ফাঁসী নয়, গুলি করুন

লেখক
পথিক বর

‘পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী শোষণের দিন ফুরিয়ে আসছে৷ এ সংগ্রাম আমরা শুরু করিনি, আমাদের জীবন অবসানের সঙ্গে সঙ্গে এ সংগ্রাম শেষ হয়েও যাবে না৷ ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে বর্তমান বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ সংগ্রাম অনিবার্যভাবে গড়ে উঠেছে৷ আমাদের মৃত্যুতে আত্মদানের পুষ্পমাল্যে আর একটি নতুন ফুল গাঁথা হবে৷ যতীন দাসের অতুলনীয় আত্মদান, ভগবতী চরণের হৃদয় বিদারক অথচ মহান আত্মদান ও আমাদের সংগ্রামী সাথী আজাদের গৌরবময় আত্মদান ইতিমধ্যেই আত্মদানের পুষ্পমাল্যটিকে বর্ণোজ্জ্বল করেছে৷

আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একথা বললে বোধহয় আপনি দ্বিমত হবেন না যে, আপনি আমাকে ফাঁসী দিতে কৃত সংকল্প এবং আপনি ফাঁসী দেবেনই৷ আপনার হাতে ক্ষমতা আছে ও আপনারা মনে করেন, ক্ষমতার জোরেই কৃতকর্মের যৌক্তিকতা প্রমাণ করা যায়৷ আমি জানি জোর যার মুল্লুক তার--- এই নীতি নিয়েই আপনি চলেন৷ আমাদের বিচারের প্রহসন এর জ্বলন্ত প্রমাণ৷

আমরা বলতে চাই, আপনার আদালতের সিদ্ধান্ত হ’ল, আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি অর্থাৎ আমরা যুদ্ধ বন্দী৷ আমরা তাই যুদ্ধ বন্দী সুলভ ব্যবহার চাই৷ আমরা বলতে চাই আমাদের গুলি করে হত্যা করা হোক৷ আপনার আদালতের বক্তব্যকে আপনি যে মূল্য দেন তা প্রমাণের দায়িত্ব আপনারই৷

আমাদের অনুরোধ এবং আশা, আপনি অনুগ্রহ করে সেনা দপ্তরে আদেশ দিন, তারা যেন সৈন্য বাহিনী পাঠিয়ে আমাদের হত্যা করে৷                         নিবেদক

          ভগত সিং, রাজগুরু, শুকদেব

এই ঐতিহাসিক অগ্ণিবর্ষী পত্রটির লেখক ফাঁসীর আসামী মহান বিপ্লবী দেশপ্রেমিক ভগৎ সিং৷ লাহোর জেলে ফাঁসীর জন্য অপেক্ষারত থাকাকালীন ফাঁসীর চার দিন আগে ১৯শে মার্চ ১৯৩১ সালে লাহোরের গভর্নরকে এই পত্রটি ভগৎ সিং লিখেছিলেন৷ লাহোরের অত্যাচারী পুলিশ সুপার স্কটকে হত্যা করতে গিয়ে অন্য এক অফিসারকে মেরে বসেন ভুলবশতঃ ভগৎ সিং ও তাঁর সঙ্গীরা৷ বিচারে ভগৎ সিং, রাজগুরু, শুকদেব ও আরও কয়েকজনের ফাঁসীর আদেশ হয়৷ ফাঁসীর রায় শোনার পর ভগৎ সিংয়ের আইনজীবী তাঁকে গভর্ণরের কাছে ক্ষমা চেয়ে চিঠি লিখতে বলেন৷ জবাবে এই অগ্ণিবর্ষী পত্রটি গভর্নরকে লেখেন ভগৎ সিং৷

ভারতের মুক্তিযুদ্ধের এই দুঃসাহসী দুর্ধর্ষ তরুণের জন্ম ১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দে ২৮শে সেপ্ঢেম্বর স্বাধীনতা সংগ্রামে কলকাতার মতোই আর এক বিপ্লব তীর্থ অবিভক্ত পঞ্জাবের লাহোরে৷ পিতার নাম কিষান সিং৷ পরিবারটি স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিল৷ তাই ছাত্র জীবন থেকেই দেশপ্রেমের পাঠ পেয়েছিলেন ভগত সিং৷ লাহোর ন্যাশনাল কলেজে পড়ার সময় থেকেই দেশের মুক্তি সংগ্রামে যোগ দেন ভগত সিং৷ ঐ সময়ে তদানীন্তন বরিষ্ঠ কংগ্রেস নেতা লালা লাজপত রায় পুলিশি লাঠির পরিচালনায় মৃত্যুর পর  ভগত সিং প্রত্যক্ষভাবে বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দেন৷ তারপর ইতিহাস!

তিনি চেয়েছিলেন পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী শোষণমুক্ত স্বাধীন ভারত৷ দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু ভগত সিং এর স্বপ্ণ আজও সফল হয়নি৷ খণ্ডিত ভারত, ভাগ হয়েছে ভগৎ সিংয়ের পঞ্জাব ও তাঁর বাঙালী সঙ্গী বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের বাঙলা৷ আর পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী শোষণমুক্তি! জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে দেশবাসীর বুকে দেশী পুঁজিবাদী সাম্রাজ্যবাদী শোষক৷ দেশবাসী আর এক ভগত সিং এর অপেক্ষায়৷