গাত্রূসম্কুচূঘঞূণিনি’গাত্রসংকোচিন্’৷ ভাবারূঢ়ার্থে গাত্রসংকোচিন্ মানে যে শরীরকে সংকুচিত করে, যোগারূঢ়ার্থে যে পরিবেশগত ও মানসিক কারণে শরীরকে ছোট করে দেয়, ঘাপ্পি বা ঘাপটি মেরে বসে পড়ে৷ এই ঘাপ্পি বা ঘাপটি মারা আবার তিন ধরনের হয়৷
১) শোয়া-ঘাপটি ঃ যেমন হাত-পা কুঁঁকড়ে হাঁটু দু’টো ৰুকের কাছাকাছি এনে চিৎ হয়ে ৰা পাশ ফিরে শুয়ে থাকা৷ এতে শীত একটু কম লাগে৷ শীতের দিনে বিড়াল, কুকুর ও অন্যান্য অনেক জীৰকে এই ভাবে শোয়া অবস্থায় দেখতে পাৰে৷
তোমরা কখনো কখনো ঠান্ডায় অনেকক্ষণ থাকার পর শীতের রাতে যখন নেপের তলায় চলে যাও যদিও সে সময়টায় আমি তোমাদের নেপ সরিয়ে দেখিনি তবু অনুমান করি খানিকটা সময় শরীরকে কিছুটা তাতিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত তোমরা ৰোধ হয় ঘাপটি মেরে শুয়ে থাক অর্থাৎ কুঁকড়ি হয়ে শুয়ে থাকো৷
২) বসা-ঘাপটি ঃ দ্বিতীয় ঘাপটি হল বসা-ঘাপটি বা তিন-মুণ্ডে ৰসা৷ দু’টো হাঁটু হল দু’মুণ্ড ও তোমার নাকের ডগা হল তিন মুণ্ড৷ দু’হাতে করে অনেক সময় পা দু’টোও জড়িয়ে ধরো৷ তোমরা অনেক ক্ষেত্রে দুঃখের সময়ে, শোকের সময়ে এইভাবে ৰসে থাকো৷ আবার অনেক সময় হাঁটাহাঁটি ভাল লাগছে না ৰলেও ওই ভাবে বসে থাকো৷ হুগলী জেলার কলাচাষীদের আমি সাধারণতঃ ওইভাবে উৰু হয়ে বসে কলার কাঁদির ছড়া গুণতে দেখেছি৷ তোমরা দেখোনি?
৩) দাঁড়িয়েও ঘাপটি মেরে থাকা যায়৷ এক হাতের কনুইয়ের ওপর বা কনুইয়ের ফাঁকে আরেক হাতের কনুই ঢুকিয়ে দিয়ে শীতের রাতের কষ্ট দূর করার চেষ্টা তোমরা করো না কি নিশ্চয় করো৷ এতে শীতের কষ্ট কিছুটা কমানো যায়৷
একটা মজার কথা ভেবে দেখ৷ পরচর্চা করবার সময় (কারো কারো মতে যা ডালমুট-চানাচুরের চেয়েও মুখরোচক) কেউ কিন্তু ঘাপটি মেরে ৰসে না, ভাল করে আসন পেতেই বসে৷ মেয়েরা যাঁতীতে সুপুরি কোচাবার সময় পা ছড়িয়ে দিয়ে বসেন....ঘাপটি মেরে বসেন না, কতকটা যেমন বসেন পা দিয়ে সলতে তৈরী করার সময়৷ যাই হোক্, এই ঘাপটি মারা হল এক ধরনের গাত্র সংকোচন৷
অনেকদিন আগে তোমাদের একবার শোল-ঘাপটির গপ্প ৰলেছিলুম না একজন ছিলেন জাঁদরেল হাকিম সাহেৰ তাঁদের ছিল পারিবারিক একটি হেয়ার-কাটিং সেলুন৷ আরেকজন ছিলেন জাঁদরেল মৎস্যজীবী তাঁর ছিল সাতখানা মাছ ধরার ডিঙ্গি৷ কেউ কারো চেয়ে কম নয়-ইজ্জতে, আভিজাত্যে, অর্থকৌলীন্যে৷
গোপেন্দ্রনাথ হাকিমের এজলাসে একটা খুনের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসেছেন সেই মৎস্যজীবী বৃন্দাবনচন্দ্র৷ গোপেন্দ্রনাথ হাকিম বৃন্দাবনচন্দ্রকে শুধোলেন-আচ্ছা, যখন লোকটাকে খুন করা হচ্ছিল লোকটা কোনো আবাজ করেনি?
