সব দায় প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেই হয় না

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

গোটা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও মানুষের অসংযমী আচরণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ যার স্বীকার হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধা সব বয়সের মেয়েরা৷ স্বাভাবিকভাবে সব দায় প্রশাসনের ঘাড়ে এসে পড়ে ও প্রশাসনের মাথায় যেহেতু রাজনীতিবিদরাই বসে তাদেরকেই দায় নিতে হয়৷ প্রশাসনের অযোগ্যতা, রাজনীতিবিদদের অস্বচ্ছতা সবকিছু মেনে নিয়েও বলতে হচ্ছে এদের বাহিরে আর একটা গোষ্ঠী আছে সমাজের নক্কারজনক অবস্থার জন্য তারাও কম দায়ী নন৷ এরা হলেন শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি জগতের লোকজন ও বর্তমান খেলার জগৎও৷ এদের সুবিধা হচ্ছে এদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই, কিন্তু জ্ঞান-গর্ভ বাচালতার অবাধ স্বাধীনতা আছে৷ রুশ বিপ্লব, ফরাসী বিপ্লবের পিছনে এদের বিরাট অবদান৷ এদের লেখনী শক্তির জোরেই মানুষের চেতনা জাগ্রত হয়৷ কথাটা ১০০ শতাংশ ঠিকই৷ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামেও ব্রিটিশ ভয় পেয়েছিল বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দ মঠের ‘বন্দেমাতরম্’ শব্দটি ব্রিটিশ শাসকের কাণে সহ্য হত না৷

এ যেমন একটা দিক, এর বিপরীত দিকও আছে৷ সাহিত্যিকের কলম যেমন অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে জন জাগরণ ঘটাতে পারে, তেমনি অবাধ স্বাধীনতার নামে চটুল যৌনতা মার্র্ক শিল্প সাহিত্য চলচিত্র বাজারে চললে তার কু-প্রভাব সমাজে পড়তে বাধ্য৷ পঁুজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা এটা ইচ্ছা করেই করে৷ না হলে বলুন তো ক্রিকেট মাঠে চার ছয় মারলে কতকগুলো বাহাত্তর ইঞ্চির মেয়ে আট ইঞ্চি কাপড় পরে ধেই ধেই নাচে কেন! আমাদের সুশীল সমাজ এ নিয়ে একটা কথাও বলে না৷ তাদের শিল্প সাহিত্যও সস্তা যৌনতার রসে সিক্ত৷ এজন্যে প্রশাসন, রাজনীতিবিদ যতটা দায়ী তার চেয়ে কম দায়ী নন এই সব সুশীল সমাজ৷

তাই সমাজকে এই কদর্যতা থেকে উদ্ধার করতে হলে যেমন প্রশাসনকে হতে হবে নিরপেক্ষ ও যোগত্যাসম্পন্ন, রাজনীতিবিদদের বলিষ্ঠ নীতিবাদে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, তেমনি সমাজকে সঠিক দিশা দেখাবার দায়িত্ব নিতে হবে সুশীল সমাজকে৷ কিন্তু এরাই অন্য কোন ভাবনায় নেই৷ তাই আজ সমাজ ও সভ্যতাকে বাঁচাতে হলে কবি, সাহিত্যিক , শিল্পীদের একটা বড় ভূমিকা নিতেই হবে৷ তার পথ নির্দেশনা দিয়েছেন পরম শ্রদ্ধেয় দার্শনিক শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার৷ তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘‘শিল্পের খাতিরে শিল্প নয়, সেবা ও কল্যাণের জন্য শিল্প’’৷ এর বাহিরে অন্য কোন পথ নেই৷