শিক্ষক মানেই ‘সমাজগুরু’৷ অন্ধকার থেকে আলোর দিশা দেখান যিনি, তিনিই গুরু পদবাচ্য৷ সেই অর্থে অশিক্ষা-কুশিক্ষাতে জর্জরিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজকে আলোর দিশা দেখানো, সমাজকে শিক্ষার আলো প্রদর্শন করানো ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ই প্রকৃত ‘‘আদর্শ শিক্ষক’’৷
২৬শে সেপ্ঢেম্বর মহান বাঙালী মণীষী, শিক্ষা জগতের পুরোধা, সমাজসংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরে’র ২০৪তম জন্মদিবস৷ স্বাধীনতা পরবর্তী বাঙালী বিদ্বেষী কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলির উদাসীনতায় ‘বিদ্যাসাগর’-র মতন মণীষীকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন থেকে ব্রাত্য থাকতে হয়েছে৷
তাঁর রচিত ‘বর্ণপরিচয়’এর দ্বারাই আপনার আমার মতন সমগ্র বাঙালী জাতির অক্ষরজ্ঞানের সূত্রপাত৷ উনি ছিলেন একজন প্রকৃত সুপণ্ডিত ও সমাজসংস্কারক৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে সমাজ যখন এক ঘনান্ধকার সংকটময় মূহুর্তের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছিল, অশিক্ষা-কুশিক্ষা-কুসংস্কারের বেড়াজাল সমাজকে ডগমা-তে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছিল, নারীশিক্ষাকে সমাজবিরোধীর সমান আখ্যা দিয়ে সমাজের নৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছিল, গোঁড়া হিন্দুত্ব আগ্রাসনে নারীরা যখন শিক্ষার আলো-জল-বাতাস থেকে বঞ্চিত হয়ে শোষিত হচ্ছিল, সেই সময়েই তাদের ব্যথা অনুধাবন করে বিদ্যাসাগর সমাজের গোঁড়াদের প্রবল বাঁধা পেড়িয়ে নারী শিক্ষার উদ্যোগে ১৮৪৯ সালে বেথুন সাহেবের সহায়তায় দেশের প্রথম বালিকা বিদ্যালয় যা আজ তিলোত্তমার বুকে ‘বেথুন স্কুল’ নামে পরিচিত, তা প্রতিষ্ঠা করেন৷ এছাড়াও তিনি গ্রামেগঞ্জে বাঙলার দিক-বিদিকে নারীশিক্ষার প্রসার-প্রচারে উদ্যোগী হয়ে শতাধিক (২৮৮টি) বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত করেন৷ শিক্ষার আলো প্রবেশ করিয়ে নারী সমাজকে অন্ধকারের গহ্বর থেকে বের করে আলোর দিশা দেখানোর সূচনা বিন্দু তাঁর হাতেই সম্পাদিত৷ স্বামীহারা অল্পবয়সী বিধবাদের চরম বেদনাময় জীবন থেকে উদ্ধার করতে তিনি একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘বিধবাবিবাহে’র প্রচলন ও বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ রদ করতে সচেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷ বাংলাভাষার সরলীকরণ সহ নানান নবজাগরণমূলক কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িত ছিলেন৷ মানবতার সেবায় নিজের সর্বস্ব অকৃপণ হস্তে দান করে গেছেন বীরসিংহের সিংহশিশু ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় তথা বিদ্যাসাগর, যিনি ‘দয়ারসাগর’ নামেও পরিচিত৷
বিদ্যাসাগরের অবদান
(ক) প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার ১৮৫৩ সালে বিদ্যাসাগর একটি প্রতিবেদনে ‘গণশিক্ষা’কে আবশ্যিক হিসেবে উল্লেখ করেন৷ জেলায় জেলায় বিদ্যালয় স্থাপনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন৷
(খ) বর্ণপরিচয় রচনা সহ বাংলা ভাষার ও বাংলা ব্যাকারণের সরলীকরণ ঘটিয়েছেন৷
(গ) নারীশিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ৷ ২৮৮টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেছেন৷
(ঘ) পাঠ্যপুস্তক রচনা বর্ণপরিচয় (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ),বোধদয়,কথামালা প্রভৃতি৷
(ঙ) এছাড়াও বিধবাবিবাহ আইন পাস, বাল্যবিবাহ-বহুবিবাহ রদ সহ একাধিক সমাজসংস্কারক মূলক কর্মকান্ড সম্পাদিত করেছেন তিনি৷ এককথায় বিদ্যাসাগর-ই প্রকৃত ‘আদর্শ শিক্ষক’৷
এই মহান মণীষীর প্রতি যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে ও তাঁর কর্মধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘শোষণমুক্ত সমাজ’ গঠনে ছাত্র সমাজকে সচেষ্ট করতে সকল বাঙালীর উচিত এক স্বরে আবাজ তোলা
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরে’র জন্মদিবস ২৬শে সেপ্ঢেম্বর’কে বাঙলার ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারী-বেসরকারী সব বিদ্যালয়গুলিতে আবশ্যিকভাবে পালন করতে হবে৷
আশা রাখছি, অত্যন্ত সংবেদনশীল মনোভাবের সঙ্গে, যুক্তিপূর্ণ দৃষ্টিতে আমার এই আবেদনটি প্রত্যেক বাঙালীর কাছে গ্রহণ যোগ্য হবে৷
11
আমরা বাঙালীর ত্রিপুরা রাজ্য সম্মেলন
নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ ২১ ও ২২ সেপ্ঢেম্বর ত্রিপুরার আগরতলায় শিবনগরস্থিত ‘আমরা বাঙালীর’ রাজ্য কার্যালয়ে ‘আমরা বাঙালী ত্রিপুরা রাজ্য শাখা’র দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ ২১শে সেপ্ঢেম্বর বেলা এগারোটা থেকে সম্মেলন শুরু হয়৷ প্রথমে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন সম্মেলনের প্রধান অতিথি ‘আমরা বাঙালী’ র কেন্দ্রীয় সচিব শ্রী জ্যোতি বিকাশ সিনহা মহোদয়৷এরপর ’শহীদ বেদীতে’ মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন উপস্থিত সকল সদস্য সদস্যাগণ৷ অতঃপর সকলেই সম্মেলন কক্ষে আসেন ও প্রাউট প্রবক্তা শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকারের চরণে পুষ্পার্ঘ্য ও প্রদীপ প্রজ্বলন করেন সম্মেলনের সভাপতি শ্রীযুক্ত রাখাল রাজ দত্ত মহোদয়৷ সম্মেলনের বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব শ্রী মোহন লাল অধিকারী ও প্রবীণ নেতা শ্রীজহরলাল সাহা মহোদয়৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা৷
ত্রিপুরা রাজ্য সচিব প্রথমে বিগত দুই বছরের কর্মসূচির প্রতিবেদন পাঠ করেন৷ ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত প্রতিনিধিগণ এই প্রতিবেদনের উপর তাঁদের বক্তব্য পেশ করেন৷ জেলা প্রতিনিধিগণ তাঁদের বক্তব্যে রাজ্যের বিভিন্ন সাধারণ সমস্যা,বাঙালীদের সমস্যাগুলি তুলে ধরেন৷
পরের দিন ২২শে সেপ্ঢেম্বর বেলা দশটা থেকে আগামী দুই বছরের জন্যে নূতন রাজ্য কমিটির ৯জন সদস্যের নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ ১৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন৷ এই দিনের কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্যায়ে বেলা ০২-৩০ নাগাদ শিবনগরের রাজ্য কার্যালয়ের সামনে থেকে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়৷ এই পদযাত্রা আগরতলা শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে আবার বিকেল চারটায় শিবনগরে এসে সমাপ্ত হয়৷ পদযাত্রা শুরুর প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্ণের উত্তরে রাজ্য সচিব শ্রী গৌরাঙ্গরুদ্র পাল ও কেন্দ্রীয় সচিব শ্রী জ্যোতিবিকাশ সিনহা জানান, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন রাজ্যে বাঙালীদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হচ্ছে৷ সরকারি সুবিধা ও সাহায্য করার ক্ষেত্রে বাঙালীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে৷ ভাষার ক্ষেত্রে অন্যান্য ধ্রুপদী ভাষার থেকে বাংলা ভাষা পিছিয়ে না থাকলেও ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয় নি৷ এর ফলে নোতুন শিক্ষা নীতিতে ত্রিপুরা রাজ্যের বাঙালী ছাত্র ছাত্রাদের অত্যন্ত অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে৷ আমরা বাঙালী সকলের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের পক্ষপাতী৷
বিকেল সাড়ে চারটায় সাংঘটনিক নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়৷ প্রাপ্ত বোটের সংখ্যা অনুযায়ী নয়জনকে নির্বাচিত করা হয়৷ এর সঙ্গে ‘আমরা বাঙালী’ সংঘটনের বাইলজ অনুসারে চারজন মনোনীত সদস্য যুক্ত হয়ে মোট তেরো জনের রাজ্যকমিটি ঘটিত হয়৷ এই তেরোজন সদস্য সদস্যা সর্বসম্মতিক্রমে শ্রী গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল মহোদয়কে রাজ্য সচিব হিসেবে নির্বাচিত করেন৷এরপর নবঘটিত রাজ্যকমিটির সদস্য সদস্যাগণ আগামী দিনগুলোতে সংঘটনকে সঠিক লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প গ্রহণ করেন৷ সবশেষে সকলকে ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা ও সংগ্রামী অভিনন্দন জানিয়ে দুইদিন ব্যাপী সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়৷
- Log in to post comments