ভারতবর্ষ আমাদের দেশ৷ প্রায় ১৯০ বছর ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শোষণ ও শাসনাধীন থেকে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে৷ বহু পুরানো জমিদারী, জায়গীরদারী, সামন্তপ্রথা বিলোপ করে, নতুন ভূমি–সংস্কার আইন চালু হয় রাজ্যে রাজ্যে জমির ব্যষ্টি মালিকানা স্বীকার করে, পরিবার পিছু কৃষি ও অকৃষি জমির পরিমাণের উর্দ্ধসীমা বেঁধে দেওয়া হয় কিন্তু মান্ধাতা আমলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আইল সরিয়ে, কর্ষকদের উৎপাদক সমবায় তৈরী করে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে উন্নততর চাষ–বাসের পরিকল্পনা বা আইন আজ পর্যন্ত দেশে তৈরী করা হয়নি জল ও মাটির পরীক্ষাগার, সেচের জন্য ভূ–গর্ভস্থ জল না তুলে প্রাকৃতিক উৎস ও বৃষ্টির জল ধরে রাখার বড় জলাশয়ের বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি মাটি–জলের গুণগত মানোন্নয়নে জৈব প্রক্রিয়া–পদ্ধতির প্রচার–প্রসার–ব্যব্ সরকার আদৌ করেনি৷ দেশের ২৪.৪ কোটি পরিবারের ১৭.৯ কোটি পরিবার গ্রামে বাস করে অর্থাৎ দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৩ শতংাশ, মোটামুটি ৯০ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ–পরোক্ষ ভাবে কৃষির উপরে নির্ভরশীল ছিল কাজেই শক্তিশালী ভারতবর্ষ পুনর্ঘটন–পর্বের প্রথম সোপান ছিল উন্নত ভূমি সংস্কার ও কৃষির ব্যাপক আধুনিক পরিকল্পনা৷ কৃষিকে শিল্পের মর্যাদা প্রদান করে, দেশ জুড়ে ব্লকভিত্তিক ‘‘উৎপাদক সমবায় সংস্থা’’–পরিচালিত কৃষি–সহায়ক ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের ব্যাপক ঘটন করার দায়িত্ব ছিল সরকারের ‘গণ–র্থনীতি’–র পরিকল্পনার মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্যের শিল্পঘটনের পাশাপাশি অকৃষি শিল্পের বিকাশ সাধন করার মধ্যেই শক্তিশালী, সুখী দেশ ঘটনের সত্য লুকিয়ে ছিল৷ আমাদের দেশ তথা বঙ্গের শাসককুল ১৯৪৭ থেকে আজ পর্যন্ত সে পথে পা মাড়ান নি ফলে সিংহভাগ নিরক্ষর ও ক্ষুধার্থ মানুষের দেশে পূর্ণাঙ্গ আর্থ–সামাজিক–রাজনৈ জীবনাদর্শ–বিহীন বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসনে দুর্নীতি–লোভ–লালসার্ অগ্রগতি হয়েছে সীমাহীন দারিদ্রের প্রগতি হয়েছে আকাশচুম্বি সিংহভাগ সম্পদের মালিক হয়েছেন দেশের কয়েকজন ধনী ভারতীয়৷
(১) ৯০ কোটি গ্রামীণ মানুষের ৫৬ শতাংশ বা প্রায় ১০ কোটি পরিবার (জনসংখ্যা কম–বেশী ৫০ কোটি) ভূমিহীন৷
(২) ২৮ কোটি ভারতবাসী রাত্রে ক্ষুধার্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে এবং সকালে ক্ষুধার্থ অবস্থায় বিছানা থেকে ওঠে৷
