সংসদীয় গণতন্ত্রে শাসক - পুঁজিপতির তোষক জনগণের শোষক

লেখক
প্রভাত খাঁ

ভারতযুক্ত রাষ্ট্র বিরাট জনবহুল দেশ৷ তাছাড়া এই মাটিতে বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে বাহিরের আক্রমণকারীরা এদেশকে লুঠ করে নিজের দেশে ফিরে যেত৷ আবার পরবর্ত্তী কারা তাঁরা ও নোতুন নোতুন আক্রমণকারী এসে এদেশের মানুষের সরলতা, ও নানা দুর্বলতার সুযোগে নানাভাবে আধিপত্য বিস্তার করে৷ শেষে এদেশের শাসকদের মধ্যে নানা ধরণের ঝগড়া ও বিরোধের সুযোগ নিয়ে স্থায়ীভাবে শাসনক্ষমতা কায়েম করে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায়৷ তাই বিশ্বকবি রবীন্দ্র লিখেছেন ‘‘মেলাবে মিলিবে পশ্চিম আজ খুলিয়াছে দ্বার৷ নিয়ে আসে সবে নানা উপহার৷’’ দেবে আর নেবে যাবে না ফিরে৷ এই ভারতের মহা মানবের সাগরতীরের৷ মূলতঃ এই ত্রিভূজাকৃতি বিশাল দেশের জনগণ অতি অন্তরমুখী৷ তাই তারা বাহ্যিক জগতে বিশেষ প্রতিবাদী নয়৷ তাই কবির কথায় ধীরে ধীরে এই দেশে--- শক, হুন দল, পাঠান, মোগল এক দেহে হলো লীন৷ শেষে সূদূর সমুদ্র পারের ব্যবসাদারগণ এদেশে আসেন ইউরোপ থেকে সমুদ্রের পথে৷ তারা ধীরে ধীরে সারা দেশটাকে কব্জা করে শাসন কায়েম করেন৷ বিশেষ করে ইংরেজ জনগোষ্ঠী দীর্ঘ বছর শাসক হিসাবে হয়ে ওঠে ভারতের ভাগ্য বিধাতা শাসক ও দণ্ডমুণ্ডের কর্ত্তা৷ সেই কারণে এ দেশের জনগণ সুদীর্ঘ বছর পরাধীন হয়েই থেকে যান৷

গত ১৭৫৭ খ্রীষ্টাব্দের মাঝামাঝি পলাশীর প্রান্তরে এই বাঙলার মাটিতে নামকেওয়াস্তে যুদ্ধে মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাবকে হারিয়ে তারা দখল নেয় বাঙলার মাটি, ক্রমে সারা ভারতবর্ষ সেই থেকে ১৯৪৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এক নাগাড়ে শাসন চালিয়ে ছল, বল কৌশলে তারা সারা ভারতের শাসক হয়৷ অবশেষে দেশ ভাগ করে হিন্দু ও মুসলমান নেতার হাতে শাসনভার তুলে দিয়ে৷ তারপর স্বাধীনতার নামে দেশে যা ঘটছে তা জনগণ দেখছে ও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে এর আদৎটা যে কি? সেদিন ভারত যুক্তরাষ্ট্রের শাসক হল কংগ্রেস নেতা মূলতঃ মাননীয় জওহরলাল নেহেরু তাঁর আমল ও তাঁর কন্যার আমল অর্থাৎ মাননীয় ইন্দিরাজীর আমলে তাঁর দেহত্যাগের পর তাঁর পুত্র মাননীয় রাজীব গান্ধী কিছু বছর রাজত্ব করেন৷ তিনি গত হবার পরও কংগ্রেস দল শাসন চালায়৷ পরে কেন্দ্রে বিজেপি দল শাসনে আসে৷ ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বে এন.ডিএ শাসন চালালেও বিজেপির একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা ছিল৷ সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে এন.ডিএ ক্ষমতায় ফিরলেও বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়৷ বিরোধীদের শক্তি অনেকটাই বেড়ে যায়৷ গত দশ বছর লোকসভায় কোন স্বীকৃত বিরোধী দল ছিল না৷ এবার কংগ্রেস প্রায় দ্বিগুন বেশী আসন পেয়ে বিরোধী দলের স্বীকৃতি পায়৷

শাসক বিরোধী ভারতবর্ষে দল মানেই ধনকুবেরদের হাতের পুতুল৷ তাই ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ধণিক শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করতে শাসক দল বাধ্য হয়৷ যেহেতু পুঁজিবাদীদের আর্থিক অনুদানে দল চলে নির্বাচন লড়ে তাই আর্থিক পরিকল্পনাটাই নেওয়া হয় পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষার দিকে তাকিয়ে৷ ফলে কোটি কোটি হত দরিদ্র মানুষ চরম আর্থিক দুর্দশায়৷ কোনকিছুরই সুরাহা নেই৷ দেশে অতি ধনী, ধনী উচচমধ্যবিত্ত সংখ্যা লঘিষ্ট মানুষের হাতে দেশের সিংহভাগ সম্পদ৷ নিম্ন মধ্যবিত্ত, অভাবী যারা লোক সংখ্যায় সিংহভাগ তাদের হাতে যৎ সামান্য সম্পদ৷

দেশের শাসন চলছে গণতন্ত্রের নামে দলতন্ত্রের কেন্দ্রের শাসন চলে দলীয় শাসকদের দ্বারা কখনো বহু দলীয় নামে কিন্তু বড় দলের মর্জির ওপর৷ ছোট দলগুলি ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট পেয়েই খুশী৷ এই ধরণের সরকারে পুঁজিপতিদের পোয়াবার৷ শাসক চলে পুঁজিপতি তোষণ করে পুঁজিপতি দেশের সম্পদ লোটে জনগণকে শোষণ করে৷

তাই অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সুফল সমাজের সর্বস্তরের সর্বশ্রেণীর মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে গেলে প্রাউটের অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার বিকল্প কোন পথ নেই৷ কারণ অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অর্থ পুঁজিবাদ নির্ভর কেন্দ্রীত অর্থনীতির খোল নলচে পালটে বিকেন্দ্রিত আর্থিক নীতির রূপায়ণ৷ যার অর্থ আর্থিক ব্যবস্থার দায়িত্ব থাকবে স্থানীয় মানুষের হাতে৷ আর্থিক ব্যবস্থা রূপায়ণে বহিরাগতের খবরদারীর কোন সুযোগ থাকবে না৷ বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হবে প্রতিটি মানুষের হাতে ক্রয় ক্ষমতা তুলে দেওয়া যাতে জীবন ধারণের নূ্যনতম প্রয়োজনগুলি যথা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা সুব্যবস্থা প্রতিটি মানুষ সহজেই করতে পারে৷ তাই আজ প্রতিটি বিবেকবান বিচারশীল মানুষের ঘরে বসে শুধু সমালোচনা না করে প্রাউটের আর্থিক নীতি রূপায়ণে এগিয়ে আসা উচিত৷