রাখী-বন্ধনের উৎস

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

শ্রাবণী পূর্ণিমায় রাখী-বন্ধন একটি সর্বভারতীয় উৎসব৷ তবে হিন্দী-ভাষাভাষী অঞ্চলে যেমন নারীপুরুষ নির্বিশেষে একে অপরের হাতে রাখী পরিয়ে দেয় বাংলাদেশে ঠিক এতটা নির্বাধ রাখীবন্ধন হয় না৷ এখানে কেবল বোনেরাই ভাইদের হাতে রাখী বেঁধে দেয়৷

রাখীবন্ধনের উৎস মূলে একটি পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে৷ একবার অসুররা স্বর্গপুরী দখল করে নেয়৷ দেবরাজ ইন্দ্র রাজ্যচ্যুত হন৷ তাঁর স্ত্রী শচী তখন শিবের আরাধনা করে স্বামীর বিঘ্ননাশক একটি কবচ লাভ করেন৷ স্বর্গরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য ইন্দ্র বৃহস্পতির সঙ্গে আলোচনায় বসলেন৷ তার আগে শচী ঐ রক্ষাকবচ ইন্দ্রের ডান হাতে বেঁধে দেন, যাতে যে কোন কাজে সফল হতে পারেন৷ হিন্দুদের ধারণা, শ্রাবণী পূর্ণিমাতেই শচী ঐ রক্ষাকবচ ইন্দ্রের হাতে পরিয়ে দিয়েছিলেন৷ সেই থেকেই রাখী-বন্ধনের  সূত্রপাত৷

এছাড়া রাখী-বন্ধনের উৎস খুঁজতে গিয়ে অনেকে জৈন ধর্মগ্রন্থের  সাতশো মুনির বিপদ থেকে উদ্ধার লাভের কাহিনীও উল্লেখ করেন৷ ভারতে  জৈনধর্মের প্রভাব খুবই সীমায়িত৷ অতএব সর্বভারতীয় একটি উৎসবের মূলে জৈনধর্মের দান সন্দেহজনক৷

মধ্যযুগের একটি ঐতিহাসিক কাহিনীও রাখী-বন্ধনের উৎসরূপে বিবেচিত হতে পারে৷ কর্ণবতী ছিলেন রাণা সংগ্রাম সিংহের রাজকার্য-নিপুণা বুদ্ধিমতী স্ত্রী৷ তিনি দ্বিতীয় মোগল সম্রাট হুমায়ুনকে ‘ভাই’ হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন৷ তাতে হুমায়ুন অভিভূত হয়ে কর্ণবর্তীকে ভগ্ণীরূপে বরণ করে উভয়ে ভাই-বোন সম্পর্ক পাতিয়ে বসেন৷ গুজরাটের রাজা বাহাদুর শাহ মালব আক্রমণ করলে সংগ্রাম সিংহ তাঁকে বাধা দেন৷ সেই ক্রোধে তিনি সংগ্রাম সিংহের মৃত্যুর পর চিতোর অবরোধ করেন৷ কর্ণবতী তখন হুমায়ুনের কাছে সুন্দর একটি রাখি পাঠিয়ে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করেন৷ সেই রাখীর মর্যাদা রক্ষার্থে হুমায়ুন বাহাদুর শাহকে যুদ্ধে পরাস্ত করে তাড়িয়ে দেন৷