(৩) জি.বি.ডি.–র রিপোর্ট ঃ বায়ুদূষণজনিত রোগে ভুগে প্রতিবছর ভারতবর্ষে ৬২০,০০০ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে৷
(৪) ক্রমাগত ক্ষুধার্ত থেকে থেকে প্রতিদিন নূ্যনতম ৭০০০ ভারতবাসীর মৃত্যু হয়৷
(৫) ক্রমাগত ক্ষুধার্ত থেকে প্রতিবছর ২৫ লক্ষ ভারতবাসীর মৃত্যু হয়৷
(৬) ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে অবস্থানকারী যুবশক্তির ২০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪.৭ কোটি আক্ষরিক অর্থে কর্মহীন৷
(৭) সি.আই.বি.আই.এল.–এর তথ্যানুযায়ী ঃ প্রায় ৫২৭৬ জন ধনাঢ্য ব্যাঙ্কঋণ গ্রহিতা ইচ্ছাকৃতভাবে প্রায় ৫৬,৫২১ কোটি টাকা সরকারী ঋণ আটকে রেখেছেন৷ ব্যাঙ্কের একটি কর্মচারী সংঘটন এ.আই.বি.ই.এ.–র ঘোষণায় জানা যায় যে, মাত্র ৫০টি কর্পোরেট ফার্ম ৪০৫২৮ কোটি ঋণের টাকা পরিশোধ করছে না৷
(৮) ‘দি ব্লাক ইকোনমি অফ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থের লেখক মি. অরুণ কুমারের অভিমত ঃ প্রতি বছর গড়ে ১৮ ট্রিলিয়ন টাকা বা ৩১৪ বিলিয়ন ইউ.এস. ডলার আয়কর চুরি করে বড় বড় শিল্পপতি–ব্যবসায়ীর্৷
(৯) কেন্দ্রিয় অর্থমন্ত্রকের উচ্চপদস্থ আধিকারিক মি. সুনীল গুপ্তার মতে, সরকার বড় বড় কর্পোরেটদের আয়কর ফাঁকি না দেবার জন্য সরকারী কোষাগার থেকে প্রতি বছর গড়ে ৮০০ বিলিয়ন টাকা ‘কর উৎসাহ’ বাবদ ছাঁড় দেয়৷
(১০) প্রতি বছর দেশে ৩০০০০ বিলাসবহুল গাড়ী (কার) বিক্রি হয়৷
(১১) বিপণণ অর্থনীতিবিদ্–বিশেষজ্ঞ্ মতে, ভারতীয়দের কালো টাকা মরিশাস রাষ্ট্রে সহজেই গচ্ছিত রাখা যায় বর্তমানের এফ.ডি.আই–এর সুযোগে উক্ত মরিশাসে গচ্ছিত ভারতীয় কালো বাজারীদের কালো টাকা পুনঃরায় ভারতবর্ষে লগ্ণী হচ্ছে৷ এপ্রিল ২০০০ থেকে মার্চ ২০১১–র মধ্যে মরিশাস ও সিঙ্গাপুর থেকে দেশে লগ্ণী হয়েছে সার্বিক লগ্ণীর যথাক্রমে ৪১.৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৫৪.২২৭ বিলিয়ন ও ৯.১৭ শতাংশ অর্থাৎ ১১.৮৯৫ বিলিয়ন ইউ.এস.ডলার৷ কালো টাকা আইনস্বীকৃত ভাবে সাদা হয়ে গেল৷
(১২) ৩১/১২/২০১০ তারিখে বেকারের সংখ্যা ৩৮৮.২৭ লক্ষ ঃ পশ্চিমবঙ্গে নথিভুক্ত ও অনথিভুক্ত বেকারের সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে৷
(১৩) ভারত সরকারের নথিপত্রে জানা যাচ্ছে, দেশের কমপক্ষে এক লক্ষেরও বেশী স্পটে বেআইনিভাবে আকরখনন চালায় কালোবাজারী চক্র৷
(১৪) ক্ষুধার্ত পৃথিবীর রাজধানীর নাম ভারতবর্ষ, কারণ সবথেকে বেশী ক্ষুধার্ত মানুষের বসবাস এখানে৷
(১৫) ২০০০–২০১৫ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বন্ধ ১৭টি চা বাগানের ১৪০০ শ্রমিক না খেতে পেয়ে তিলে তিলে মারা গেছেন৷
(১৬) ১৯৯৭–২০০৫–এর মধ্যে প্রতি ৩২ মিনিটে দেশের একজন চাষী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন৷
