত করা হয়েছিল৷ মাত্র ৮০টি আসন শেষোক্ত সম্প্রদায়ের জন্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল৷ এটা কিন্তু সঠিক পন্থা ছিল না কারণ প্রথমোক্ত সম্প্রদায় সংখ্যালঘু হলেও প্রবল সংখ্যালঘু ছিল৷
প্ত প্রাউট দর্শনের আঙ্কিক স্থিতি কী? এটা কি omni-static, না statico-dynamic, না dynamico-static–, না omni-dynamico?
উত্তর ঃ Omni-static এক ধরনের নেতিবাচক শব্দ৷ এতে সৃষ্ট হয় নৈরাশ্যবাদ (cynicism) বা নৈরাজ্যবাদ nihilism৷ Statico-dynamic–স্ কিছুটা গতিশীল হলেও সেটা গতিহীনতায় আটকে যায়৷ Dynamico-static- কিছুটা গতি থাকলেও সেটা একসময় অধোগতির স্থবিরতার দিকে নিয়ে চলে৷ শুধুমাত্র omni-dynamic গতিই এই সৃষ্টিতে সকল সৃষ্ট জীবের সার্বিক মঙ্গল নিয়ে আসতে পারে৷ Omni-dynamic গতি জড় থেকে সূক্ষ্মাভিমুখী বিরামহীন গতি৷ এই গতিই মানুষকে নিয়ে যাবে চিরস্থায়ী প্রগতি ও আধ্যাত্মিকতার জ্যোতির পথে৷ প্রাউট দর্শন Omni-dynamic৷
প্ত প্রাউটের প্রগতি কী ধরনের প্রগতি?
উত্তর ঃ প্রগতি দুই ধরনের হয়–একটি সাধারণ প্রগতি ও অপরটি ত্বরণযুক্ত accelerated প্রগতি৷ ত্বরণযুক্ত প্রগতিতে রয়েছে সাধারণ ত্বরণ, প্রগতিশীল ত্বরণ ও যৌথ compound ত্বরণ ৷ যৌগ ত্বরণশীল প্রগতির গতি চক্রবৃদ্ধি সুদের হারের গতির মত বৃদ্ধি পায় না৷ চক্রবৃদ্ধি সুদের হার বাড়ে প্রগতিশীল ত্বরণযুক্ত গতিতে৷ কিন্তু এটা (অর্থাৎ যৌগ–ত্বরণ) আরও অনেক উচ্চপর্যায়ের ত্বরণ৷
প্ত দেশের জমি যদি খুব উর্বর হয় ও মানুষের মাথাপিছু আয় যদি খুব বেশী হয় তার মানে এটা কি ৰোঝায় যে মানুষের মানসিক অভীপ্সা micro-psychic connation বা মানসিক আশা–আকাঙক্ষার micro-psychic aspiration পূর্ত্তি হয়ে গিয়েছে?
উত্তর ঃ না৷ মানুষের সামগ্রিক আশা–আকাঙক্ষা পূর্ত্তির জন্যে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি থাকা অত্যাবশ্যক ঃ
(১) মানসাধ্যাত্মিক শিক্ষা৷ এই মানসাধ্যাত্মিক শিক্ষার অভাবে সমাজ খণ্ড–বিখণ্ড হয়ে যায়৷
(২) নীতিবাদীদের শাসন৷
(৩) একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ সামাজিক–অর্থনৈতিক সংরচনা৷
(৪) ক্রমবর্ধমান ক্রয়ক্ষমতা৷ মানুষের মাথাপিছু আয় যদি ৫০,০০০/– টাকা হয় আর চালের দাম যদি কুইন্টাল প্রতি ৮০,০০০/– টাকা হয়ে যায় তবে জনসাধারণের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে৷
প্ত মার্কসবাদ তো এখন মৃত৷ প্রাউটের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
উত্তর ঃ লেনিনের দৈহিক মৃত্যু তো অনেক আগেই হয়ে গেছে৷ আর এখন কম্যুনিজম বা লেনিনজমের ৰৌদ্ধিক মৃত্যু ঘটছে৷ পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে রয়েছে বৈয়ষ্টিক পুঁজিবাদ ও সাংঘিক পুঁজিবাদ group capitalism৷ প্রাচ্য দেশগুলিতে বৈয়ষ্টিক পুঁজিবাদ কিছু রয়েছে৷ কিন্তু এখানে রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের আধিপত্যই বেশি৷ পুঁজিবাদে সমর্থন আদায় করা হয় টাকার মাধ্যমে৷ আর, কম্যুনিজমে সমর্থন আদায় করা হয় ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে৷ যেমন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মেদিনীপুরের হাওড়ার উলুবেড়িয়া মহকুমায়, হুগলী ও বর্ধমানের গ্রামবাসীরা কম্যুনিষ্ট পার্টির ভীতিতে রাজনৈতিক ভাবে পদানত হয়ে গেছে৷ কম্যুনিষ্ট নেতাদের মুখোশ খুলে গিয়েছে৷
এখন ৰুদ্ধিজীবীরা প্রাউটকে এর বিকল্প হিসেবে পাচ্ছে৷ সাধারণতঃ সমাজের ৫০ক্ম শতাংশ লোক ভাল, ২৫ক্ম শতাংশ লোক সাধারণ ও ২৫ক্ম শতাংশ লোক দুষ্ট৷
যদি তোমরা ৫০ক্ম–এর সঙ্গে ২৫ক্ম যোগ করতে পার তাহলে ৭৫ক্ম শতাংশ লোক প্রাউটের দিকে এসে যাবে৷ প্রাউটের বাণী জনসাধারণের মধ্যে নিয়ে যাও৷ মার্কসবাদের নিষ্ফল ভাবাদর্শ সমাজের বুকে শূন্যতার সৃষ্টি করেছে৷ প্রাউটের ভাবাদর্শ দিয়ে এই শূন্যস্থান পূরণ করতেই হবে৷
প্ত একদলীয় শাসনতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মৌলনীতির মধ্যে কতটা সামঞ্জস্য রাখা যেতে পারে?
