সময়োচিত কিছু কথা

লেখক
বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়

২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি দল ‘‘সোনার বাঙলা’’ গড়বার লক্ষ্যে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার মধ্যে  অন্যতম --- রাজ্যে ক্ষমতায় এলে মহিলাদের গণপরিবহনে (অবশ্যই সরকারী) বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা করবে৷ খুবই আকর্ষণীয় ও লোভনীয় টোপ৷ মহিলা ভোটারদের মন জয় করার জন্য  এমন ধরণের প্রতিশ্রুতি যে ভোটে প্রভাব ফেলবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যে কী এমন প্রকল্প চালু আছে--- এ প্রশ্ণ সকলের মনেই দেখা দিয়েছে তাহলে বিজেপি দল কী পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখলের জন্যই এমন ধরনের টোপ দিল?

এরাজ্যে ৪৯ শতাংশ মহিলা ভোটার আছে বলে জানা গেছে৷ সমস্ত মহিলা যাত্রী (সরকারী-বেসরকারী কর্মচারী বা শিক্ষকতার কাজে নিযুক্তরাও) যদি নিয়মিতভাবে বিনামূল্যে গণপরিবহনে যাতায়াত করেন সেক্ষেত্রে পরিবহন দপ্তরের আয় কমতে বাধ্য৷ এমনিতে পেট্রোল, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহন দপ্তরের নাভিশ্বাস উঠেছে, তার সাথে মহিলাদের বিনামূল্যে যাতায়াত শুরু হলে বিরাট আর্থিক বোঝা রাজ্যের ঘাড়ে চাপবে৷ সামাল দিতে হলে ভর্তুকির পথে হাঁটতেই হবে৷ পশ্চিমবঙ্গের পরিবহন দপ্তরের প্রাক্তন মন্ত্রী, বর্তমানে দল বদলু বিজেপি নেতা পূর্বে ঘোষণা করেছিলেন রাজ্য পরিবহন সংস্থা লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে৷ সেই সময় বিজেপি দল এমন প্রতিশ্রুতি দিতে গেল কেন? যেটা আবার বিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যেও চালু নেই৷ সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে৷ নিন্দুকেরা এর মধ্যে চক্রান্তের গন্ধও পাচ্ছেন৷ তাদের যুক্তিও ফেলে দেওয়ার মত নয়৷ মহিলা ভোটারদের এভাবে প্রলোভন দেখিয়ে রাজ্যের ক্ষমতা একবার দখল করতে পারলে প্রথম ৬মাস বা একবছর বিনামূল্যে যাতায়াতের সুবিধা করে দেওয়ার পর পরিবহনে লোকসান হচ্ছে এই অজুহাতে সরকারী পরিবহনকে বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়া হবে৷ অর্থাৎ বেসরকারী করণ ঘটবে৷ মহিলাদের প্রতি সত্যিই দরদ থাকলে বিজেপি দল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকা রেলে বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দিতে পারত৷ তাহলে বাঙলার মহিলারা হয়তো কিছুটা বিশ্বাসও করত৷ বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার যখন রেল, বিমান ইত্যাদি বেসরকারিকরণের পথে হাঁটছে তখন রাজ্যে ক্ষমতায় এলে তারা মহিলাদের সরকারী পরিবহনে বিনামূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেবে---এটা অধিকাংশের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না৷ সুগভীর চক্রান্ত লুকিয়ে আছে এর পেছনে, নাকি দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকা সরকারী পরিবহন ব্যবস্থাটাকে লাটে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হল এখন থেকে৷ বাঙলার বিবেচক ভোটারগণ (মহিলা পুরুষ নির্বিশেষে) নিশ্চয়ই এ বিষয়টা মাথায় রাখবেন বলে আশা করা যেতেই পারে৷