(১৭) ১৯৯৫–২০১৪–র মধ্যে দেনার দায়ে দেশের নূ্যনতম ৩০৯,৪২৬ জন চাষী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন৷
বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা–ভিত্তিক আমাদের দেশের ‘জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন’–এর ২০১২ সালের তথ্যভাণ্ডারের পরিসংখ্যান বলছে – ‘‘মোট জনসংখ্যা ১২১ কোটির মধ্যে ৪৪ কোটি ৭৭ লক্ষ অর্থাৎ ৩৭ শতাংশ ‘আন্তর্জাতিক দারিদ্র সীমা’–র (দিনে ১.২৫ ডলার) নীচে অবস্থান করছে’’৷ এন.ভি.বি.ডি.সি.পি.–র তথ্যানুযায়ী ‘‘শুধুমাত্র ডাইরিয়া রোগাক্রান্ত হ’য়ে প্রতিবছর ৪০২৯৭ জন মানুষ মারা যায়৷’’ বিশ্ব ব্যাঙ্কের ২০০৯ সালের তথ্য, বলছে – ভারতবর্ষের ২৪ লক্ষ নর–নারী মারণ রোগ এইডস্–এ আক্রান্ত, যার ৩৯ শতাংশ নারী৷’’ আন্তর্জাতিক ক্ষুধা–সূচী (গ্লোব্যাল হাঙ্গার ইনডেক্স, ২০১৫)–র তথ্যানুযায়ী ঃ ‘‘সারা পৃথিবীর ক্ষুধার্ত মানুষের ২৫ শতাংশ ভারতবাসী’ ‘‘দেশের ৫২ শতাংশ মহিলা ও ৭২ শতাংশ শিশু রক্তাপ্লতা (এ্যানিমিয়া) রোগের শিকার৷ অপুষ্টিজনিত রোগে ভুগে ভুগে প্রতিদিন ৩০০০ শিশুর মৃত্যু হয় ভারতবর্ষে৷ ভারতবর্ষের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস্ ব্যুরো–র তথ্য বলছে – ‘‘প্রতি ১ মিনিটে ২৬ জন নারী অপরাধীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়’’, ‘‘২০১২ সালে মহিলাদের বিরুদ্ধে ২৪৪, ২৭০টি আই.পি.সি.–কেস নথিভুক্ত হয়েছে’’৷ ‘‘২০১১ সালে সারাদেশে ৭১১২ জন মেয়ে শিশুকে ধর্ষিতা হতে হয়েছে’’৷ ‘‘১৫২৮৪ টি শিশু অপহূত হয়েছে’’ ‘‘২৪২০৬টি নারী–ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ও ৩৫৫৬৫ জন নারী অপহূত হয়েছেন’’, ‘‘পণপ্রথার শিকার হয়েছেন ৬৬১৯ জন নারী দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সারাদেশে কম–বেশী ৩০ লক্ষ নারী পতিতা হিসাবে বেঁচে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, যাদের ২০ লক্ষের বয়স ১৮ বছরের কম৷’’
ভারতবর্ষের স্বদেশী রাজনীতিবিদ্ পরিকল্পনাকার, রাষ্ট্রনেতা, এম.পি, এম.এল.এ., আমলা–আধিকারিক ও শিল্পপতি–ব্যবসায়ীদ্ ৬৯ বছরের দেশঘটন ও দেশবাসীদের নূ্যনতম প্রয়োজন–প্রাপ্তির কিছু নমুনা আমরা পেলাম এখানেই শেষ নয়... আরো আছে... অনেক অনেক নমুনা আছে৷
ইংরেজদের ১৯০ বছরের শাসন–শোষণ–ত্যাচ জর্জরিত ভারতবাসী, স্বাধীনদেশে সমান অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিল, সুস্থ শাসন ও সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশীদার হ’য়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য–বস্ত্র–বাসস্থা উপযুক্ত গ্য্যারান্টি আশা করেছিল কিন্তু স্বাধীনোত্তর ৬৯ বছরে দেশবাসী কি পেয়েছে?
