বর্ত্তমানে যাঁরা ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক তাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের লক্ষ্য ও আদর্শ সম্বন্ধে কিছু জানেন কিনা সন্দেহ রয়েছে৷ দেশ সত্যিই স্বাধীন হয়েছে কিনা--- এটাই বর্ত্তমান প্রজন্মের কাছে আজ সবচেয়ে বড়ো ধরণের প্রশ্ণ৷
৭১ বছরের ভারতের গণতন্ত্রের যা ছবি সেটা দেখে মনে হয় যেন এটা একটা তামাসা ! কোটি কোটি মানুষ আজও দারিদ্র্যসীমার নীচে৷ এদেশের গরীব নাগরিকদের তো কোন নিরাপত্তা নেই৷ ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় দেশ চলছে৷ শোষণের ওপর সমৃদ্ধির সবটুকুই স্বার্র্থন্বেষী লোভীর দল ভোগ করছে৷ শোষণ তা অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এমনকি ধর্মনৈতিক---যাই হোক না কেন সেটা বেড়েছে বই কমেনি৷
বর্ত্তমানে ভারতবর্ষ ভাগ করে’ যারা সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে মেকী রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভ করেছে সেই নেতা-নেত্রীদের কতিপয় পরিবার গণতন্ত্রের নামে দেশে তর্র্জর লড়াই করছে গদী লাভের আশায়৷ তারাই ও তাদের পৃষ্ঠপোষকগণই ভালো আছে৷ রাজনৈতিক দলগুলি লাফলাফি করছে তাদের আখের গুছুতে৷ দেশ যতোদিন যাচ্ছে নিরাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে৷ চরম বেকার সমস্যা ও দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধিতে মানুষ দিশেহারা৷ কোটি কোটি মানুষের আজও মাথা গোঁজার ঘর নেই৷ প্রাথমিক শিক্ষাটুকু থেকে অনেকে আজ বঞ্চিত৷ আধপেটা খেয়ে অনেকে দিনগুজরান করে৷ স্বাধীনতা কি তাই অনেকে জানে না৷ কুসংস্কারে ও অজ্ঞানতায় আজও অনেকে আচ্ছন্ন হয়ে আছে৷ পাকিস্তান থেকে বিতাড়িত হাজার হাজার মানুষ আজও ভাসমান ইহুদিদের মতো চোখের জল ফেলছে৷ তাদের নিয়ে আজ নোংরামী চলছে গদীর স্বার্থে৷ হায় গণতন্ত্র! হায় স্বাধীনতা! স্বাধীনতা সংগ্রামী যারা আজও বেঁচে আছেন তাঁরা চোখের জল ফেলছেন, দীর্ঘশ্বাস পড়ছে তাঁদের! ভারতবর্ষের মাটিতে যাদের জন্ম তাদের বংশধরদের অনেকেই আজ নাগরিকহীন হয়ে কোথাও কোথাও বন্দীদশা যাপন করছে ! আর যারা শাসনে আছে তাদের অনেকে মহা সুখ ভোগ করছে৷ বাকিরা কোনও রকমে দিনযাপনের গ্লানিতে অর্ধমৃত৷ মোট ১২৫ কোটি মানুষের মাত্র এক শতাংশ ভাগ্যবান ধনী, যারা কিছুটা মধ্যবিত্ত তারা মোটামুটি আছে৷ যতদিন যাচ্ছে নিম্নমধ্যবিত্ত, দরিদ্রশ্রেণী বিশেষ করে দারুণ অর্থনৈতিক অভাবে যন্ত্রণা-কাতর৷ নিরাপত্তাহীনতাটা দেশের সবচেয়ে যে বড় সমস্যা৷
প্রচণ্ড রাজনৈতিক দলবাজিতে দেশ ক্ষতবিক্ষত৷ দলীয় লড়াইটা বহুভাষাভাষী রাষ্ট্রকে পঙ্গু করে ছাড়লো!
রাজনৈতিক দুবৃত্তায়নে ও প্রকৃত দেশ সেবকের অভাবে মানুষ দিশেহারা৷ পাঁচটি জিনিস যথা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থান তো সকলের দরকার৷ সেটাই আজও সকলে পায়নি৷ ৭১ বছর হয়ে গেল রাজনৈতিক স্বাধীনতার বয়স৷ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা সুদূর পরাহত৷ ধনীরাই লাঠি ঘোরাচ্ছে সারাজীবন ধরে৷ তাদের হস্তগত সবই ৷ আজ জাত, পাত, সম্প্রদায়, ধর্মমতের ভেদাভেদটাই প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছে৷ এটাই হ’ল নির্বাচনে জয়লাভের প্রায় সবদলেরই হাতিয়ার যদিও প্রায় অনেকে মানতে চায় না এই অপ্রিয় সত্য কথাটা ! কারণ ধরা পড়ার ভয়ে৷
অনেক বছর পর মানুষ আশা করেছিল হয়তো কেন্দ্রে সরকার পরিবর্তনে দেশে কিছু সুদিন আসছে৷ কিন্তু আজ সকলেই আশা হত৷ দেশ সব দিক থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে নানা কারণে৷ কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির শাসনে মানুষের যেন শ্বাসরুদ্ধ৷ কোন রাজ্যই ভালোভাবে চলছে না যদিও কোন কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিছু করার কিন্তু দলীয় কারণে কেন্দ্রের কোন সহানুভূতি নেই৷ বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার এন.আর.সি-র ব্যাপার এনে দেশের নাগরিকদেরই বিদেশী চিহ্ণিত করে তাদের মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে এককাট্টা৷ এর ভয়ঙ্কর কুফল অসমে দেখা দিয়েছে৷ এখানকার বাঙালী জনগোষ্ঠী এর শিকার৷ এদের বুকের রক্তেরই এসেছে আজকের তথাকথিত স্বাধীনতা৷ অথচ এরাই আজ নির্যাতীত, নিপীড়িত, নিঃসহায়৷ এটাই আজকের ভারতের স্বাধীনতার আসল চিত্র!
- Log in to post comments