বৃন্দাবনচন্দ্র ৰললে-হ্যাঁ, লোকটা তখন কই-কাতরান কাতরাচ্ছিল৷
হাকিম শুধোলেন--ওই বীভৎস কাণ্ড দেখবার সময় তুই কী করছিলি?
বৃন্দাবনচন্দ্র ৰললে-আমি তখন ভয়ে শোল-ঘাপটি মেরে ৰসেছিলুম৷
গোপেন্দ্রনাথ হাকিম বৃন্দাৰনচন্দ্রকে শুধোলেন-সময়টা তখন দিন না রাত্তির, আলো না অন্ধকার?
বৃন্দাবনচন্দ্র ৰললে-দিনও নয়, রাতও নয়, আলোও নয়, অন্ধকারো নয়, কেমন একটা আলো-আঁধারি৷ এই পুকুর পাড় ঘেঁসে মাছেরা যে সময় গাঁদি মারে তেমন সময়৷
গোপেন্দ্রনাথ হাকিম শুধোলেন-তুই তারপর কী করলি?
বৃন্দাবনচন্দ্র ৰললে-আমি জাল-কাটা বোয়ালের মত ঝপাঙ করে জলে লাফ দিয়ে পড়লুম, তারপর চ্যাঙ মাছের মত চোঁ চোঁ করে পুকুরের ওপারে পঁৌছে গেলুম...কাতলা মাছের মত কেৎরে গিয়ে একটা আঁৰ গাছের আড়ালে গিয়ে নুকোলুম৷
গোপেন্দ্রনাথ ৰললেন-তোর ভীমরতি হয়েছে, সবেতেই মাছের কথা, সবেতেই মাছ নিয়ে আদিখ্যেতা৷ যেন মাছ ছাড়া দুনিয়ায় আর কোনো কুলীন ৰামুণ নেই৷
কথাটা বৃন্দাবনচন্দ্রের গায়ে লাগল....লাগল না ৰলে ৰলতে হয় ৰিঁধল৷
গোপেন্দ্রনাথ বৃন্দাবনচন্দ্রকে শুধোলেন-আচ্ছা, ৰল তো এই যে খুনের ঘটনাটা ঘটল .... রক্তপাত হল এতে আন্দাজ কতখানি রক্ত বেরিয়েছিল ৰলতে পারিস?
বৃন্দাবনচন্দ্রের মুখেচোখে, ঠোঁটের কোণে অল্প হাসির ঝিলিক নেৰে এল৷ সে ৰললে- তা ঠিক কী করে ৰলি ৰলুন হুজুর, তৰে আপনি যাতে আন্দাজ পেতে পারেন সেই ভাবে ৰলছি...অ এই নাপতে বাটির এক বাটি হৰে৷
যাই হোক্, এই ঘাপ্পি মারা বা ঘাপটি মারা কাকে ৰলে জেনে গেলে৷
হ্যাঁ, তবে মটকা মারা কিন্তু আলাদা জিনিস আর এই মটকা মারার সঙ্গে গরদ-মটকা-তসরে কোনো সম্পর্ক নেই৷ ৰাঙলা ভাষায় ‘মটকা’ শব্দটি তিনটি অর্থে ব্যবহূত হয়৷ প্রথমতঃ যে পলু পোকার গুটি খেয়ে প্রজাপতি গুটি কেটে বেরিয়ে যায় সেই গুটির গরদ মোটা ও নিকৃষ্ট মানের হয়৷ সেই মোটা ও নিকৃষ্ট মানের গরদকে মটকা ৰলা হয়৷
পাকা ঘর বাদে খড়, টিন, টালি প্রভৃতি দিয়ে ঘর তৈরী করলে ঘরের যেটা সর্বোচ্চ অংশ তাকেও মটকা ৰলে-’’চেয়ে দেখ মটকার ওপর একটা মুরগী ৰসে রয়েছে’’৷
‘মটকা’র তৃতীয় অর্থ হল ভাণ বা অছিলা৷ ‘‘চেয়ে দেখ, মনে হচ্ছে ও ঘুমুচ্ছে, আসলে কিন্তু ঘুমুয়নি, মটকা মেরে পড়ে আছে৷ যে ঘুমায় তাকে ডেকে বা ধাক্কা দিয়ে তোলা যায় কিন্তু যে মটকা মেরে পড়ে থাকে তার ঘুম ভাঙ্গানো যায় না’’৷
হ্যাঁ, যদি কেউ কোনো জায়গায় ঢুকে নিজের পরিচয় গোপন রেখে বা নিজ উদ্দেশ্য চেপে রেখে চুপ করে একটা জায়গায় গিয়ে ৰসে থাকে তাকেও বলে ঘাপটি মারা-ভাল ৰাংলায় ‘গাত্রসংকোচী’, কথ্য ৰাঙলায় ‘ভিজে ৰেড়ালটি’৷