১৯৪৭–এর ১৫ই আগষ্ট, দেশবাসী স্বীধান ভারতবর্ষের প্রথম গভর্ণর জেনারেল হিসাবে পেয়েছিল শোষক ইংরেজ মাউন্টব্যাটেনকে ১৯৪৮–এর ২১শে জুন দেশবাসী পেয়েছিল, স্বাধীন ভারতবর্ষের দ্বিতীয় গভর্ণর জেনারেল চক্রবর্তী রাজাগোপাল আচারিয়াকে – যিনি ভারত–শত্রু ব্রিটেনের সম্রাট ষষ্ঠ জর্জ ও তাঁর বংশধর–উত্তরাধিকা সুচারুরূপে ও যথাযথভাবে সেবা করবার শপথ বাক্য পাঠ করে নোতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন৷ দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর ঘনিষ্ট, আস্থাভাজন ভি.কে. কৃষ্ণ মেনন (বৃটেনে ভারতের হাই কমিশনার) সেনাবাহিনীর জীপ কেনাববাদ ৮০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী কোন শাস্তি না দিয়ে মেননকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় স্থান দিয়ে সম্মানিত করেন৷ আজাদ হিন্দ বাহিনীর রেখে যাওয়া কোটি কোটি টাকা মূল্যের ধন–রত্নভাণ্ডার কার্যতঃ লুঠ হয়ে গেছে প্রধানমন্ত্রী ও তার পারিষদবর্গ মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন৷ সৎ, নীতিবাদী, দেশপ্রেমিক ভারতবাসী সেদিন অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে ভারতবর্ষ, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের পথে নয়, ঐক্যহীন এক বিচিত্র পথে, বলা যেতে পারে ঐক্য–খণ্ডতা বিনষ্টকর গৃহযুদ্ধের পথে এগিয়ে চলেছে৷ সেদিন (১৯৫১) ভারতবর্ষে ছিল ৩৬ কোটি মানুষ তাঁদের বেঁচে থাকার নূ্যনতম খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রাপ্তির উপযোগী পরিকল্পনা তৈরী করাই ছিল স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে ঊষাকালের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তথা দেশসেবকদের অন্যতম প্রধান কাজ কিন্তু তাঁরা দেশকে সে পথে পরিচালিত না করে, হাতে গোনা মুষ্টিমেয় কিছু ব্যবসায়ী–শিল্পপতিদ্ স্বার্থে বৃহদায়তন অকৃষি শিল্প ঘটনের সর্বানাশা পথে দেশকে পরিচালিত করলেন৷ কৃষি–সহায়ক ও কৃষি–ভিত্তিক অপরিহার্য ভোগ্যপণ্যের প্রাধান্যযুক্ত, ‘গণ–র্থনীতির’ পরিবর্তে, ব্যষ্টি–মালিকানাধীন, মুনাফা–সর্বস্ব পুঁজিবাদী অর্থনীতির পথে দেশকে ঠেলে দেওয়া হ’ল৷ খাদ্যশিল্পের পরিবর্তে বাদ্যশিল্প, আবরণ শিল্পের পরিবর্তে আভরণ শিল্পের পরিকল্পনা অগ্রাধিকার পেল৷
২৯ কোটি ক্ষুধার্ত ও নিরক্ষরসহ ৩৬ কোটি ভারতবাসীকে স্বাধীন দেশের নেতৃবৃন্দ উপহার দিলেন ‘বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা’ – যেখানে প্রত্যেক ভারতবাসীর ভোটের মূল্য এক অতি শ্রুতিমধুর ভাষায় – ‘স্বাধীনতা’ – রাজনৈতিক স্বাধীনতা আর বৈশ্যবুদ্ধির কূট কৌশল প্রয়োগ করে কেড়ে নেওয়া হ’ল – ‘‘অর্থনৈতিক গণতন্ত্র’’৷ জাতির জনক মহাত্মাগান্ধীর বিশ্বস্ত, অনুগত ও একান্ত স্নেহভাজন রাজেন্দ্রপ্রসাদ, জওহরলাল নেহেরু, চক্রবর্ত্তী রাজাগোপাল আচারিয়া, রফি আহমেদ, সর্দার প্যাটেল, জগজীবন রাম, আবুল কালাম আজাদ–সহ অন্যান্যরা বৃটিশের কাছ থেকে ভিক্ষালব্ধ স্বাধীনতা, ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের কাছে বন্ধক রাখলেন বন্ধকী সম্পত্তি – অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের স্বাধীনতা৷৷ অর্থনৈতিক গণতন্ত্রহীন ভারতবর্ষে, সাত দশকের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসনে, দেশসেবক–পরিচালক্ সীমাহীন দুর্নীতি, শোষণ ও ভণ্ডামীর নিম্নোক্ত কিছু তথ্য বিবেচনা করা যাক্৷
