স্বাগত ২০১৯

লেখক
আচার্য সত্যশিবানন্দ অবধূ্ত

২০১৯ এসে গেল৷ সামনে লোকসভা নির্বাচন৷ এই লোকসভা নির্বাচন নিয়ে  এখন  সারা দেশ ভেতরে ভেতরে উত্তেজনায় ফুটছে৷ বিশেষ করে রাজনৈতিক  ক্ষেত্রে৷ আর  বর্তমানে  রাজনীতি  যখন  সমাজের  আপাতত  নিয়ামক  হয়ে উঠেছে,  এই পরিপ্রেক্ষিতে  সবাই  তাকিয়ে আছে আগামী লোকসভা নির্বাচনের  দিকে৷

এর ঠিক আগে ৫টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়ে গেল৷ সেই  নির্বাচন  ছিল  বলা যায়, লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইন্যাল৷ সেই নির্বাচনী লড়াইয়ে বিজেপির গোহারান হার  বিজেপি ও তার পার্শ্বস্থিত বজরং দল,  আর.এস.এস প্রভৃতির দর্প চূর্ণ করে দিয়েছে৷ অন্যদিকে  কংগ্রেস সভাপতি রাহুল ও দেশের অন্যান্য বিরোধী গোষ্ঠী আশায়  বুক বেঁধেছে৷

বিরোধী দল একযোগে  প্রচার  করছে, জনগণের  কাছে  বিজেপি’র  ধোঁকা ধরা পড়ে  গেছে৷ ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেই  বিজেপি যে  সব প্রতিশ্রুতির ফানুস উড়িয়েছিল,  সুইস ব্যাঙ্ক সহ বিদেশী ব্যাঙ্কে জমানো  ভারতীয়দের  সমস্ত  কালের  টাকা ফিরিয়ে এনে  প্রতিটি দরিদ্র  ভারতীয়  জনসাধারণের  ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা  করে ভরে দেবে, বছরে ২ কোটি বেকারের কর্ম সংস্থান করে  অবিলম্বে দেশের  বেকার  সমস্যার  সমাধান করে দেবে, স্বচ্ছ  দুর্নীতিমুক্ত ভারত, ডিজিটাল ইন্ডিয়া ইত্যাদি,  এইসব নানান্ প্রতিশ্রুতির বেলুন এখন  ফুটো হয়ে  গেছে৷ এখন  জনসাধারণের  বুঝতে  বাকি  নেই মোদি সরকার  আসলে  জনগণের  সরকার নয়,  আম্বানীদের মতো পুঁজিপতিদের সরকার৷ মোদিজী ওঁদেরই স্বার্থরক্ষা করে চলেছেন  তাই বড় বড় পুঁজিপতিরা কোটি  কোটি টাকা ব্যাঙ্কের ঋণখেলাপি করে  নিশ্চিন্তে  দিন কাটাচ্ছে, অথচ  গরীব  কর্ষকেরা ঋণশোধ করতে  না পারলে  তাদের  শাস্তি হচ্ছে৷  চাষীরা  চাষের  জন্যে  সহজে  ঋণ পায় না৷ অথচ ওই  সব পুঁজিপতিরা  ঋণ খিলাপি  করার  পরও  বেমালুম  ঋণ পেয়ে যাচ্ছেন৷  দেশে  গরিব  চাষী ঋণের  দায়ে, ফসলের  ন্যায্য মূল্য না  দিতে  পেরে,  প্রাকৃতিক  দুর্র্যেগের  ফলে  ফসল  নষ্ট  হওয়ার  হতাশায়  আত্মহত্যার  পথ বেছে  নিচ্ছে৷ কিন্তু  পুঁজিপতিরা  ব্যাঙ্ক জালিয়াতি করে মন্ত্রীদের  নাকের  ডগা দিয়ে  বিদেশে দিব্যি পাড়ি দিচ্ছেন৷

পরিসংখ্যান  বলছে, দেশে বর্তমানে  বছরে গড়ে  প্রায়  ১২ হাজার কর্ষক হতাশ  হয়ে আত্মহত্যা করছে৷ দেশে  অনাহারে মৃত্যু, বেকার  সমস্যা সবই  বেড়ে  চলেছে৷ সাধারণ ভাবে  প্রায় সমস্ত  নিত্যপ্রয়োজনীয়  দ্রব্যের  মূল্যবৃদ্ধি  ঘটছে৷ সাধারণ  মানুষ নাজেহাল৷

বিগত বিধানসভা  নির্বাচনগুলিতে  পরাজয়ের  পর এখন  মোদি-সরকার  কর্ষকদের  মন জয়  করার  নানান্  মনোমোহিনী পদক্ষেপ  নিচ্ছেন৷  গরিব  মানুষদেরও কোনো  কোনো গভীর একটু আধটু  ক্ষতে  হাত বুলিয়ে  দিচ্ছেন  যেমন, গ্যাসের  দাম কিঞ্চিৎ হ্রাস করা  প্রভৃতি৷  কিন্তু  জনগণও বলছেন, এসব  তো আগামী নির্বাচন  পর্যন্ত৷ তারপর  জিতলে  তো  আবার  মোদি  সরকার  স্বমহিমায়  এসে  যাবেন৷ তাঁর  পার্শ্ব-চররা এখন  কিছুটা চুপ থাকলেও মোদি  জিতলে  তাদের  আর  পায় কে? দেশজুড়ে  সাম্প্রদায়িক ও  জাত-পাতগত  ঘৃণা বিদ্বেষের  বিষ  ছড়িয়ে  আবার  তাদের  তাণ্ডব  শুরু  করে দেবে৷ তাই  আপাততঃ  দেখা  যাচ্ছে  মোদি সরকারের  বিরুদ্ধে একটা  বিশাল  জনমত গড়ে উঠছে৷ অপরদিকে  বিরোধীদের  মধ্যে  যে সমস্যা নেই তা নয়৷ সম্প্রতি বিরোধীরা  অবিজেপি  ও অকংগ্রেসী জোট  গড়ে তোলা নিয়েও  নানান চিন্তাভাবনা  চালাচ্ছে৷ উত্তরপ্রদেশে  অখিলেশ -মায়াবতীরা কংগ্রেসকে  বাদ দিয়ে জোট  করার  পরিকল্পনা করছে৷ তেলেঙ্গানার চন্দ্রশেখর  রাও, অন্ধ্রের চন্দ্রশেখর নাইডু  প্রভৃতিরা মমতার সঙ্গে অবিজেপি ও অকংগ্রেসী ফেডার‍্যাল  ফ্রন্টের  চিন্তাভাবনা  শুরু করে দিয়েছেন৷

তাই ভারতীয়  রাজনীতি এখন ঘূর্ণাবর্তে ঘুরছে৷ তবে  এটা  ঠিক , বিরোধীদেরই  এবার জেতার  সম্ভাবনা৷ কিন্তু  ক্ষমতায়  যারাই  আসুন, ভারতের  যে মূলীভূত সমস্যা--- দারিদ্র্য ও বেকার সমস্যার সমাধান  এঁদের  কারুর  দ্বারা  সম্ভব  নয়৷  কারণ  পুঁজিবাদী কাঠামোয়  বা মার্ক্সীয় কাঠামোয়  আজকের সমস্যার সমাধান  নেই৷ একমাত্র প্রাউটই পারবে  নিপীড়িত মানবতার  মুক্তি৷ তাই  সমস্ত  শুভানুধ্যায়ী ব্যষ্টিদের  উচিত  দেশজুড়ে  দ্রুত  প্রাউট চেতনার  ব্যাপক  বিস্তার  ঘটানো৷