স্বাধীনতার ৭৫ বছর পেরিয়ে গেলেও সকল ভারতবাসীর মাথায় ছাদ নেই

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায

মানুষের পাঁচটি মৌল চাহিদার একটি হল বাসস্থান৷ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ব্যষ্টিগণ নিজেরাই নিজেদের ও তাদের বংশধরদের জন্যে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে নেয়৷ এব্যাপারে তারা সাধারণত প্রশাসনের উপর সরাসরি নির্ভরশীল নয়৷ আমাদের দেশে সমস্যা আর্থিকভাবে দুর্বল মানুষদের৷ দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও তাদের মধ্যে অনেকেই এখনও মাথা গোঁজার ঠাঁই তৈরি করে নিতে পারেননি৷ ফলে শীত- গ্রীষ্ম- বর্ষা সবেতেই তাদের দুর্র্ভেগের শেষ থাকে না৷ ১৯৮৫ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল অর্থাৎ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারীদের গৃহ নির্মাণের জন্য ’ ইন্দিরা আবাস যোজনা’ চালু করেন৷নাম বদল হয়েছে এই প্রকল্পের, কিন্তু এখনও এই যোজনা চালু আছে৷ পাকা ছাদযুক্ত বাড়ি তৈরির জন্য সাহায্যের পরিমাণ কম,আর উপভোক্তা বাছাই পদ্ধতিও ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করেন অনেকেই৷ শুরুর সময় থেকেই এই প্রকল্প ঘিরে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে৷ ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক হলেই উপভোক্তা হিসেবে নাম তোলা সহজ বলে বিরোধী দলের অভিযোগ৷ শুধু এখন নয়, আগেও এই একই অভিযোগ ছিল শাসকদের বিরুদ্ধে৷

দেশের ১০০শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা আজ পর্যন্ত কোনো সরকার দেয়নি৷ আর সেই চেষ্টাও করে নি কোনো সরকার৷ অথচ এটাই করা উচিত ছিল স্বাধীন দেশের নাগরিকদের জন্য৷ দেশবাসীর কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা থাকলে তারা নিজেরাই নিজেদের উপার্জিত অর্থের মাধ্যমে বাসগৃহের সমস্যার সমাধান করে নিত৷ সরকারের অনুদানের উপর কাউকে নির্ভরশীল হতে হত না৷ রাজনৈতিক দলের পেছনে পেছনে যাতে সাধারণ মানুষ ঘুরতে থাকে তাই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ আবার ঐ অর্থ দিয়ে তাদের মাথার উপর পাকা ছাদ বানানোও সম্ভব নয়৷ এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি! মানুষ নিজে তার যোগ্যতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করবে এবং অন্ন,বস্ত্র,শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করে নেবে আত্মমর্যাদার সাথে,তা কোনো রাজনৈতিক দলই চায় বলে মনে হয় না৷ তাই কে কত অনুদান দিচ্ছে বা দেবে তার প্রতিযোগিতা চলে৷ আর এই অনুদান পাওয়া নিয়েই দুর্নীতি চলছে৷ একদল আরেক দলের বিপক্ষে অভিযোগ তুলছে, কিন্তু সাধারণ গরীব মানুষ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যাচ্ছে৷

এই যোজনা চালু হওয়ার পর থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়ে ,অথচ দুর্নীতি বন্ধ করার কোনো উপায় কেন্দ্র বা রাজ্য কোনো সরকার বের করতে পারল না৷ এই না পারাটাও কী ইচ্ছাকৃত? উপভোক্তাদের তালিকা ত্রুটিমুক্ত করতে হলে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাছাই করা যেতে পারে৷ অথবা এলাকার বিশিষ্ট মানুষদের লাগানো যায় এই কাজে৷

 গ্রামাঞ্চলে বাসগৃহ তৈরীর জন্য সরকার যে অনুদান দিচ্ছে তা বাসগৃহ তৈরীর জন্য যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ অধিকাংশ মানুষের৷ ঐ টাকায় পাকা ছাদযুক্ত বাড়ি তৈরি করা যে সম্ভব নয়, একথা কী মন্ত্রী বা আমলারা বোঝেন না, না জানেন না? সব জানেন, সব বোঝেন!

বিকল্প হিসেবে উপভোক্তাদের টাকা না পাঠিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যদি সরাসরি পাকা ছাদযুক্ত বাড়ি তৈরি করে দেওয়া সম্ভব হতো বা কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে হতো তাহলে তো আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠত না কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার বিরুদ্ধে ! সেইসব পথের সন্ধান না করে কেন দুর্নীতি হবার সম্ভাবনাময় পথেই তারা চলতে চান - একথা মন্ত্রী - আমলারাই বলতে পারেন৷ যতদিন পর্যন্ত না সৎ - নীতিবাদী মানুষেরা পরিকল্পনা ও পরিকল্পনা রূপায়ণের নেতৃত্বে আসবেন ততদিন পর্যন্ত দুর্নীতির অভিযোগও উঠবে আর সবার জন্য পাকা ছাদযুক্ত বাড়িও অধরাই থেকে যাবে৷