‘‘১২১ কোটি মানুষের ভারতবর্ষের সর্বমোট স্থাবর–স্থাবর সম্পত্তির ৫৩ শতাংশ অর্থাৎ অর্দ্ধেকেরও বেশী সম্পত্তির মালিক, মাত্র ১ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটির কিছু বেশী ধনী ভারতবাসী৷ দেশের সর্বমোট ৬৮.৬ শতাংশ সম্পত্তির মালিক মাত্র ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৬ কোটি ৫ লক্ষ ধনী ভারতবাসী আর দেশের ৭৬.৩ শতাংশ সম্পদ ১০ শতাংশ (১২ কোটির কিছু বেশী) ব্যবসায়ী–শিল্পপতি– সরকারী কর্মচারীদের দখলে অথচ দেশের গরীবতম ৫০ শতাংশ বা ৬০ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ৬.৫ শতাংশ৷ ২০১৫–র ধনী ভারতীয়দের তালিকায় ৯৭ জন ডলার–বিলিয়নার আছেন (১ কোটি ইউ.এস. ডলার মানে ১০/০৪/২০১৬ তারিখে ছেষট্টি কোটি বিয়াল্লিশ লক্ষ টাকা) সারা পৃথিবীর ডলার–বিলিয়নারের তালিকায় সংখ্যাগত দিক থেকে ভারতবর্ষ প্রায় শীর্ষস্থানে – কখনও চতুর্থ, কখনও পঞ্চম স্থানে৷ ২০১৪–র শেষে, দেশে ২২৬,৮০০ জন ডলার–মিলিয়নার আছে (এক মিলিয়ন= দশ লক্ষ) ... ভাবুন অথচ, ১৯৯৫ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ৩০০,০০০ চাষী অভাবের জ্বালায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন যে দেশ ডলার–বিলিয়নারের তালিকায় চতুর্থ, সে দেশ মানুষের গড় আযু, শিক্ষার মান ও জীবনযাত্রার মানের নিরীখে বিশ্বে ১৩৫তম স্থানে... ভাবুন৷’’
আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন, হিসাববহির্ভূত টাকাই ‘‘কালো টাকা’’ উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থাপনা–সংশ্লিষ্ সরকারী আইন (যথা–মজুরী, আনুতোষিক, ভবিষ্যনিধি, পেনশান, উৎপাদন, বিক্রয়, পেশা, আয়কর, সম্পদ–কর ইত্যাদি) – বহির্ভূত উপায়ে অর্জিত টাকা বা সম্পদ ‘কালো টাকা’ (ব্লাক মানি)৷ ঘুষ হিসাবে গৃহিত টাকা, কাটমানি, সরকারী টেন্ডার–সংক্রান্ত কিক্ ব্যাক্ মানি সবই বে–আইনি, অতএব কালো টাকা৷ বিদেশে ভারতীয়দের গচ্ছিত ‘কালো টাকা’–র পরিমাণ নিয়ে ২০১২ সালে পার্লামেন্টে আলোচিত হয়েছে ভারত সরকার, আনুমানিক কালো টাকা ৫০০ ইউ.এস. বিলিয়ন ডলার (অর্থাৎ ৩৩১৮৭২৫,০০০০০০০ – তেত্রিশ লক্ষ আঠারো হাজার সাতশত পঁচিশ কোটি টাকা)–এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছে, সুপ্রিম কোর্টে সি.বি.আই. ডাইরেক্টরের ধারণা হিসাবে পেশ করা তথ্য বে–আইনি টাকা ৫০০ বিলিয়ন ডলার৷ ইন্টারনেট তথ্যসূত্রে প্রাপ্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, মরিশাস, সুইজারল্যাণ্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, সেন্ট কীটস্ দ্বীপপুঞ্জ, আরব আমিরশাহীসহ অন্যান্য করচুরির টাকা রাখার নিরাপদ আশ্রয়ে গচ্ছিত ভারতীয়দের কালো টাকার পরিমাণ মোটামুটি ৫০ ট্রিলিয়ন ইউ.এস.ডলার (ভারতীয় টাকায় ৩৩১,৮৭,২৫,০০০ মিলিয়ন – তিনশত একত্রিশ কোটি সাতাশি লক্ষ পঁচিশ হাজার মিলিয়ন টাকা)
