সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থেকে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, সংবাদ মাধ্যম থেকে মন্ত্রী আমলা–দেশের ন্যায় নীতি শৃঙ্খলা রক্ষার দায়ীত্ব যাদের কাঁধে–তারাই আজ দুর্নীতির জ্বালে জড়িত৷ বহু দলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসকের মাথার ওপর নৈবিদ্যের মণ্ডা হয়ে যারা বসে থাকেন সেই নেতা মন্ত্রীরা দলীয় গণ্ডীর বাইরে আসতে পারে না৷ কিন্তু আমলা আদালত৷ সংবাদ মাধ্যম গণতন্ত্র রক্ষার মূল স্তম্ভগুলিই আজ দলদাসে পরিণত হচ্ছে৷ শাসকের রক্ত চক্ষুর সামনে তারা অসহায়৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকেও হতাশ হয়ে বলতে হয়–এখন টাকা দিয়ে আদালতের রায় কেনা বেচা যায়৷
কিন্তু বর্তমান সমাজের অবস্থাটা তো এইটাই৷ এ সত্যকে অস্বীকার করার উপায় নেই৷ বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে এ সব নিয়ে নানান ধরণের তর্ক–বিতর্কের ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন, রাজনৈতিক নেতা–নেত্রীরা পরস্পরকে দোষারোপ করতে উঠে–পড়ে লেগেছেন৷ এজন্যে দায়ী কোন নেতা বা নেত্রী–প্রত্যেকে এইটা বোঝাতে গলা ফাটাচ্ছেন৷ সবাই ঘোলা জলে মাছ ধরতে শুরু করে দিয়েছেন৷
কিন্তু এই সমস্যার মূল কারণ কী?
সমাজের এই ‘ক্যানসার রোগ’ কী ভাবে সারবে–এর দাওয়াই কেউ দিতে পারছেন না৷ এ ব্যাপারটা সবাই এড়িয়ে যাচ্ছেন৷ অথচ এইটাই তো দরকার৷ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পালা করে ক্ষমতায় আসছেন৷ কিন্তু সমাজের এই রোগটা ক্রমশই বেড়ে চলেছে৷ রোগ নিরাময়ের প্রকৃত উপায় কারুর কাছে জানা নেই বলেই পরস্পরের ওপর দোষারোপের প্রতিযোগিতা চলছে৷
হ্যাঁ, এই রোগের মূল কারণ ও এই রোগের প্রকৃত নিরাময়ের কথাই বলেছেন প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার৷ তিনি বলেছেন, যে যে মূল উপাদানগুলি থাকলে একটা সুষ্ঠু সুন্দর সমাজ গড়ে ওঠে, সেই উপাদানগুলির অভাব ঘটলেই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নানান ব্যাধি বাসা বাঁধবে, সমাজ দুর্বল হয়ে যাবে, মানুষ লক্ষ্যহীন–দিশাহীন হয়ে বিশৃঙ্খল জীবন যাপন করবে, দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে পড়বে, তখন সমাজে অন্যায়–ত্যাচার–শোষ রাজত্ব চালাবে৷
সমাজের এই অত্যাবশ্যক ৬টি উপাদান হ’ল (১) একটা সর্বজনগ্রাহ্য সার্বভৌম্য অধ্যাত্ম দর্শন, যা কোনো অন্ধবিশ্বাস বা কুসংস্কারের ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে না, (২) আধ্যাত্মিক অনুশীলন–যা ব্যষ্টিকে আত্মশুদ্ধির রাস্তা দেখাবে, (৩) সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী যা সবাইকে সাথে নিয়ে চলবার প্রেরণা যোগাবে, (৪) সামাজিক–অর্থনৈতিক তত্ত্ব–যা প্রতিটি মানুষের প্রথমতঃ জীবনের নূ্যনতম চাহিদা পূরণের গ্যারাণ্টী দেবে ও তাদের ক্রয়ক্ষমতার ক্রমবৃদ্ধিকে সুনিশ্চিত করবে৷ (৫) চর্যাচর্য বিধি প্রতিটি মানুষের আচার–আচরণ, জীবনচর্চা, বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের বিধিব্যবস্থায় আর (৬) এমনি একজন পথপ্রদর্শক যিনি মানুষকে ভৌতিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক সমস্ত স্তরেই এগিয়ে চলবার যথার্থ পথ–নির্দেশনা দেবেন৷
কোনো জনগোষ্ঠীতে যদি আদর্শ সমাজ নির্মাণের এই ৬টি উপাদান মজুত না থাকে, বা এই ৬টি উপাদানকে আদর্শ সমাজের সৌধ নির্মাণের কাজে না ব্যবহার করে–তাহলে সে সমাজের ভিত্ দুর্বল হতে বাধ্য ও উপরিউক্ত ব্যাধিগুলির দ্বারা আক্রান্ত হতে বাধ্য৷
পারস্পরিক দোষারোপ নিয়ে তর্ক বিতর্কে বাজার গরম করে, বত্তৃণতার তুবড়ি ফাটিয়ে সাধারণ মানুষকে সাময়িক ভাবে প্রভাবিত করে’ সমাজের নেতা–নেত্রী হওয়া খুব কঠিন কাজ নয়৷ এই ভাবেই তো চলছে বছরের পর বছর৷ কাজের কাজ হ’ল সমাজের যথার্থ উন্নতি কোন্ পথে সেই পথটা জেনে সেই ভাবে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷ জানতে হবে মানুষের মধ্যে দুর্বুদ্ধির যে রোগজীবাণু গুলো আছে, কী করে সেই রোগজীবাণু থেকে তাদের মুক্ত রাখতে হবে, কীভাবে মানুষ হীন–স্বার্থপরতার দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মনুষ্যত্বের পূর্ণ বিকাশের পথ ধরে সার্বিক উন্নয়নের পথ ধরে এগিয়ে সমাজের উপরিলিখিত কালব্যাধিগুলির নিরাময় ঘটিয়ে এক আদর্শ সুন্দর সমাজ গড়া যাবে৷ এছাড়া অন্য কোন্ ‘শর্টকাট’ পথ নেই৷
- Log in to post comments