শারদোৎসব ও শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী নববিধান

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা, নীচে ধরনীর কোলে শিউলি কাশের মেলা নিয়ে আসে শরতের আগমন বার্র্ত৷ এই শরতেই বাঙালীর প্রিয় উৎসব---দূর্র্গপূজা,এই পূজাকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজারে ছড়িয়ে পড়ে৷ কুমোর পাড়া, আলো,মাইক, প্যাণ্ডেল বহু মানুষের সাময়িক কিছু উপার্জনের পথ করে দেয়৷

তবু মনে প্রশ্ণ ওঠে, এই দুর্গাপুজার বিশাল সমারোহের মধ্যে তো প্রকৃত ধর্মের বা আধ্যাত্মিকতার কি কোনও সম্পর্ক আছে? না, তার তো কণামাত্র নেই, রয়েছে শুধু উন্মত্ততা! অবাধ মদ্যপানের সঙ্গে সঙ্গে নানান অবাঞ্ছিত আচরণ ও উচ্ছৃঙ্খলতা৷ বিসর্জনের উচ্ছৃঙ্খলতা সবচেয়ে বেশী চোখে পড়ার মত৷ চরম উচ্ছৃঙ্খলতার ওপর তথাকথিত ধর্মের তক্‌মা দেওয়া হচ্ছে৷ তথাকথিত শিক্ষিত, পণ্ডিত ও যুক্তিবাদী মানুষেরাও ডগ্‌মার বেড়াজালে নিজেদের আবদ্ধ রেখে বড় বড় বুলি  আওড়াচ্ছেন৷ চরম অন্ধ কুসংস্কারকে সামাজিক প্রথা বলে অযৌক্তিক যুক্তির ধুম্রজাল সৃষ্টি করছেন৷

আর এই তথাকথিত উন্মত্ত আনন্দের জোয়ার কিন্তু মূলতঃ শহরকে কেন্দ্র করে৷ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের বেশীর ভাগ মানুষই এই ‘আনন্দে’র ছোঁয়া পায় না৷ তারা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকেছে৷ নোতুন জামা-কাপড়ও তাদের ভাগ্যে জোটেনি৷ তাদের কথা ভাববার অবকাশ শহরের বাবুদের নেই৷

উৎসব সমাজের পক্ষে বিশেষ প্রয়োজন৷ উৎসবের মাধ্যমে প্রাত্যহিক একঘেয়েমীর জীবন থেকে সরে এসে সবাই আনন্দে মেতে ওঠে৷ একঘেয়েমী কেটে যায়৷ জীবন প্রাণোচ্ছল হয়ে ওঠে৷ কিন্তু এই উৎসব এমন হওয়া উচিত যা মানুষকে ডগ্‌মাতে আবদ্ধ না করে৷ উৎসবের নামে মানুষ যেন নিজের সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ বুদ্ধিবৃত্তিকে ভোঁতা করে দিয়ে বিপথে না যায়, অযৌক্তিক অমানবিক প্রথা-পদ্ধতিকে প্রশ্রয় না দেয়, প্রগতির পরিবর্তে অধোগতির পথে না হাঁটে৷ আজকের মানব-সংহতি ও সংশ্লেষণের যুগে মানুষ যেন সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার পথে না হেঁটে সমগ্র মানব সমাজকে এক করার পথে চলতে পারে৷

এই সমস্ত দিক বিবেচনা করে আদর্শ মানব সমাজ রচনার দিশারী শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী ‘শারোদৎসবে’র নোতুন বিধান দিয়েছেন, যা সমস্ত মানুষকে নিয়ে, মানব প্রগতির ক্ষেত্রে এক অভিনব পদক্ষেপ৷

শরতের মনোরম পরিবেশ মানুষের মনে  আনন্দের দোলা দেয়৷ তাই এই পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তিনি ‘শারদোৎসবে’র নোতুন বিধান দিয়েছেন৷ তাঁর বিধান অনুসারে সংক্ষেপে শারোদৎসবের পাঁচ দিনের উৎসবের প্রথম দিন হবে (১) ষষ্ঠীতে---শিশুদিবস৷ তাতে থাকবে এক বেলা মিলিত ঈশ্বর সাধনা সহ আনন্দ অনুষ্ঠান, শিশু প্রদর্শনী, শিশুদের ক্রীড়া প্রদর্শনী ও শিশুদের মিলিত ভোজ৷ (২) সপ্তমীতে---সাধারণ দিবস৷  এক বেলা মিলিত ঈশ্বর সাধনার সঙ্গে আনন্দ অনুষ্ঠান, যুব স্বাস্থ্য প্রদর্শনী, প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্রীড়া প্রদর্শনী ও শক্তি প্রদর্শনী৷ (৩) অষ্টমীতে---ললিত কলা দিবস৷ এই দিন বিশেষ অনুষ্ঠান হিসেবে থাকবে সাহিত্য সভা ও নানা প্রকার ললিত কলা প্রদর্শনী৷ (৪) নবমীতে ---সঙ্গীত দিবস৷ এই দিনের বিশেষ অনুষ্ঠানের মধ্যে থাকবে সঙ্গীত, যন্ত্র সঙ্গীত ও নৃত্য প্রতিযোগিতা৷ (৫) বিজয়া দশমীতে---বিজয় উৎসব৷ বর্ণাঢ্য বস্ত্র পরিধান করে বাদ্যযন্ত্র সহ শোভাযাত্রা৷ অতঃপর মিলিত সাধনা, প্রণাম ও আলিঙ্গনাদি, নিজ নিজ গৃহে অতিথি ও অভ্যাগতদের আপ্যায়ন৷

সুস্পষ্টভাবে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী প্রবর্ত্তিত শারোদৎসবের এই নববিধান সর্বজনীন, বিশ্বের সমস্ত দেশের সমস্ত গোষ্ঠীর মানুষের জন্যেও সমস্ত মানুষের মহা মিলনের উৎসব৷