অশিক্ষিত ভারতবর্ষে তথাকথিত শিক্ষিত ও চতুর রাজনীতিবিদ্, ব্যবসায়ী, আমলা–আধিকারিকরা, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ফাঁক–ফোকর কাজে লাগিয়ে, স্বাধীনোত্তর সাত দশকে ছোট মাঝারি বাদ দিয়ে বড় মাপের মাত্র ৯২টি অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারী ঘটিয়ে সরকারী কোষাগার থেকে ৭৩ লক্ষ কোটি টাকা লুঠ করেছেন মতান্তরে, মাত্র ৩৯টি বিখ্যাত বিখ্যাত কেলেঙ্কারীর নায়কেরা জনগণের ৮৩৯৬০৩২৩৪৩০০০০০ টাকা (আট লক্ষ ঊনচল্লিশ হাজার ছয়শত তিন বিলিয়ন দুইশত চৌত্রিশ মিলিয়ন তিন লক্ষ টাকা লুঠ করেছেন সরকার সরব–নীরব দোষীদের শাস্তি সুদূর পরাহত...৷
সাত দশক ধরে পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভুল পথে দেশকে পরিচালিত করার ফলে, এই মুহূর্তে ভারতবর্ষের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ইউ.এস.ডলার ৪৮৩.১৫১ মিলিয়ন (সেপ্ঢেম্বর ২০১৫) অর্থাৎ প্রায় ৩২০৫২২৩৭৩৪০০০০ টাকা – বত্রিশ হাজার বাহান্ন বিলিয়ন দুইশত সাইত্রিশ মিলিয়ন তিন লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা (১১/০৪/২০১৬)৷
বর্তমান বিশ্ব তথা আমাদের দেশ বা পশ্চিমবঙ্গের সর্বাধিক চর্চিত বিষয়, রাজনীতিতে দুর্নীতি ও পেশীশক্তির একচ্ছত্র আধিপত্য শুধুমাত্র আধিপত্যই নয় – রাজনীতি, দুর্নীতি ও পেশীশক্তি সমার্থক হয়ে গেছে – একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ সমষ্টি জীবনের আর্থ–সামাজিক–শিক্ষা সংস্কৃতির শিরা–উপশিরা তথা ব্যষ্টি ও পারিবারিক জীবনের সুখ–দুঃখ, হাসি–কান্না, ভালোবাসা, ইচ্ছা–নিচ্ছা, দয়া, মায়া, আনন্দ অভিব্যক্তির রন্ধ্রে রন্ধ্রে আদর্শহীন রাজনীতির প্রাদুর্ভাব ঘটেছে যার অবশ্যম্ভাবী ফল, সমষ্টি জীবনের বহুমুখী বিকাশ ও ধনাত্মক সামাজিক প্রগতি এক কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন৷ রাজনীতির অধিক্ষেত্র নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও যথার্থ ভাবেই বলা যেতে পারে যে, বৃহত্তর মানব সমাজের সার্বিক কল্যাণে রাষ্ট্রের যথার্থ পরিচালনা–ই রাজনীতির মুখ্য বিষয়৷
রাষ্ট্র পরিচালনার অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রারম্ভিক কাজ, আর্থ–সামাজিক, শিক্ষা–কৃষ্টি–সংস্কৃতি যুগোপযোগী ও প্রগতিশীল পরিকল্পনা ও আইন তৈরী করা আর মানব সমাজের প্রত্যেকের কল্যাণার্থে, বহুমুখী পরিকল্পনার আবশ্যিক পূর্বশর্ত হতে হবে – (১) আস্তিত্ত্বিক কারণে পারস্পরিকভাবে একে অপরের উপর নির্ভরশীল মানব সমাজ, জীবজগৎ ও উদ্ভিদ জগতের সার্বিক কল্যাণ তথা (২) প্রতিটি মানুষের অস্তিত্ব ও বিকাশের পক্ষে অপরিহার্য্য নূ্যনতম খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার গ্যারান্টি সৃষ্টি৷ ‘লিভ এ্যাণ্ড লেট লিভ’৷ বাঁচো ও অন্যদের বাঁচতে সাহায্য করো৷ আত্মসুখতত্ত্বের গণ্ডির বাইরে বেরিয়ে জীব, উদ্ভিদ ও মানব জগতের প্রত্যেকের অস্তিত্ব ও বিকাশের প্রয়াসে চেষ্টাশীল থাকতে হবে রাষ্ট্র পরিচালক, পরিকল্পনাকার, শাসক–প্রশাসক, বিদ্বৎ সমাজ, ব্যবসায়ী–শিল্পপতি তথা প্রতিটি নাগরিককে৷ এ প্রসঙ্গে মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার, তাঁর ‘আজকের সমস্যা’ গ্রন্থে বলেছেন – ‘‘এই বিশ্বের স্থাবর–স্থাবর কোন সম্পত্তিই কারো ব্যষ্টিগত সম্পত্তি নয়৷ সবকিছুই পৃথিবীর সকলকার পৈতৃক–সম্পত্তি, আর সেই পিতা হচ্ছেদ পরমপিতা – ব্রহ্ম৷ জীব–জগৎ একটি বৃহৎ যৌথ পরিবার এই যৌথ পরিবারের সকলের মাতা পরমা প্রকৃতি৷ প্রকৃতি বিশ্বের কোন সম্পত্তিই ব্যষ্টি বিশেষের নামে লেখাপড়া করে দেননি৷ একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের মত জগতের সমস্ত সাধারণ সম্পত্তি বা এজমালি সম্পত্তি উপযুক্ত ভাবে রক্ষণাবেক্ষণে মাধ্যমে, যথাযথভাবে কাজে লাগানো ও সবাই যাতে সমান অধিকার নিয়ে সুষম বন্টন–ব্যবস্থায় খেয়ে পরে সুস্থ শরীর–মন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে তার ব্যবস্থা করা৷’’
সমষ্টির কল্যাণ অর্থাৎ মানব সমাজের সমূহিক কলাণেই ব্যষ্টির কল্যাণ কারণ ব্যষ্টির সমাহারই সমষ্টি৷ সেজন্য পরিকল্পনা রূপায়ন, আইন প্রণয়ন, শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা ইত্যাদির মূল লক্ষ্য হবে সমষ্টির সার্বিক কল্যাণ সমাজের প্রত্যেকের কল্যাণ৷ কিন্তু ব্যষ্টি মালিকানাধীন, পুঁজিবাদী, উৎপাদন ও গণ–বন্টন ব্যবস্থায় কোন দেশ বা সমাজের প্রত্যেকটি মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা ও বিকাশোপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে না কারণ পুঁজিবাদী শাসনে, জাগতিক সম্পদের সিংহভাগ অল্প কিছু ব্যবসায়ী–শিল্পপতি, সেনাপতি–মন্ত্রী–সান্ত্ খপ্পরে চলে যায়৷ আমাদের দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৩২ কোটির মাত্র ১৩ কোটি ধনী মানুষের খপ্পরে আছে ভারতবর্ষের সমস্ত স্থাবর–স্থাবর সম্পদের ৭৬ শতাংশ বাকী ২৩ শতাংশ সম্পদ ১১৯ কোটি ভারতবাসীর এই চরম বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ন্যায় ধর্মসম্মত হতেই পারে না৷ নব্যমানবতাবাদ ভিত্তিক নোতুন আর্থ–সামাজিক দর্শন ‘‘প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব’’ বা সংক্ষেপে ‘‘প্রাউট’’ দর্শনের স্রষ্ট্রা শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার বলেছেন – ‘‘... যৌথ পরিবারে নিজের ক্ষুধা বা প্রয়োজনমত অন্ন–বস্ত্র–শিক্ষা–চি বা আরামের ব্যবস্থা সমস্ত পরিবারের আর্থিক সঙ্গতি অনুযায়ী প্রত্যেকেই পায়৷ কিন্তু ঐ পরিবারের কোন সদস্য যদি নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অন্ন–বস্ত্র, পুস্তক বা ঔষধ নিজের জিম্মায় আটকিয়ে রাখে তখন সে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ক্লেশের কারণ হয় না কি? সেক্ষেত্রে তাঁর আচরণ নিশ্চয়ই ধর্মবিরোধী – নিশ্চয়ই সমাজ বিরোধী৷ বর্তমান বিশ্বের পুঁজিবাদীরা ঠিক এই ধরণেরই ধর্ম বিরোধী বা সমাজবিরোধী জীব৷ ... প্রকৃত আধ্যাত্মিক আদর্শ অনুযায়ী ব্যষ্টিগত মালিকানা–ব্যবস্থাকে চরম ও পরম বলে স্বীকার করা চলে না আর তাই পুঁজিবাদকেও সমর্থন করা যায় না৷ জীবের সামূহিক সার্থের কথা ভাবতে গেলে তাই পুঁজিবাদের উচ্ছেদ প্রয়োজন’’৷