উত্তর ঃ একদলীয় শাসনতন্ত্র একটি শক্ত শাসনব্যবস্থা দেয় ঠিকই যা কিনা এর একটা ভাল দিক৷ কিন্তু এই ব্যবস্থার কিছু কুফলও আছে৷ একদলীয় শাসনতন্ত্র সুফলগুলি কী কী? এটা সত্য যে একদলীয় শাসনতন্ত্রে সরকার খুব শক্ত হয় ও শাসন ক্ষমতার কেন্দ্রীয়করণ ঘটে৷ যদি একনায়ক শাসক dictator একজন কঠোর নীতিবাদী ব্যষ্টি হন তবে সমাজের নৈতিক মান খুব বেড়ে যেতে পারে৷ দেশের সামরিক শক্তি বেড়ে যাবে ও সরকারের সমস্ত নীতি ও পরিকল্পনা সহজে রূপায়িত হতে পারবে৷ এই ব্যবস্থায় সরকারের সব ভাল ভাল জিনিসগুলি পাওয়া যায়৷ কিন্তু এর সব চাইতে বড় ত্রুটি হচ্ছে যে জনগণের কণ্ঠ এখানে রুদ্ধ করে রাখা হয়৷ মানুষ চায় তার মনের ভাব প্রকাশের যথোপযুক্ত মাধ্যম৷ একদলীয় শাসনতন্ত্রে বা একনায়কতন্ত্রে এটা নেই৷
গণতন্ত্রের গুণও আছে আবার ত্রুটিও আছে৷ গণতন্ত্রের ভাল দিকগুলি কখনই বাস্তব ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয় না৷ এটাই গণতন্ত্রের প্রধান ত্রুটি৷ যেখানে মানুষ অধিকতর সামাজিক–অর্থনৈতিক– ভাবে সচেতন, মানুষ হিসেবে সচেতন, সেখানে কিছুটা সুফল পেলেও, যেখানে এসব চেতনা কিছুই নেই সেখানে গণতন্ত্র একটা প্রহসন হয়ে দাঁড়ায়৷
আমি বলিনি যে ভারতের এই অবস্থা হয়েছে কিন্তু এ রকম অবস্থা কিছুটা তো হয়েইছে৷ তোমরা ৰুঝতে পারলে তো?
প্ত দ্রব্য বিনিময় বাণিজ্য barter trade কোন্ দেশের পক্ষে সুবিধাজনক বলুন–উন্নত, উন্নয়নশীল না অনুন্নত দেশ?
উত্তর ঃ উন্নয়নশীল দেশগুলির পক্ষে সুবিধাজনক৷ কিন্তু যে দেশগুলিতে অতিরিক্ত surplus দ্রব্য, যেমন কাঁচামাল সীমাৰদ্ধ বা অপ্রতুল সেই দেশগুলিতে এর সুবিধা পাওয়া যাবে না৷ ৰাঙলাদেশে পাট ও পশুচর্ম অতিরিক্ত উৎপাদন হয় বলে সে দেশের পক্ষে দ্রব্য বিনিময় বাণিজ্য সুবিধাজনক৷ যেখানে অতিরিক্ত দ্রব্য surplus নেই সেখানে প্রত্যক্ষ বাণিজ্যের দরকার নেই৷
প্ত যখন বিশ্ব সরকার গঠিত হবে তখনও কি বিশ্ব সামরিক রক্ষীবাহিনী রাখতে হবে?
উত্তর ঃ বিশ্ব রক্ষীবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা আছে কারণ আন্তঃগ্রহ যুদ্ধ হতে পারে৷