স্বাধীন ভারতবর্ষের পুনঃর্ঘটনের শাসন – শোষণ, লুণ্ঠন, অনাহার, অশিক্ষার যন্ত্রণা থেকে সুস্থ, সবল, আনন্দোচ্ছ্বল সমাজ ব্যবস্থায় উত্তরণের করুন চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে – পরাধীনতার অন্ধকার গহ্বর থেকে স্বাধীনতার সূর্যালোকে ভারতবাসীর উত্তরণ আদৌ ঘটেনি নৈতিকতার অভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা আয়কর ফাঁকি দিচ্ছে কারা? সরকারী অফিসে বসে কাজের বিনিময়ে ঘুষ দিতে বাধ্য করছে কারা? আয়কর ফাঁকি, ঘুষ, কিক্ ব্যাক মানি, কালো টাকা আইন ভেঙে বিদেশের ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখছে কারা এবং কেন? শুধুমাত্র দু’মুঠো পেট ভরে খাবার ও চিকিৎসার অভাবে লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীকে মৃত্যুযন্ত্রণা উপহার দিচ্ছে কারা? দৈনন্দিন হাজার হাজার ভারতবাসীর মৃত্যুমিছিলের পরিকল্পনাকার কারা? ... একটাই উত্তর – মন্ত্রী–সান্ত্রী–এম.পি.–এম.এল.এ.–ব্যবসায়ী–শিল্পপতি শাসক – প্রশাসক – আধিকারিকদের ব্যষ্টিজীবনে নৈতিকতার অভাব অর্থাৎ নীতিশক্তির নিত্যদিনের অনুশীলন এবং পরিচর্যাবিহীন অসংযমী জীবনযাত্রায় অভ্যস্ততা প্রতিদিনের জীবনাভ্যাসে লোভ–লালসা–হঙ্কার ইত্যাদির সংযম সাধনা, খাদ্যাভ্যাস, সন্তোষ সাধনবিহীন আত্মসুখতত্ত্বে–প্রতি ব্যষ্টি–মনস্তত্ত্ব৷ আর্থ–সামাজিক পরিকল্পনা ও আইন তৈরী, প্রশাসন পরিচালনা, বিভিন্ন নিয়ামক সিদ্ধান্ত গ্রহণসহ হাজারো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিযুক্ত ব্যষ্টির প্রত্যেকেরই নৈতিকতায় প্রতিষ্ঠা ব্যতিরেকে, রাজনীতি বা দেশ পরিচালনের কাজে অংশগ্রহণ দুর্নীতির জন্ম দিতে বাধ্য সুস্থ–সুখী মানব সমাজ ঘটন কোনদিনই সম্ভব না৷ সেজন্য রাজনীতিতে নীতি শক্তির প্রতিষ্ঠা এবং তার জন্য নীতিবাদে প্রতিষ্ঠিত হবার দৈনন্দিন অনুশীলন ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই কারণ বিশেষ মেধা, সুখশ্রাব্য বত্তৃণতা, অগাধ জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য, কোটি কোটি টাকা, গাড়ি–ঘোড়া – কোনকিছুতেই নীতিশক্তির জাগরণ ঘটানো পৃথিবীর কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না তার জন্য দরকার প্রকৃত আধ্যাত্মিকতাভিত্তিক নীতিশক্তির সাধনা, জীবনচর্যা৷ রাজনীতিতে আধ্যাতিকতা ও নীতিশক্তি অপরিহার্য৷ মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন – ‘‘অনেককে হয়তো বলে শুনেছ যে আমি ধর্ম–কর্ম বুঝি না, সৎপথে, থাকব, কারও ক্ষতি করব না, মিথ্যে বলব না, – ব্যস এইটেই যথেষ্ট, এর বেশী কিছু করবার বা শেখবার প্রয়োজন দেখি না৷ নৈতিকতা জিনিসটাই হচ্ছে একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ জীবনযাপনের প্রচেষ্টা৷ এটাকে ঠিক স্থির শক্তি না বলে চলচ্ছক্তি বলাই অধিকতর সঙ্গত, কারণ ,তে প্রতি মুহূর্তেই নিজের অন্তঃস্থ বিরোধী ভাবগুলোর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে’ বাইরের সাম্য বজায় রাখতে হচ্ছে৷ এটা কোন অন্তস্থ–বহিঃস্থ উভয়তঃ সাম্যাবস্থা নয়৷’’
- Log in to post comments